Wednesday, 25 October 2017

গীতা অভ্যাস যোগ ২০ থেকে ২৮ শ্লোক

[ শ্রীশ্রী গীতার আজকে ষষ্ট অধ্যায়ের অভ্যাস বা ধ্যানযোগের ২০ থেকে ২৮ পর্যন্ত মন্ত্র পাঠের জন্য প্রদত্ত হল। গীতা পাঠে যে কোন মানুষের শাররিক, মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ তড়িৎ গতিতে ঘটতে থাকে। এখানে ৫টি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রেখে গীতা পাঠ করবেন, তাহলেই ফল পাবেন। ১) বায়ুহীন স্থানে কম্পনহীন প্রদীপের শিখাটির মত চিত্ত স্থির ও সংযত রাখবে। ২) মন দ্বারা ইন্দ্রিয়সমূহকে বিষয় –ব্যাপার থেকে নিবৃত্ত করবে। চক্ষু যে দেখে, সে মনের অধীন। মনোযোগ না দিলে চক্ষু দেখে না। মন দ্বারা ইন্দ্রিয়সংযমের এটাই তাৎপর্য্য। ৩) সর্ব্ববিধ কামনা ও সংকল্পশূন্য হবে। ৪) মন স্বভাবতঃ চঞ্চল। অস্থির হয়ে মন যে যে বিষয়ে ধাবিত হয় সেই সেই বিষয় হতে তাকে প্রতিনিবৃত্ত করতে হবে। এটাই প্রত্যাহার। ১৫) কোন কিছুই চিন্তা করবে না। চিন্তাটাই মনের ধর্ম্ম। যতক্ষণ চিন্তা আছে ততক্ষণ মন আছে। চিন্তাশূন্য হলে মন লয় হল। চিত্তকে চিন্তাহীন, একেবারে ফাঁকা পেলে সেথায় ইষ্টের প্রকাশ ঘটবে।
 এই ধ্যানরূপ কর্ম্ম বা ক্রিয়াযোগের ফলে উপস্থিত হবে একটি কর্ম্মহীন প্রশান্ত অবস্থা। গভীর সুখানুভূতি। ঐ সুখটি “ব্রহ্মসংস্পর্শজ”। এই অবস্থাটির মধ্যে কিছু অবগতি নেই, জ্ঞাতা, জ্ঞেয়, জ্ঞান একীভূত। আছে একটা নিবিড় আনন্দানুভূতি। এটিই প্রিয়তমের স্পর্শসুখ।]
২০) যে অবস্থায় যোগাভ্যাস দ্বারা নিরুদ্ধ চিত্ত শান্ত ভাব ধারণ করে এবং যে অবস্থায় শুদ্ধ চিত্তে আত্মা দ্বারা আত্মাকে দেখিয়া তুষ্টি লাভ করা যায়---
২১) যে অবস্থায় যোগী ইন্দ্রিয়ের অগোচর কিন্তু শুদ্ধ অনুভবসিদ্ধ পরম সুখ লাভ করেন এবং যে অবস্থায় স্থিতিলাভ করে আত্মস্বরূপ হতে বিচলিত হন না---
২২) যে অবস্থা লাভ করে সেই যোগী অন্য লাভকে তদপেক্ষা অধিক মনে করেন না এবং যে আত্মতত্ত্বে অবস্থিত হয়ে মহাদুঃখেও বিচলিত হন না, তাকেই যোগ বলে জানবে।
২৩) এ অবস্থায় চিত্তবৃত্তিনিরোধের ফলে দুঃখের সম্বন্ধ থাকে না। দুঃখের এই অভাবকেই যোগ বলে। এই যোগ দৃঢ় অথচ নৈরাশ্যহীন চিত্তে অধ্যবসায় সহকারে অভ্যাস করতে হয়।
২৪—২৫) সংকল্পজাত কামনাগুলিকে বিশেসভাবে ত্যাগ করে, চক্ষু কর্ণ প্রভৃতি ইন্দ্রিয়গুলিকে বিষয়- ব্যাপার হতে নিবৃত্ত করে, ধৈর্যসহকারে বুদ্ধির মাধ্যমে মনকে আত্মাতে স্থাপন করবে। তখন আর অন্য কিছু ভাবনা করবে না।
২৬) চঞ্চল ও অস্থির মন যে যে বিষয়ে ধাবিত হয়, সেই সেই বিষয় হতে নিবৃত্ত করে ইহাকে আত্মাতে স্থির করাই যোগীর কর্তব্য।
২৭) প্রশান্ত চিত্ত, মোহাদি ক্লেশরূপ রজোবৃত্তি- শূন্য, অধর্ম্ম- বর্জ্জিত এবং সর্ব্বত্র ব্রহ্মদর্শনে অভ্যস্ত যোগীর নিকট পরম সুখ আপনা আপনিই আসে।
২৮) এইভাবে মনকে সর্ব্বদা যোগযুক্ত করে নিষ্পাপ যোগী অনায়াসে সর্ব্বত্র ব্রহ্মদর্শন করে পরম সুখ লাভ করেন।
[ যারা জীবনে কোনদিন গীতা পাঠ করেন নি, তাঁদের কাছে অনুরোধ, আপনারা সব কাজ ছেড়ে দিয়ে আগে এই পবিত্র গ্রন্থ পাঠ করুন। এই গ্রন্থ আপনার জীবনকে প্রশান্ত সাগরের ন্যায় বিশাল করে তুলবে। গ্রন্থ পাঠ করার নিয়ম নিজেকে বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী ভেবে, এই ভাবনা নিয়ে যে কোন গ্রন্থ পাঠ করলে ভাল ভাল কথাগুলি অন্তরে গেঁথে যায় এবং সংকীর্ণ মন বিশালত্ব লাভ করে চিত্তকে শান্ত করে আত্মাতে স্থিত করে। জয় বেদভগবানের শ্রীশ্রীগীতা মায়ের জয়।]

No comments:

Post a Comment