[শ্রীগীতার
দ্বিতীয় অধ্যায়ের সাংখ্যযোগে মোট ৭২ টি মন্ত্র বা শ্লোক আছে। আমরা ইতিমধ্যে ৬৪টি
মন্ত্র পাঠ করেছি। আজকে ৬৫ থেকে ৭২ পর্যন্ত মন্ত্র পাঠ করবো অন্তর দিয়ে। আমাদের
সবার জীবনযাত্রার দুইটা প্রান্ত রয়েছে। একটা ঊর্ধ্ব প্রান্ত, অপরটা অধঃপ্রান্ত।
মধ্যস্থলে জীবনিবহ। এক পথে ঊর্ধ্ব, ঊর্ধ্বতর ও ক্রমে চরম ঊর্ধ্বে উঠতে পারা যায়।
অপর পথে নীচু হতে নীচুতে নামতে নামতে জীব ক্রমে অধঃপতনের চরম সীমানায় পৌঁছায়।
সর্ব্বোচ্চ প্রান্তের নাম “ ব্রাহ্মীস্থিতি”। সর্ব্ব- অধস্তন প্রান্তের নাম বিনাশ(
প্রণশ্যতি)। সংসারকুপে পতিত হয়ে বার বার জন্ম- মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয় এই
অধঃগামী জীবকে। আত্মপ্রবনা ও বিষয়প্রবনা
এই দুই এর মধ্যস্থলে মানব। মননশীলতা তার ধর্ম্ম। মননশীলতা বুদ্ধির কার্য্য। এই
বুদ্ধি দুই প্রকার—আত্মপ্রবনা ও বিষয়প্রবনা। আত্মপ্রবনা বুদ্ধি সাধারণ জীবের পক্ষে
রাত্রিবিশেষ। জড় মুগ্ধ জীব ঐ রাত্রিতে নিদ্রিত থাকায় প্রাপ্য বস্তুর জ্ঞান লাভ
করতে পারে না। কিন্তু স্থিতপ্রজ্ঞ সেই রাত্রিতে জাগরিত থাকায় আত্মবুদ্ধিনিষ্ঠ
আনন্দকে সাক্ষাৎ অনুভব করেন। শ্রীশ্রীগীতা মানবজাতির আনন্দের দুয়ার খুলে দিচ্ছেন
প্রতিটি মন্ত্রে।]
৬৫) আত্মপ্রসাদ
জন্মালে সেই ব্যক্তির সমস্ত দুঃখের নিবৃত্তি ঘটে। প্রসন্নচিত্ত ব্যক্তির বুদ্ধি
শীঘ্রই পরমাত্মাতে স্থিতি লাভ করে।
৬৬) যার মন
সমাহিত নয়, তার আত্মবিষয়ক প্রজ্ঞাও নাই, আত্মজ্ঞানে অভিনিবেশও নাই। যার এই
অভিনিবেশ নাই তার শান্তিও নাই। অশান্তের সুখ কোথায়?
৬৭) বিষয়ে
প্রবর্ত্তমান ইন্দ্রিয়গুলির যে কোনটিকেই মন অনুসরণ করুক না কেন, বায়ু যেমন জলে
ভাসমান নৌকাকে বিচলিত করে, সেই একটি ইন্দ্রিয়ই তার প্রজ্ঞা( বুদ্ধি) হরণ করে।
৬৮) অতএব হে
মহাবাহো, যার ইন্দ্রিয় সর্ব্বপ্রকারে বিষয় থেকে নিবৃত্ত হয়েছে তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ।
৬৯) যে
আত্মনিষ্ঠা সর্ব্বপ্রাণির পক্ষে রাত্রিতুল্য অজ্ঞানময়, তাতে সংযমী ব্যক্তি জাগ্রত
থাকেন। আবার যে বিষয়নিষ্ঠাতে অজ্ঞ প্রাণিসাধারণ জাগ্রত থাকে, আত্মদর্শী মুনিগণের
কাছে সেই বিষয়নিষ্ঠা রাত্রিস্বরূপ ।
৭০) বিভিন্ন নদ-
নদীর জলে পরিপুর্ণ প্রশান্ত সমুদ্রে অপার জলরাশি প্রবেশ করে যেমন বিলীন হয়ে যায়,
সেইরূপ বিষয়ভোগে অনাসক্ত যে মহাত্মার মনে বিষয় সকল প্রবেশ করেও কোনরূপ
চিত্তবিক্ষেপের সৃষ্টি করে না, তিনিই শান্তি লাভ করেন। যিনি ভোগবাঞ্ছা কামনা করেন,
তিনি শান্তি পান না।
৭১) তিনি সমস্ত
কামনা ত্যাগ করে নিঃস্পৃহ হয়ে বিচরণ করেন, যিনি নিরহংকার ও মমতাশূন্য, তিনিই
শান্তি লাভ করেন।
৭২) হে পার্থ,
ইহাই ব্রাহ্মী স্থিতি। ইহা প্রাপ্ত হলে জীব আর মোহগ্রস্ত হয় না। মৃত্যুকালে এই
অবস্থায় থেকে ব্রহ্মনির্ব্বান বা মোক্ষ প্রাপ্ত হয়।
ইতি সাংখ্যযোগ
নামক দ্বিতীয় অধ্যায়।
[ মহাপাপ বা
অতিপাপ করলেও পদ্মপত্রেস্থিত জলের মত সেই পাপ গীতা অধ্যায়নকারী ব্যক্তিকে স্পর্শ
করতে পারে না। তাই সকলের নিকট আবেদন শ্রীশ্রীগীতাকে জীবন সঙ্গী করে নিয়ে জীবন
সংসার পথে নির্ভয়ে এগিয়ে চলুন। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।]
No comments:
Post a Comment