Sunday, 30 July 2017

বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান--১ তাং ৩০/ ০৭/ ২০১৭

বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযানঃ—৩০/ ০৭/ ২০১৭ স্থানঃ—মথুরাপুর* মানিকচক* মালদা* পশ্চিমবঙ্গ* ভারতবর্ষ*
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হয়ে ঋষিশাস্ত্রের উপর বিশ্বাস রেখে বেদযজ্ঞ অভিযান চালিয়ে যাও, সত্যকে দর্শন করে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।]
ঋষি শাস্ত্রের তিনটি প্রধান কথা—আচার, আধ্যাত্মিকতা ও অনুভূতি। আচার অর্থে জীবন ক্ষেত্রকে ক্ষুদ্র থেকে বিশালত্বের অভিমুখে নিয়ে যাবার জন্য সাত্ত্বিক আচরণ, আহার, বিহার করে, সদায় সংকীর্ণতা থেকে মন, বুদ্ধি ও অহংকারকে  মুক্ত রাখা। আধ্যাত্মিকতা অর্থ আচরণের মূলে ভিত্তিস্বরূপ যে ব্রহ্মতত্ত্ব, আত্মতত্ত্ব ও প্রকৃতির তত্ত্ব আছে তা বিশালত্বের সাথে যুক্ত, তা সম্যকরূপে বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী বা ঋষি হয়ে জানা। অনুভূতি অর্থ, শাস্ত্রীয় সিন্ধান্তগুলি শুধু কথায় জানা নয়, জীবন দিয়ে অনুভব করা। আন্তর আস্বাদনই প্রকৃত জানা। সেটাই অনুভূতি। এই তিনটি কথাকে মানব জীবনে প্রতিফলিত করতে হলে আর্য্যঋষির অপর একটি বিশেষ সিন্ধান্ত জন্মান্তরবাদকে মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। জন্মান্তরবাদকে মেনে না নিলে কেউ নিজের জীবন ও ভাগ্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে সক্ষম হবে না। স্বাভাবিকভাবে কাম- ক্রোধ- লোভ- মোহ- মদ- মাৎসর্য এসে জীবনকে অপবিত্র করে তুলবে এবং ঈশ্বর তাঁর জীবনের জন্য যেটুকু বরাদ্দ করেছেন তাতে সে সন্তুষ্ট হতে পারবে না। জীবের আত্মা কর্ম্মানুসারে পুনঃ পুনঃ দেহ ধারণ করে, এই সনাতন সত্য অনেক ধর্ম্মের লোক স্বীকৃতি দেন না। তাঁদের মতে মৃত্যুর পর সকলকেই অপেক্ষা করতে হবে শেষ বিচারের জন্য। সেই বিচারে সৎ লোক স্বর্গলাভ করবে, অসৎলোক চিরতরে নরকে পচবে। নিরপেক্ষভাবে এই মতদ্বয়ের বিচার করলে দেখা যাবে জন্মান্তরবাদকে স্বীকার না করলে কোন মানুষই এক জন্মে স্বর্গের বা অমৃতের স্বাদ লাভ করতে পারে না। প্রথমতঃ প্রায় প্রত্যেক মানুষের জীবনই পাপ- পুণ্য মিশ্রিত। যিনি স্বর্গে গেলেন, তিনি পাপের শাস্তি পেলেন না। যিনি নরকে গেলেন, তিনি পুণ্যের ফল ভোগ করলেন না। এটা সুবিচারক ঈশ্বরের পক্ষে কখনো শোভনীয় হতে পারে না। দ্বিতীয়তঃ একবার যে অন্যায় করলো, তাকে ক্ষমা করে আর একবার ন্যায় পথে চলার সুযোগ দেওয়া হল না, এতে দয়াময় ভগবানের দয়ায় ও ক্ষমায় দোষ দেখা দিবে সাধারণ সকল জীবের অন্তরে। তৃতীয়তঃ জন্মাবধি মানুষে মানুষে যে বৈষম্য, জন্মান্তরবাদ না মানলে তার কারণ কেউ খুঁজে পাবে না, ভগবানের খেয়াল ব্যতীত। তাঁর খেয়ালের জন্য মানুষ কেন শাস্তি পাবে, এটাও এক কঠিন প্রশ্ন। চতুর্থতঃ শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত পাপী ও পুন্যাত্মার একই প্রকারে স্থিতি কোনদিন কেউ মান্যতা দিতে পারে না।
জন্মান্তরবাদ স্বীকারে এই সকল সমস্যা থাকে না। প্রথমতঃ পাপ- পুণ্য মিশ্রিত জীবন পুণ্যের জন্য স্বর্গ ভোগ করে “ক্ষীণে পুণ্যে” স্বর্গ হতে বিচ্যুত হবে। পাপের জন্য নরক ভোগ করে পাপক্ষয়ে পুনরায় মর্ত্ত্যে আসবে। দ্বিতীয়তঃ মর্ত্ত্যে আসায় পুনরায় তার ন্যায়- পথে চলার সুযোগ উপস্থিত হবে। তৃতীয়তঃ জন্মাবধি মানুষে মানুষে যে বৈষম্য, পূর্ব জন্মকৃত কর্ম্মফলই তার কারণ ধরলে, ভগবানে কোন দোষ স্পর্শ করতে পারবে না। চতুর্থতঃ শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই মানুষ বা যে কোন জীব যার যার কর্ম্মানুযায়ী ফল ভোগ করতে পারবে। তাই একজন্মবাদীদের অনন্ত নরকের ব্যবস্থা নিতান্তই জীবের পক্ষে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। পক্ষান্তরে জন্মান্তরবাদ স্বীকারে নরক মানবার প্রয়োজনীয়তা থাকে না। কোন জীবকেই এক দেহে থাকারও প্রশ্ন থাকে না। শেষ পর্যন্ত কেহই নরকে থাকবে না। যতদিন পর্যন্ত না জীবাত্মা মুক্তিলাভ করবে, ততদিন তাকে পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহণ করার ব্যবস্থা দিয়ে সুযোগ দেওয়া হবে। তাই আর্য্যঋষির মতে চৌরাশি লক্ষ জন্মের পর মানবজন্ম হয়েছে, এই সত্য বিজ্ঞান সম্মত। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়।

No comments:

Post a Comment