Tuesday, 17 October 2017

গী-তা চতুর্থ অধ্যায় ১১ -থেকে ১৬ শ্লোক


[ গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কৃপাশক্তি নিয়ে নিয়ত ভরপুর থাকেন। দুধ যেমন দধি হবার অপেক্ষাতেই আছে, সেইরূপ ভগবানও ভক্তের ভজনানুকুল ভজন করার জন্য তৈরি হয়েই থাকেন। তাই ভক্ত ভগবানের ভজন করলেই কৃপাশক্তি বর্ষণ হতে শুরু করে। দুধে অম্ল দিলে দধি হয়। জলে দিলে কিন্তু হয় না। শ্রীভগবানকে ভজন করলেই ভাবানুরূপ অনুগ্রহ করেন। বিনশ্বর বিষয়সম্পদকে ভজন করলে ফল পাওয়া যায় না---- পদে পদে নৈরাশ্যের আঘাত এসে বিষয়াসক্ত মানব জাতিকে চূর্ণ –বিচূর্ণ করে ফেলে। আজকে শ্রীশ্রী গীতার জ্ঞানযোগের ১১ থেকে ১৬ শ্লোক সকলের পাঠের জন্য প্রদত্ত হলো।]
১১) হে পার্থ, যে আমাকে যে-ভাবে ভজনা করে আমি তাকে সেই ভাবেই তুষ্ট করি। মানবগণ নিজ সাধনার সাহায্যে আমার পথেরই অনুসরণ করে।
১২) ইহলোকে কর্ম্মফল পাবার আশায় সকাম মানবগণ দেবতাদের উদ্দ্যেশে যাগযজ্ঞ করে থাকে। কেননা মনুষ্যলোকে কর্ম্মজনিত ফল শীঘ্রই পাওয়া যায়।
১৩) সত্ত্বাদি গুণ ও শমদমাদি কর্ম্মের বিভাগ অনুসারে আমি ব্রাহ্মণাদি চারটি বর্ণের সৃষ্টি করেছি। মায়িক ব্যবহারে আমি চতুর্ব্বর্ণের স্রষ্টা হলেও পারমার্থিক দৃষ্টিতে আমি এক অকর্তা এবং আমার কোন বিকার নেই।
১৪) কর্ম্ম আমাকে লিপ্ত করে না, কর্ম্মফলে আমার কোন আকাঙ্ক্ষাও নেই, যিনি আমাকে এই ভাবে বোঝেন তিনিও কর্ম্মফলে লিপ্ত হন না।
১৫) এরূপ জেনে মুক্তিকামী পূর্ব্ববর্ত্তী মহাত্মাগণও নিষ্কাম কর্ম্ম করেছিলেন। তুমিও পূর্ব্বসুরিগণের পূর্ব্ব পুর্ব্ব কালে আচরিত কর্ম্মানুসারে কর্ম্ম কর।
১৬) কর্ম্মই কি আর কর্ম্মশূন্যতাই বা কি, মহাত্মগণও তা বুঝতে পারেন না। অতএব কর্ম্ম কি, তা তোমায় বলছি। তা জানলে তুমি অশুভ থেকে মুক্ত হবে।
[ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জুনকে গীতার উপদেশ দান করছেন অতি সহজ সরলভাবে ও সহজ সরল ভাষায়। সেই সাথে তিনি অর্জ্জনকে গীতার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য বলছেন—হে পার্থ গীতাই আমার হৃদয়, গীতাই আমার সারসর্ব্বস্ব, গীতাই আমার অত্যুগ্র এবং অব্যয় জ্ঞানস্বরূপ; গীতা আমার উত্তম স্থান, গীতা আমার পরম পদ, গীতা আমার পরম গুহ্য, গীতা আমার পরম গুরু, গীতার আশ্রয়েই আমি থাকি, গীতাই আমার পরম গৃহ, গীতাজ্ঞান আশ্রয় করেই আমি ত্রিলোক পালন করি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিজের জন্য যা শুভফলদায়ক তা মানুষের জন্য যে শুভফলদায়ক হবে এতে তো কোন সন্দেহ নেই। ভগবান নিজে যখন শ্রীগীতার আশ্রয়ে থাকেন তখন মানবজাতির আশ্রয় গীতা ছাড়া আর কি হতে পারে? জয় বেদ্ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীশ্রীগীতার জয়।]

No comments:

Post a Comment