[ গীতা মে পরম বিদ্যা—গীতা হচ্ছে আমাদের পরম
বিদ্যা- পরম জ্ঞান- পরম সম্পদ এবং পরম শ্রদ্ধার বস্তু। আমাদের মন, প্রাণ,
কর্ম্মেন্দ্রিয়, জ্ঞানেন্দ্রিয় এগুলি কার প্রেরণায় কাজ করছে এবং কোন দেবতা এঁদের
অনুপ্রেরক ও শক্তিধারক? আমরা তার উত্তরে আর্য ঋষির কথা জানি—মনের মন, প্রাণের
প্রাণ, বাক্যের বাক, চক্ষুর চক্ষু, শ্রোত্রের শ্রোত্র—এক মহাতত্ত্ববস্তু আছে। এই
মহাতত্ত্ববস্তু দ্বারাই মন- বুদ্ধি- চিত্ত- অহংকার কর্ম্মে প্রেরিত ও জীবন্ত হয়ে
থাকে। ঋষি বলেছেন—ঐ তত্ত্ব জানলেই মানুষ মৃত্যুকে অতিক্রম করে অমৃতলোকে গমন করেন।
গীতাও মানবজাতিকে উহা দ্বারা মন বুদ্ধিকে সংযত করতে, স্তব্ধ বা নিশ্চল করতে উপদেশ
দিয়েছেন। আজকে শ্রীশ্রীগীতার তৃতীয় অধ্যায়ের কর্ম্মযোগের শেষ ৩৬ থেকে ৪৩ শ্লোক বা
মন্ত্র সকলের পাঠের জন্য প্রদত্ত হল।]
৩৬) অর্জ্জুন
বললেন—হে বৃষ্ণিবংশগৌরব কৃষ্ণ, লোকে কাহার দ্বারা প্রযুক্ত হয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও
যেন কিছুটা বলপূর্ব্বক নিযুক্ত হয়ে পাপাচরণে প্রবৃত্ত হয়?
৩৭) শ্রীভগবান
বললেন—ইহা কাম, ইহা ক্রোধ ও রজোগুণ থেকে ইহার উৎপত্তি। ইহা দুষ্পূরণীয় এবং অতিশয়
উগ্র। এই সংসারে ইহাকে শত্রু বলে জেনো।
৩৮) যেমন ধূমের
দ্বারা অগ্নি আবৃত হয়, ময়লা দ্বারা যেমন আবৃত হয় দর্পণ, জরায়ু দ্বারা যেমন আবৃত
থাকে গর্ভস্থ ভ্রুণ, সেইরূপ কামের দ্বারা জ্ঞান আবৃত থাকে।
৩৯) হে কৌন্তেয়,
এই কাম মানবের চিরশত্রু। ইহা অগ্নির মত দুষ্পূরণীয় – ইহাকে সন্তুষ্ট করা যায় না।
ইহা দ্বারা জ্ঞানিগণের জ্ঞান আবৃত্ত হয়।
৪০) ইন্দ্রিয়, মন
আর বুদ্ধি, এই তিনটিই কামের আশ্রয়। ইহাদের দ্বারা কাম, জ্ঞানকে ঢেকে মানবকে
মোহগ্রস্থ করে রাখে।
৪১) অতএব হে
অর্জ্জুন, তুমি সর্ব্বপ্রথম ইন্দ্রিয় দমন করে এই পাপস্বরূপ কামকে নষ্ট কর। কারণ
ইহা মানবের জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে নাশ করে দেয়।
৪২) দেহের চেয়ে
ইন্দ্রিয় শ্রেষ্ঠ, ইন্দ্রিয়ের চেয়ে মন শ্রেষ্ঠ এবং মনের চেয়ে বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ।
বুদ্ধির চাইতেও যিনি শ্রেষ্ঠ, তিনিই আত্মা।
৪৩) হে মহাবীর অর্জ্জুন, আত্মা যে বুদ্ধির চেয়ে শ্রেষ্ঠ, এই কথা জেনে
বুদ্ধির সাহায্যে মনকে স্থির করে এই কামরূপ দুধর্ষ শত্রুকে বিনাশ কর।
ইতি কর্ম্মযোগ নামক তৃতীয় অধ্যায়।
[ কর্ম্মীকে জ্ঞানী করবে যজ্ঞ- কর্ম্ম। জ্ঞানীকে কর্ম্মে আনবে লোক- সংগ্রহ।
যজ্ঞবুদ্ধিতে কর্ম্ম করতে করতে কর্ম্মী জ্ঞানী হয়ে যাবে। তাই যিনি যজ্ঞ ও লোক-
সংগ্রহ( লোকশিক্ষা) এই দুই ডানার উপর ভর করে এগিয়ে চলেন তিনি অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডকে
অতি সন্নিকটে দেখতে পান। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।]
No comments:
Post a Comment