[ শ্রীশ্রীগীতার সাংখ্যযোগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
অর্জুনের বুদ্ধির দুয়ার খুলে দেওয়ার জন্য তৎপর হয়েছেন। যোগ বা যজ্ঞ ছাড়া মানুষের
বুদ্ধির দুয়ার খুলে না। আর দুয়ার আবদ্ধ থাকলে সেই ঘরে ঈশ্বরের করুণার স্নিগ্ধ
বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। ঈশ্বরের করুণা এলেই মিথ্যা বুদ্ধি যা মাথায় ভির জমিয়ে
থাকে তা দূর হয়ে যায়। ব্যবসায়াত্মিকা অর্থাৎ নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি, তা চিরকাল একই।
অব্যবসায়ীর বুদ্ধি মিথ্যা, তাই অনন্তমুখী। সত্য চিরকালই একই। মিথ্যার অগণিত রূপ।
অঙ্কটি শুদ্ধ হলে শত ছাত্রের খাতায় একই রূপ উত্তর হবে। অংক ভুল হলে শত ছাত্রের শত
প্রকার ভুল। ভুলের মধ্যে মিল দেখলে নানা সন্দেহ আসে। যেন অমিলই ভুলের স্বরূপ। ঠিক
পথ বহু নহে, একই। শ্রীশ্রীগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জুনকে সেই সত্য পথের কথায়
বলেছেন—সত্যের সন্ধান দিয়েছেন, যাতে তাঁর শিষ্য, সখা, ভক্ত কোনরূপ বিভ্রান্তির
মধ্যে না পড়েন। আজকে সকলকে বুদ্ধিযোগনিষ্ঠ ব্যক্তি রূপে গড়ে তোলার জন্য গীতার
সাংখ্যযোগের ৪৮ থেকে ৫৩ শ্লোক প্রদত্ত হলো।
৪৮) হে ধনঞ্জয়, যোগস্থ হয়ে, ফলাসক্তি
বর্জ্জন করে, সিদ্ধি ও অসিদ্ধিকে সমান ভেবে কর্ম্ম কর। এই সমত্ববুদ্ধিই যোগ বলে
কথিত।
৪৯) হে ধনঞ্জয়, কাম্যকর্ম্ম বুদ্ধিযোগ অপেক্ষা
নিতান্তই নিকৃষ্ট। অতএব তুমি সমত্ব বুদ্ধির আশ্রয় লও। যারা ফলের উদ্দেশ্যে কর্ম্ম
করে, তারা অতিশয় দীন।
৫০) বুদ্ধিযোগনিষ্ঠ ব্যক্তি ইহলোকেই সুকৃত ও
দুষ্কৃত ত্যাগ করেন। অতএব তুমি যোগের অনুষ্ঠান কর। কর্ম্মে কুশলতা লাভই যোগ।
৫১) বুদ্ধিযোগে যুক্ত জ্ঞানীগণ কর্ম্মফলের
কামনা পরিত্যাগ পুর্ব্বক জন্মবন্ধন থেকে মুক্ত হন এবং সর্ব্বদুঃখরহিত পরমানন্দময়
বিষ্ণুপদ লাভ করেন।
৫২) যখন তোমার বুদ্ধি মোহময় গহন দুর্গ
অতিক্রম করবে তখন তুমি শ্রুত ও শ্রোতব্য বিষয়ে বৈরাগ্য প্রাপ্ত হবে।
৫৩) লৌকিক ও বৈদিক ফল প্রাপ্তির নানাবিধ কথা
শ্রবণেও যখন তোমার বুদ্ধি বিভিন্ন দিকে আকৃষ্ট না হয়ে সমাধিতে স্থির হয়ে থাকবে তখন
তুমি যোগ প্রাপ্ত হবে।
[ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জুনকে উপদেশ দিচ্ছেন
বুদ্ধিযোগ হতে কর্ম্ম অনেক হীন। তাই অর্জ্জুন চিন্তা করছেন, তাহলে যুদ্ধরূপ
হীনকর্ম আমিই বা করবো কেন? তার উত্তরে কিভাবে কর্ম্ম করলে মানুষ কর্ম্মজ ফল ত্যাগ
করে জন্মরূপ বন্ধন হতে মুক্ত হন – ভগবান সুন্দরভাবে এখানে অর্জ্জুনকে বুঝিয়ে
বলেছেন। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।]
No comments:
Post a Comment