[ গীতাতে ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ অভ্যাসযোগে মানব জাতিকে মনকে শান্ত রাখার জন্য ১০টি উপাদেশ দিয়েছেন। ১)
নির্জ্জন স্থানে ধ্যানে বসবে। ২) একাকী ধ্যান করাই বিধেয়। ৩) পবিত্র স্থানে
ধ্যানের আসন করবে। ৪) যে আসনে উপবেশন করবে সে আসন বেশী উঁচু বা বেশী নীচু হবে না।
কুশ, চর্ম্ম ও বস্ত্র পাতা প্রশস্ত। ৫) মস্তক ও গ্রীবা সরল ও নিশ্চল রাখবে। ৬)
ভ্রুযুগলের মধ্যস্থলে দৃষ্টি রাখবে। ৭) এদিক ওদিক তাকাবে না। অতি আহার করবে না,
অনাহারেও থাকবে না। ৯) অতি নিদ্রা যাবে না, আর অতি জাগরণও শুভপ্রদ নহে। ১০) কোন
কাজকর্ম্ম বন্ধ থাকবে না—সবই করবে, কিন্তু পরিমিতভাবে। এই দশটি নিয়ম মেনে চলে
ধ্যান চালিয়ে যাবে। মন যে চঞ্চল ইহারও মূলে অভ্যাসের ফল। দীর্ঘকাল অভ্যাসের ফলে এই
চাঞ্চল্য মনের স্বভাবে দাঁড়িয়েছে। আবার স্থিরত্বের জন্য পুনঃ পুনঃ চেষ্টা করলেই সে
স্থিত হয়ে যাবে। অস্থির অর্থাৎ পরিবর্ত্তনশীল বস্তুতে পুনঃ পুনঃ অভিনিবেশ বশতঃ মন
অস্থিরতা অভ্যাস করেছে। পুনরায় স্থির বা নিত্য বস্তুতে অভিনিবেশ বাড়ালেই নিশ্চয় মন
স্থির হয়ে যাবে। আর মন স্থির হলেই আত্মাকে পরমাত্মার সাথে যুক্ত দেখে মানুষ শান্ত-
সৌম্য- সুন্দর মুর্ত্তিতে অবস্থান করবে। আজকে সকলের পাঠের জন্য অভ্যাস যোগের ১১
থেকে ১৯ মন্ত্র প্রদত্ত হলো।]
১১—১২)
যোগাভ্যাসে রত পুরুষ বিশুদ্ধ স্থানে নিজের স্থির আসন স্থাপন করবেন। আসন যেন অতি
উঁচু অথবা অতি নীচু না হয়। কুশের উপর মৃগাদির চর্ম্ম এবং তার উপর বস্ত্র পেতে আসন
প্রস্তুত করতে হবে। সেই আসনে উপবেশন করে ইন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ করে চিত্ত সংযম
পুর্ব্বক তিনি একাগ্রমনে আত্মশুদ্ধির জন্য যোগ অভ্যাস করবেন।
১৩—১৪) মেরুদণ্ড,
গ্রীবা ও মস্তক সরল ও নিশ্চল ভাবে ধারণ পূর্ব্বক স্থির হয়ে এবং কোনদিকে না তাকিয়ে
স্বীয় নাসিকাগ্রে দৃষ্টি নিবন্ধ করবেন। এভাবে উপবেশনের পর প্রশান্ত চিত্ত, ভয় রহিত,
ব্রহ্মচর্যব্রতে রত, গুরুসেবাপরায়ণ, মদ্গত চিত্ত ও মৎপরায়ণ যোগী মন একাগ্র করে
ধ্যানাভ্যাস করবেন।
১৫) এভাবে
নিরন্তর মনঃসংযম করতে করতে মন একাগ্র হয়ে নিশ্চল হয়। এইরূপ স্থিরচিত্ত যোগী
নির্ব্বান অর্থাৎ আমাতে অবস্থান রূপ পরম শান্তি লাভ করেন।
১৬) হে অর্জ্জুন,
যিনি অধিক আহার করেন অথবা যিনি মোটেই আহার করেন না, তাঁর যোগ হয় না। যিনি অতিশয়
নিদ্রালু বা অনিদ্রা অভ্যাসকারী তাঁরও যোগসমাধি হতে পারে না।
১৭) যার আহার
বিহার পরিমিত, কর্ম্মপ্রচেষ্টা এবং নিদ্রা, জাগরণ নির্দ্দিষ্ট পরিমাণ, যোগাভ্যাসে
তাঁর দুঃখ দূর হয়।
১৮) যখন চিত্ত
বিশেষরূপে নিরুদ্ধ হয়ে আত্মাতেই অবস্থান করে তখন সেই যোগীর কোন বিষয়ে কামনা থাকে
না। তিনি তখন যোগসিদ্ধ বলে কথিত হন।
১৯) বায়ু
বর্জ্জিত স্থানে যেমন দীপশিখা কম্পিত হয় না, আত্মবিষয়ক যোগাভ্যাসকারীর চিত্তও
যোগাভ্যাসে সেইরূপ স্থির থাকে। যোগীর অবিচল চিত্তের উহাই দৃষ্টান্তস্থল। ।।
[ শ্রীশ্রীগীতা
শ্রদ্ধাসহকারে পুনঃ পুনঃ পাঠ করলে হৃদয়- বেদ খুলে যায়। যার হৃদয় বেদ খুলে যায়, তার
আর কোন গ্রন্থের প্রয়োজন হয় না। গ্রন্থের একমাত্র কাজ হলো অন্তরে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি
করা। আমরা শ্রীশ্রীগীতা ছাড়া যে সমস্ত গ্রন্থগুলি পাঠ করি তা তো কেবল অন্যের
অভিজ্ঞতা মাত্র। শ্রীশ্রীগীতা কারো অভিজ্ঞতার গ্রন্থ নয়, এ হলো সার্বজনীন
বিশ্বমানবের জন্য ঈশ্বরের সংবিধান গ্রন্থ। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।]
No comments:
Post a Comment