বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান(২১৩) তারিখঃ-
২৭/ ০২/ ২০১৮
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করলেই শরীরে ব্রহ্মশক্তি স্থির হতে থাকে, যখন
এই ব্রহ্মশক্তি শরীরে স্থির হয়ে যায় তখনি মানুষ পূর্ণ মানুষে পরিণত হয়।]
“ যদিচ্ছন্তো ব্রহ্মচর্যং চরন্তি” – এই
কথাটি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ শ্রীগীতায় অর্জুনকে বলেছেন। ব্রহ্মচর্যব্রত পালন দ্বারা যে
ব্রহ্মপ্রাপ্তি হয় এই কথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তো নিজ মুখেই বলেছেন। ব্রহ্মচর্য পালন
শিক্ষা একটি অখণ্ড শিক্ষা। এই শিক্ষার দ্বারা মানুষের শরীর ব্যাধিহীন হয়, মন
প্রশান্ত হয়, আত্মা পরমাত্মার সন্ধানে, আস্বাদনে ডুবে আনন্দময় হয়। একাধারে দৈহিক,
মানসিক, আত্মিক শিক্ষা ইহা আমাদের আর্য ঋষিদের মহাদান। আমরা বেদযজ্ঞ করতে ভুলে যাওয়ায়,
আজ সকলেই এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।
দেশ
স্বাধীন হয়েছে কিন্তু দেশবাসীর ও দেশের দুর্দিন ঘুচে নি। পাশ্চাত্ত্য রাজত্ব গেছে
কিন্তু মানস রাজ্য হতে তাঁদের আধিপত্য যায় নি। “ পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার”—বলে
পশ্চিমী গুরুপাটের দুয়ারে ধর্ণা দিতে এখনও ছুটছি সবাই, ঈশ্বর সর্ব্বভুতে –
সর্ব্বদিকে আছে জেনেও পশ্চিমদিক-কেই আমরা বেছে নিচ্ছি, পশ্চিমী দুনিয়ার ধন- দৌলত
লাভ করে সুখ ভোগের আশায়, প্রাচ্যের মহাগৌরব অবদানের দিকে দৃষ্টি পড়ে নি এখনও,
হাজার হাজার বছর পরাধীন থাকার কারণে।
আধুনিকেরা
নিজ বুদ্ধির গর্বে পশ্চিমী আদর্শে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সহস্র সহস্র হাসপাতাল,
চিকিৎসক ও পুঞ্জীভূত নব নব ঔষধে বস্তু বোঝায় করছেন—মানুষের শরীর সুস্থ রাখবার
জন্য। কিন্তু ভারতীয় আদর্শে উহার অংশমাত্র ব্যয় করেও যদি কিশোর- কিশোরীদের জীবনে
ব্রহ্মচর্যশিক্ষার প্রবর্তন করা যায় তাহলে যে মানুষ কত সহজে ওজস্বী হয়ে সমাজকে
সুখময় করে তুলতে পারে তা আমাদের জাতীয় ধুরন্ধর নেতাগণ নিজেদের ভাবনাতেও স্থান দেন
না।
শরীরে ব্রহ্মশক্তি সকলের মধ্যেই বিরাজ
করছেন, এই শক্তিকে স্থিরভাবে ধরে রাখার শিক্ষা পেলেই, মানুষ পূর্ণ মানুষে পরিণত
হয়। কৈশোর –যৌবন- বার্ধ্যক্য বয়সে, গার্হস্থ্যজীবনে, -সকল সময়ই সংযমের শুভফল মানুষ
লাভ করতে পারে। সমগ্র আর্য শাস্ত্র ভরে ব্রহ্মচর্যের মহিমা কীর্তিত হয়েছে এবং ইহার
প্রণালী, উদ্দেশ্য ও ফল সুদূরপ্রসারী। এই তত্ত্ব জেনেই প্রাচীনেরা নিজের জীবনকে
দেবত্বগুণে ভরপুর করে রেখে কেবল অমৃত পান করতেন। তাঁরাই বলেছেন—ব্রহ্মশক্তি হীনতায়
মানুষ পশুপর্যায়ে চলে যায়। ইহার পূর্ণতায় মানুষ দেবত্বে উন্নীত হয়। তাই প্রত্যেক
মানুষের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত বেদযজ্ঞের মাধ্যমে একটি তপস্যার অভিমুখে এগিয়ে
যাওয়া। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment