Monday, 23 October 2017

গীতা অভ্যাস যোগ ১ থেকে ১০ শ্লোক

[ শ্রীগীতার ষষ্ট অধ্যায়ের মূল বক্তব্য ধ্যানযোগ। এই অধ্যায়ে ধ্যানের অভ্যাস বা ধ্যানসাধনের কথা, ধ্যান-এর ফলের কথা নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। তাই এই অধ্যায়ের নাম ধ্যানযোগঃ বা অভ্যাসযোগঃ। এই অধ্যায়ে মোট ৪৭টি মন্ত্র আছে, মানবজাতিকে  ভোগী অবস্থা থেকে মুক্ত করে যোগী করে তোলার জন্যযোগী সবার শ্রেষ্ঠ। তপস্বী অপেক্ষা সে বড়। কর্মী অপেক্ষাও সে বড়, জ্ঞানী অপেক্ষাও। তাই যোগী হয়ে গীতা পাঠ করলে,  ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতাপাঠে যেরূপ পরিতুষ্ট হন, বেদপাঠ, দান,যজ্ঞ, তীর্থদর্শন বা ব্রতাদি দ্বারা সেরূপ হন না। যিনি ভক্তিভাবে গীতা পাঠ করেন, তিনি বেদপুরাণাদি সমস্ত শাস্ত্র পাঠের ফল প্রাপ্ত হন। আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা প্রতিদিন কমপক্ষে গীতার একটি শ্লোকও পাঠ করে অন্তরে ধারণ করে মন্থন করতে থাকুন—এতেই আপনার বেদযজ্ঞ করা হবে এবং আপনার গৃহে  ভয়ানক অভিশাপজনিত কোন দুঃখ উপস্থিত হবে না।  আজকে গীতার অভ্যাসযোগঃ থেকে আপনাদের জন্য ১ থেকে ১০ শ্লোক-এর বাংলা অনুবাদ  তুলে ধরা হলো।]

১) শ্রীভগবান বললেন, কর্ম্মফলে আকাঙ্ক্ষা না করে যিনি কর্ত্তব্য কর্ম্ম করেন, তিনিই সন্ন্যাসী, তিনিই যোগী। যিনি যজ্ঞাদি শ্রৌতকর্ম্ম অথবা শারীর কর্ম্ম ত্যাগ করেছেন তিনি যোগী নন।
২) হে পাণ্ডব, যাকে সন্ন্যাস বলে তাকেই যোগ বলে মনে করবে। কেননা, সংকল্প ত্যাগ না করলে কোনদিনই কেহ যোগী হতে পারে না।
৩) যে মুনি যোগের শীর্ষদেশে আরোহণ করতে চাইছেন, নিষ্কাম কর্ম্মই তাঁর পক্ষে সেই যোগসিদ্ধির উপায়। যিনি যোগারূঢ় অর্থাৎ পূর্ণ যোগী হয়েছেন তাঁর চিত্তের শমতাই ঐ স্থিতিতে নিশ্চল থাকবার কারণ। [ যখন সাধক ধ্যানযোগে আরোহণেচ্ছু তখন তিনি কর্ম্মযোগীই। কর্ম্মই তখন তাঁর অবলম্বনীয়। আর আরোহণ করলে পর অর্থাৎ যোগারূঢ় বা যোগসিদ্ধ হলে পরে চিত্তের শমতাই ঐ স্থিতিতে নিশ্চল থাকবার কারণ।]
৪) সর্ব্ব সংকল্প ত্যাগ করা সাধক যখন রূপ রস প্রভৃতি ইন্দ্রিয়ভোগ্য বিষয়ে এবং কর্ম্মফলে আসক্ত হন না, তখনই তাঁকে যোগারূঢ় বলা হয়।
৫) বিমুক্ত মন দ্বারা বিমূঢ় মনকে বিষয়কূপ থেকে উপরে টেনে তুলতে হবে, মনকে অবসন্ন বা নিম্ন দিকে যেতে দিলে হবে না। কারণ, আত্মাই আত্মার বন্ধু এবং আত্মাই আত্মার শত্রু।
৬) যে আত্মা দ্বারা বিমূঢ় আত্মা বশীভূত হয়েছে, সেই আত্মাই বিমূঢ় আত্মার বন্ধুআর যে আত্মা বিবেক- বুদ্ধি রূপ মুক্ত আত্মা দ্বারা বিজিত হয়নি, সেই আত্মাই আত্মার শ্ত্রু।
৭) যে ব্যক্তি আত্মাকে জয় করেছেন এবং যার মনে সর্বদা শান্তি বিরাজমান তাঁর আত্মা পরমাত্মা রূপে প্রকাশিত হয় এবং তিনি শীত গ্রীষ্ম সুখ দুঃখ মান অপমানে একই অবস্থায় থাকেন।
৮) জ্ঞান- বিজ্ঞান দ্বারা যার মন তৃপ্ত হয়েছে, যিনি সুখ- দুঃখে নির্বিকার, যিনি জিতেন্দ্রিয় এবং যার কাছে মাটি, পাথর ও স্বর্ণ একই বস্তু, সেই যোগীকে যোগারূঢ় বলা হয়।
৯) বন্ধু, মিত্র, শত্রু, উদাসীন, মধ্যস্থ, বিদ্বেষের পাত্র এবং প্রিয়জন, সাধু এবং পাপী—এই সকলের প্রতি যার দৃষ্টি সমান, তিনিই শ্রেষ্ঠ।
১০) যোগী একাকী নির্জন স্থানে থেকে সংযতচিত্ত, সংযতদেহ, আকাঙ্ক্ষাশূন্য ও যোগের প্রতিবন্ধক দ্রব্য সংগ্রহে বিরত থেকে চিত্ত সংযত রেখে সতত সমাধি অভ্যাস করবেন।
[ আমাদেরকে নিজের অভ্যাস যা অজ্ঞান দ্বারা আবদ্ধ, তা থেকে মুক্ত হয়ে ধ্যানযোগের দ্বারা ঊর্ধ্ব ভুমিতে উঠতে হবে। এই ঊর্ধ্ব ভূমিই হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরম ধাম। জয় শ্রীগভবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীশ্রীগীতার জয়।]

No comments:

Post a Comment