[ শ্রীগীতার সপ্তম অধ্যায়ের নাম জ্ঞান- বিজ্ঞানযোগঃ। আমরা এই অধ্যায়ের ১
থেকে ১৯ পর্যন্ত শ্লোক পাঠ করেছি এবং ঈশ্বরের পরা ও অপরা প্রকৃতির এবং তাঁর নিজের
কথা শুনেছি। তিনি আমাদেরকে গুণমুগ্ধ জগৎ, গুণময়ী মায়া ও গুণাতীতের বার্ত্তা সহজ –সরল
ভাবেই জানিয়েছেন। আজকে ২০ থেকে ৩০ শ্লোকে আমরা জানতে পারবো--- শ্রীভগবান বলেছেন—যারা
আমাকে আশ্রয় করে যত্নপরায়ণ হন, তারা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে থাকেন, সমস্ত আধ্যাত্মিক
তত্ত্ব অবগত হয়ে থাকেন, নিখিল কর্ম্মের রহস্য পরিজ্ঞাত হয়ে থাকেন। সুতরাং
শ্রীভগবানে যিনি ভক্তিসম্পন্ন, তাঁর আর পাওয়ার কিছু বাকী থাকে না। কাজেই কামনা
থাকে না। ইহা যিনি সম্যগভাবে জানেন, তিনিই জ্ঞানী। তিনি ‘সর্ব্ব’ তাঁকে পাইলেই
সর্ব্ব প্রাপ্তি—এই অনুভব- সম্পন্ন ব্যক্তিই জ্ঞানী। ]
২০) প্রাকৃত জীবমাত্রই নিজ নিজ প্রকৃতির বা
স্বভাবের বশীভূত। এই কারণে তারা কামাদির আবেশবশতঃ বিবেকভ্রষ্ট হয় এবং তারা সেই সেই
নিয়ম অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দেবতার উপাসনা করে থাকে।
২১) যে যে ভক্ত শ্রদ্ধাসহকারে যে যে দেবতা
বিগ্রহকে পূজা করতে ইচ্ছা করেন আমি তাঁদের সেই শ্রদ্ধাকে সেই সেই দেববিগ্রহের
প্রতি অচলা করে থাকি।
২২) সেই শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই ভক্ত সেই
দেবতার আরাধনা করে থাকেন এবং তাঁদের কাছ থেকে সেই সকল কাম্য বস্তু লাভ করে থাকেন।
বাস্তবিক পক্ষে কিন্তু আমিই তাঁর ঐ সকল বস্তু লাভের বিধাতা।
২৩) সেই অল্পবুদ্ধি ব্যক্তিগণ যে ফল পেয়ে
থাকে তা অনিত্য। কারণ ভিন্নদেবতার উপাসকগণ সেই সেই দেবলোক প্রাপ্ত হয়। কিন্তু আমার
ভক্তগণ আমাকেই পেয়ে থাকে।
২৪) অল্পবুদ্ধি লোকেরা আমার অব্যয় ও
সর্ব্বোৎকৃষ্ট স্বরূপ জানতে পারে না। ফলে তারা মনে করে যে সাধারণ জীবের ন্যায় আমি
পুর্ব্বে অপ্রকাশ ছিলাম। পরে প্রকাশ পেয়েছি।
২৫) আমি যোগমায়া দ্বারা আবৃত বলে সকলের নিকট
প্রকাশমান নই। মূঢ়গণ আমার স্বরূপ জ্ঞানে অসমর্থ হয়ে আমাকে জন্মহীন ও মৃত্যহীন বলে
জানতে পারে না।
২৬) হে অর্জ্জুন, আমি অতীত, বর্তমান ও
ভবিষ্যতের সকল প্রাণীকেই জানি। আমাকে কিন্তু কেহই জানে না।
২৭) হে পরন্তপ ভারত, সংসারে ইচ্ছা দ্বেষ
থেকে উৎপন্ন সুখ- দুঃখাদি বিষয়ক দ্বন্ধজনিত মোহের প্রভাবে সকল প্রাণীই সৃষ্টি কালে
মোহগ্রস্থ হয়ে ভ্রমে পতিত হয়।
২৮) কিন্তু যে সকল পুণ্যকর্ম্মা ব্যক্তির
পাপ বিনষ্ট হয়েছে, সেই দ্বন্ধমোহ- বিমুক্ত দৃঢ়ব্রত জনগণ আমাকে ভজনা করেন। অথবা
যাদের পুণ্য কর্ম্ম দ্বারা পাপ ক্ষয় হয়েছ, যারা দৃঢ়ভাবে শমদমাদির অভ্যাস করেছেন
সেই পুণ্যাত্মা ব্যক্তিগণ দ্বন্ধবিষয়ক ভ্রম থেকে মুক্ত হয়ে আমাকে ভজনা করেন।
২৯) যারা জরা মরণ থেকে মুক্তির জন্য আমাকে
আশ্রয় করে সাধনা করেন, তাঁরা ব্রহ্ম কি, সমস্ত অধ্যাত্ম বিষয় ও অখিলকর্ম্ম কি তা
জানতে পারেন।
৩০) অধিভূত, অধিদৈব এবং অধিযজ্ঞের সহিত আমার
স্বরূপ যারা জানেন তাঁরাই মৃত্যুকালে সমাহিতহৃদয়ে আমার প্রকৃত স্বরূপ অনুভব করতে
পারেন।
ইতি জ্ঞানবিজ্ঞানযোগঃ নামক সপ্তম অধ্যায়
সমাপ্ত। জয় শ্রীভগবানের শ্রীশ্রীগীতা মায়ের জয়। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের
জয়। জয় ভারতমাতা ও বিশ্বমাতার জয়।
No comments:
Post a Comment