বেদযজ্ঞ সম্মেলনঃ—২৫/ ০৭/ ২০১৭ স্থানঃ—ঘোড়শালা*
মুর্শিদাবাদ* পশ্চিমবঙ্গ*
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করে কর্ম্ম- জ্ঞান ও ভক্তি ধারার উপর স্থির
হয়ে বসে থাকবে, তোমার উপাস্য দেবতাকে প্রাণভরে দেখার জন্য।]
বেদ
হচ্ছেন জ্ঞান, যজ্ঞ হচ্ছেন বিষ্ণু আর ভক্তি হচ্ছেন ভগবান বিষ্ণুকে অন্তরে ধারণ
করার ভাবশক্তি। তাই কর্ম্ম, জ্ঞান বেদবৃক্ষের দুইটি কাণ্ড ও ভক্তি হল
সেই বৃক্ষের ফল। শ্রীবৈষ্ণব গ্রন্থে বহু স্থলে ভক্তিপ্রসঙ্গে জ্ঞান- কর্ম্ম
পরিহারের কথা ও জ্ঞানী কর্মীর নিন্দার কথা পাওয়া যায়। “ কর্মী জ্ঞানী ভক্তিহীন, জগ
মাঝে দুই দীন, বৃথা তার অশেষ ভাবনা”। “ কর্মকাণ্ড জ্ঞানকাণ্ড, সকলি বিষের ভাণ্ড”।
“ প্রভু কহে কর্মী জ্ঞানী দুই ভক্তিহীন”। “ কর্মকাণ্ড পরিহরি, প্রেমে বল হরি হরি”।
“ কর্মী জ্ঞানী পরিহরি দূরে থাকো ভক্তজন” ইত্যাদি। এসকল উক্তি হতে অনেকে ধারণা করে
নিয়েছেন, ভক্ত হতে গেলে তাঁর জ্ঞান- কর্মের প্রয়োজন নেই। ভক্তির সন্ধান পেতে হলে
অজ্ঞান এবং নিষ্কর্মা হতে হবে, এরূপ ধারণা যে কীরূপ ভ্রমাত্মক তা ভাবাই যায় না।
সনাতন ধর্ম বিরোধী এই সব কথা মানুষকে দুর্বল করে তোলে। পুরাকাল হতে এ পর্যন্ত যত
ভক্তের কথা পাওয়া যায় তন্মধ্যে কেহই জ্ঞান-বুদ্ধিহীন বা অলস ছিলেন না, বরং
শ্রীশুকদেব, ব্যাস, নারদ, ভীষ্ম, বিদুর অম্বরীষ, রামানুজ, মাধ্বাচার্য, শ্রীবাস
অদ্বৈত, গদাধর ও গোস্বামীগণ সকলেই পরম জ্ঞানের আকর ছিলেন। কেহ কেহ বা ব্রজ-
গোপীগণের দৃষ্টান্ত দিয়ে জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেন। কিন্তু তাঁরা জানেন
না গোপীগণ সাক্ষাৎ শ্রুতিবিদ্যাস্বরূপিণী। বস্তুতঃ যিনি পরম বস্তু তাঁকে একমাত্র
আপনজন বলে জানা অতি গভীর জ্ঞানের পরিচায়ক। তাই শ্রীশ্রীপ্রভু বন্ধুসুন্দর বলেছেন—“
অজ্ঞানের হরিভক্তি হয় না”। বেদরূপ এই বৃক্ষে যদি কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড না থাকে
তবে কোনকাণ্ডের শাখা- প্রশাখায় ভক্তিরূপ ফল ধরবে? তাই গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
বলেছেন—কর্ম ছেড়ে জীব তো এক মুহূর্তও থাকতে পারে না। আরও বলেছেন—জ্ঞানীভক্ত আমার
সবথেকে প্রিয়। তাই বেদযজ্ঞ করে সদায় কর্ম- জ্ঞান ও ভক্তির ধারায় স্নান করে পবিত্র
হয়ে থাকবে, তাঁর কাছে ফিরে যাবার জন্য। জয়
বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment