[পবিত্র গীতাকে আশ্রয় করে যারা জীবন অতিবাহিত করেন, তারাই যোগী- ধ্যানী-
জ্ঞানী ও মানী লোক। তাঁদের মান- মর্যাদা সর্বত্র শ্রীভগবান রক্ষা করেন। তাই গীতা-
পাঠ বা বেদযজ্ঞ অথবা ধ্যানযোগ করতে করতে যোগী যোগভ্রষ্ট হলেও চিন্তা নেই, তাঁর
বিনাশ কোন লোকেই নাই। গীতাই শ্রীভগবান অর্জুনকে অভ্যাসযোগ( ধ্যানযোগ) নামক অধ্যায়ে
৪০ থেকে ৪৭ শ্লোকে তা ব্যক্ত করেছেন। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত প্রতিদিন কমপক্ষে
একটি গীতার শ্লোক পাঠ করেও বেদযজ্ঞ করা।]
৪০) শ্রীভগবান বললেন—হে পার্থ, যোগভ্রষ্ট
ব্যক্তির ইহলোকে কি পরলোকে কোথাও বিনাশ নাই। বৎস, কল্যাণকারী ব্যক্তি কুত্রাপি
দুর্গতি প্রাপ্ত হন না।
৪১) যোগভ্রষ্ট পুরুষ পুণ্যকর্মকারীদিগের
প্রাপ্য স্বর্গলোকাদি প্রাপ্ত হয়ে তথায় বহু বৎসর বাস করার পর সদাচার সম্পন্ন ধনীর
গৃহে জন্মগ্রহণ করেন।
৪২) অথবা যোগভ্রষ্ট পুরুষ জ্ঞানবান যোগীদের
কুলে জন্মগ্রহণ করেন। জগতে ঈদৃশ জন্ম অতি দুর্লভ।
৪৩) হে কুরুনন্দন, তিনি সেই জন্মে পুর্ব্ব
জন্মের সুকৃতির ফলে মোক্ষ বিষয়ক বুদ্ধি লাভ করেন এবং মুক্তি লাভের জন্য পুনর্ব্বার
অধিকতর চেষ্টা করেন।
৪৪)
সেই ব্যক্তি পুর্ব্বজন্মের যোগাভ্যাসজনিত সংস্কারবশতঃ যেন অবশ হয়েই
যোগমার্গে আকৃষ্ট হন। যিনি কেবল যোগের স্বরূপ জানতে ইচ্ছুক তিনিই বেদবিহিত কাম্য
কর্মের ফল স্বর্গাদি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ফল লাভ করেন।
৪৫) সেই যোগী ইহজন্মে পুর্ব্বজন্মকৃত যত্ন
অপেক্ষা অধিকতর যত্ন করেন এবং ক্রমে যোগাভ্যাস দ্বারা নিষ্পাপ হয়ে বহু জন্মের
চেষ্টায় সিদ্ধিলাভ করে পরম গতি লাভ করেন।
৪৬) তপস্বীদের চেয়ে যোগী শ্রেষ্ঠ। তিনি
জ্ঞানীগণ অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, কর্মিগণ অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। ইহাই আমার অভিমত। অতএব হে
অর্জুন, তুমি যোগী হও।
৪৭) যিনি শ্রদ্ধার সহিত মদগতচিত্তে আমার
ভজনা করেন, তিনি রুদ্র আদিত্য প্রভৃতি ধ্যানপর সকল যোগীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ, ইহা আমার
অভিমত।
ইতি অভ্যাসযোগ( ধ্যানযোগ) নামক ষষ্ট অধ্যায়।
[অনেকের ধারণা হিন্দু তথা সনাতন ধর্মে মূর্তি পূজার প্রচলন ছিল না। এই ধারণা
সম্পূর্ণ অমূলক। ঈশ্বরের বিশ্বরূপের স্বীকার সনাতন ধর্মে সৃষ্টির প্রারম্ভকাল থেকে
চলেই আসছে। ঈশ্বরের বিশ্বরূপের মধ্যে কত দেব-দেবীর অবস্থান তাঁর কেউ কল্পনা করতেও
পারবেন না। এসমস্ত দেব-দেবী সবই ঈশ্বরের বিভূতি এবং সকলের মধ্যেই তিনি পূর্ণ
মাত্রাই বিরাজ করেন। তিনি সাগর- হিমালয়- সুমেরু পর্বত – বটগাছ- তুলসী বৃক্ষেও
পূর্ণ মাত্রায় বিরাজ করেন। তাই হিন্দু বা সনাতন ধর্মে তেত্রিশকোটি দেবতার বিশ্বাস
ও তাঁদের পূজার অর্থ এক ঈশ্বরেরই পূজা করা। অবলম্বন বিহীন কেউ উঁচুতে উঠতে পারে
না। মূর্তি পূজা শ্রদ্ধাসহকারে করা হচ্ছে এক বিশাল অবলম্বন ঈশ্বরের সান্নিধ্যে
পৌঁছাবার জন্য। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীশ্রীগীতার জয়।]
No comments:
Post a Comment