[ গীতার সপ্তম
অধ্যায় পাঠ শুরু হলো। এই অধ্যায়ের পাঠ আরম্ভ করলেই পাঠকের কর্ণে নূতন সুরঝংকার
শ্রুত হবে। সপ্তমের দ্বিতীয় শ্লোকে শ্রীভগবান অর্জ্জুনকে বললেন--- “ অর্জ্জুন, এখন
তোমাকে এমন কথা বলবো, যা জানলে এই জগত সংসারে জ্ঞাতব্য আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।
জ্ঞান বলতে শাস্ত্রোক্ত জ্ঞান। আর বিজ্ঞান বলতে অনুভূতিমূলক জ্ঞান। সত্যকে দর্শন
করতে হবে দুটি ভূমিকা থেকে। একটি মানবীয়, অপরটি ঈশ্বরীয়। এই জ্ঞানবিজ্ঞানযোগঃ মানব
জাতির এই দুই ভূমিকা নিয়ে দিগদর্শন। আজকে সপ্তম অধ্যায়ের ১ থেকে ১৩ মন্ত্র আমরা উচ্চারিত করবো পবিত্র মন নিয়ে।]
১) শ্রীভগবান
বললেন—হে পার্থ, আমাতে মন আসক্ত রেখে, আমাকে আশ্রয় করে যোগযুক্ত হলে যে ভাবে আমাকে
নিঃসন্দেহে সম্যক প্রকারে জানবে, তা শোন।
২) আমি তোমাকে
বিজ্ঞান- সহ সমস্ত শাস্ত্রাদি লব্ধ ও অনুভবসিদ্ধ জ্ঞান নিঃশেষে বলছি। তা জানলে এ
বিষয়ে আর অন্য কিছু জানার বাকী থাকবে না।
৩) সহস্র সহস্র
মানুষের মধ্যে কদাচিৎ কেউ সিদ্ধির জন্য যত্ন করেন। যত্নশীল সিদ্ধগণের মধ্যে আবার
খুব অল্পসংখ্যক লোকই আমাকে প্রকৃতরূপে জানেন।
৪) আমার এই
প্রকৃতি ভূমি, জল, অনল, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহংকার—এই আট প্রকারে বিভক্ত।
৫) হে মহাবীর, এই
প্রকৃতির নাম অপরা প্রকৃতি। ইহা ছাড়াও আমার অন্য একটি প্রকৃতি আছে; ইহাকে পরা
প্রকৃতি বলে জানবে। ইহা এই জগতকে ধারণ করে আছে।
৬) এই দুইটি
প্রকৃতি থেকেই সমস্ত প্রাণীর সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করবে। কিন্তু আমিই সমগ্র জগতের
সৃষ্টি ও সংহারের মূল কারণ।
৭) হে ধনঞ্জয়,
আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ অন্য কিছুই নেই। একই সূত্রে গাঁথা মণিমালার ন্যায় এই সমস্ত জগত
আমাতে গাঁথা আছে।
৮) হে
কুন্তীনন্দন, জলে আমিই রস, চন্দ্র ও সূর্যে প্রভা, বেদ- সমূহে প্রণব, আকাশে শব্দ
এবং আমিই পুরুষের পৌরুষ।
৯) পৃথিবীতে আমি পবিত্র গন্ধ এবং অগ্নিতে তেজ। আমিই সর্ব্বভূতে জীবন এবং
তপস্বীদিগের তপস্যা।
১০) হে অর্জ্জুন, আমাকে সর্ব্বভূতের বীজ বলে জানবে। আমিই বুদ্ধিমানদের
বুদ্ধি এবং তেজস্বীদের তেজ।
১১) হে ভরতকুলশ্রেষ্ঠ, আমি বলবানদিগের কামনা ও আসক্তিবর্জিত বল, প্রাণিগণের
প্রাণ ধারণের জন্য ধর্ম্মের অবিরোধী কামনা।
১২) যা কিছু সাত্ত্বিক, রাজস বা তামস সেই সকল আমা হতেই উৎপন্ন জেনো। কিন্তু
আমি তাদের মধ্যে নেই, তারাই আমার মধ্যে আছে।
১৩) সমস্ত জগত এই ত্রিগুণের ভাব দ্বারা মোহিত হয়ে আছে, তাই আমি এই গুণময়
জগতের অতীত বলে অক্ষয় আনন্দস্বরূপ আমাকে কেহ জানতে পারে না।
[ যাদের অহংকার নেই—অহংকে যারা শ্রীহরি পাদপদ্মে সমর্পণ করে দিয়েছেন তাদের
আত্মসুখ নেই। আত্মসুখকে তারা কৃষ্ণসুখে পরিণত করে দিয়েছেন। অনন্যমনা হয়ে তারাই
পরাশান্তি লাভ করে থাকেন। যে আত্মসুখ খোঁজ করে সে আত্মাও পায় না, সুখও পায় না। যে
আত্মাকে ও সুখকে ভুলিয়া কেবল শ্রীহরিকে খোঁজে, তার আত্মজ্ঞানও হয়, আনন্দানুভূতিও
হয়। জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীশ্রীগীতা মায়ের জয়।]
No comments:
Post a Comment