বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান(২০৯)
তারিখঃ—২৩/০২/ ২০১৮ আজকের আলোচ্য [কারণ এক, কর্ম ও গুণ ভিন্ন-ভিন্ন রূপে ফুটে উঠে বিশ্বে সত্য,ঐক্য,শান্তি ও সাম্যকে ধরে রাখার জন্যে।]
আজকে আমি বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযানের শিক্ষা সেমিনারে কর্ম ও কারণ
নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা কর্ম করি- এই কর্ম করতে আমরা বাধ্য। এই কাজ করার পিছনে
নিশ্চয় কারণ আছে। আমাদের চোখে বিভিন্ন কাজের বিভিন্ন কারণ লক্ষিত হলেও মূলত সমস্ত
কাজের কারণ মাত্র একটা লক্ষ্যে গিয়ে মিলিত হয়।
মানব
জাতিকে গুণ ও কর্মের ভিত্তিতে চার শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,
বৈশ্য ও শুদ্র। এই ভাগের পিছনেও কারণ একটা। সেই কারণ হচ্ছে মানব জাতিকে
স্বয়ংসম্পূর্ণ করে এক লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া। ব্রাহ্মণ হচ্ছে জ্ঞান, ক্ষত্রিয় হচ্ছে
শক্তি, বৈশ্য হচ্ছে খাদ্য ও শূদ্র হচ্ছে ত্যাগ ও সেবা। তাহলে দেখা যাচ্ছে ত্যাগ ও
সেবা অর্থাৎ দৈহিক পরিশ্রম ব্যতিরেকে জীব খাদ্য পেতে পারে না, খাদ্য ব্যতিরেকে জীব
শক্তি পেতে পারে না আর শক্তি না থাকলে কারও জ্ঞান লাভ হতে পারে না। আর জ্ঞান ছাড়া
মানুষের মুক্তি নেই। অতএব এখানে কারণ একটি—সেটা হচ্ছে মুক্তি বা পরমানন্দের সাথে
মিলন।
একটি লৌহপিন্ড থেকে বিভিন্ন সামগ্রী নির্মাণ
হতে পারে কিন্তু লৌহ লৌহ-ই থাকে। এক লৌহ
পিণ্ড থেকে সমগ্র লৌহময় দ্রব্যের জ্ঞান হয়। তেমনি এক আত্মার দর্শন হলে আত্মজ্ঞান
হয়ে গেল। এই আত্মজ্ঞান লাভ বা দর্শন বা তাঁর সাথে মিলনের কারণেই জগতব্যাপী সবকিছুই
কর্মময় দেখা যায়।
কারণরূপে সত্য সর্বদায় অভিন্নরূপে বিদ্যমান।
তার মধ্যে ভেদ দর্শন নিশ্চতই মিথ্যা দৃষ্টি। কারণ হল মাত্র একটিই; কারণ থেকে কর্ম
ভিন্ন নয়। আবার এরা পরস্পর উভয়াত্মক নয় অর্থাৎ কারণ থেকে কর্ম হয় কিন্তু কর্ম থেকে
কারণ হয়না। অতএব জগতব্যাপী যে কর্মকাণ্ড চলছে তার পিছনে নিশ্চয় একটি মহৎ কারণ আছে।
ধর্ম- কর্ম বা প্রকৃতি ঠিকমতন নিরূপণ করতে না পারার জন্য ভেদ- মিথ্যার উদয় হয়।
আসলে কারণ হল এক নিত্য এবং অদ্বয় সনাতন চৈতন্য সত্তা। এই সনাতন চৈতন্যসত্তাকে ঘিরে
জগতব্যাপী যে কর্মকাণ্ড চলছে, সেই কর্মকাণ্ডের গুণ বিভিন্নরূপে প্রকাশিত হচ্ছে- তা
আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং তাদেরকে কারণ থেকে ভিন্ন মনে করছি। এই ভিন্ন মনে করা বা
দেখাটাই অজ্ঞান।
মানব
দেহ অদ্ভুত বৈজ্ঞানিক পদ্ধিতে সৃষ্টি হয়েছে। এই দেহপুরের হৃদয়পদ্মে যে ক্ষুদ্র
পরিসরটি বিদ্যমান, তারই মধ্যে মহাকাশ অবস্থান করছে। সেখানেই হল কারণরূপী অদ্বৈত্য
সনাতন চৈতন্যসত্তার অধিষ্ঠান। জীব মাত্র সেই চৈতন্য সত্তার অন্বেষণ করে ও তাঁকে
ঘিরেই জীবের সমস্ত কর্ম। এই চৈতন্য সত্তা আনন্দময়-জ্ঞানময়—পরাক্রমী- প্রেমময়—সৎ-সত্য-সুন্দর ও জ্যোতির্ময়। তাই জীব উক্ত গুণগুলির প্রকাশ ও
বিকাশের জন্য কর্ম করে চলে। এই চৈতন্য সত্তার জন্ম ও মৃত্যু নাই, সে অজর অমর। তাই
জীব চিরকাল বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে এবং নিজেকে অজর অমর রূপে দেখতে চাই। পৃথিবীতে
যতই দুঃখ-কষ্ট থাকুক না কেন জীব মরতে চাই না একটা কারণে, যে কারণ হচ্ছে সে অমর।
কারণ ছাড়া তার অস্তিত্ব নেই—কারণ ছাড়া তার কোন কর্ম নেই—কর্ম ছাড়া তার প্রাণ বা
জীবন নেই—জীবন ছাড়া তার কোন ধর্ম নেই—ধর্ম ছাড়া তার কোন অস্তিত্ব নেই। তাই ধর্মই
মানুষকে কারণের সঙ্গে এক করে আবার ধর্মই মানুষকে বা জীবকে কারণ থেকে ভিন্ন করে।
তাই
কর্ম- কারণ জানার জন্য সৃষ্টি কর্তা সংসারের প্রত্যেক জীবকে দুটি চক্ষু দিয়েছেন।
সেই চক্ষু দুটি হচ্ছে একটি অবিদ্যা অপরটি বিদ্যাময়। অবিদ্যা রূপ চক্ষু দিয়ে আমরা
আমাদের শরীর –সংসার- স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তি দেখি ও এই লোক জগত এর বাইরে কিছু
দেখতে পাই না। আর বিদ্যাময় চক্ষু হচ্ছে সেই চৈতন্য সত্তা বা আত্মা। এই জ্যোতির্ময়
সত্তাকে বিদ্যাময় চক্ষু দিয়েই দেখতে হয়। অন্য কোন উপায়ে এই সত্তাকে দেখা যায় না।
তাই পরিশেষে বলি---
তোমার অন্ত নাই গো অন্ত নাই,
বারে বারে নূতন লীলা তাই।
আবার তুমি জানি নে কোন বেশে
পথের মাঝে দাঁড়াবে, নাথ, হেসে—
আমার এ হাত ধরবে কাছে এসে,
লাগবে প্রাণে নূতন ভাবের ঘোর।
তোমায় খোঁজা শেষ হবে না মোর।
আজ আমি সকলকে নমস্কার, প্রণাম, সালাম –ভালবাসা
জানিয়ে শেষ করছি। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment