Friday, 21 July 2017

গীতা তৃতীয় অধ্যায় কর্মযোগ ২৩ থেকে ৩০ শ্লোক

[ গীতা সমগ্র মানবজাতির জীবন দর্শন। বেদভগবান শ্রীগীতায় হেয় কর্ম্মকেও উপাদেয় করে মহাসাধন ভূমিতে উন্নীত করেছেন, লোকমঙ্গলের জন্য। যে কোন ছোট- বড়- হেয় কার্য্যটি করার উপায় হল—সেই কর্ম্মকে যজ্ঞবেদীতে উত্তোলন করে নিতে আসা। সমস্ত কর্ম্মই বন্ধনের হেতু, কিন্তু যজ্ঞ- কর্ম্ম বন্ধনের কারণ নহে। অন্য কর্ম্ম ক্ষণিক, কিন্তু যজ্ঞ- কর্ম্ম অনাদিকাল থেকে প্রজাসৃষ্টির সাথেই আছে। অন্য কর্ম্ম মরণের পথে নিয়ে যায় কিন্তু যজ্ঞ- কর্ম্ম অবশেষে যজ্ঞের অমৃতপানে জীব শাশ্বত ব্রহ্মলোকে যায়। তাই যজ্ঞ ভিন্ন অন্য কর্ম মানুষকে স্বরূপচ্যুত করে ভ্রষ্ট করে। অতএব সকল কর্মকে যজ্ঞ করে নিতে পারলেই মানুষের সকল পাপ- অপরাধ কেটে যায়। ভৌমকর্ম্ম যজ্ঞে পরিণত হলে ভূমার সন্ধান আনে। স্বল্প জ্ঞান সম্যক জ্ঞানে পরিণত হয়। আজকে শ্রীগীতার তৃতীয় অধ্যায়ের কর্ম্মযোগের ২৩ থেকে ৩০ পর্যন্ত মন্ত্র পাঠ করার জন্য প্রদত্ত হলো। সকলে অন্তরের শ্রদ্ধা নিয়ে মন্ত্রগুলি পাঠ করুন, তাহলেই আপনাদের বেদযজ্ঞ –করা হয়ে যাবে।]
২৩) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন—হে পার্থ, আমি যদি অনলস ভাবে কর্ম্মানুষ্ঠান না করি তবে মানবগণ সর্ব্বপ্রকারে আমার পথই অনুসরণ করবে।
২৪) আমি যদি কর্ম্ম না করি, তবে এই লোক সকল উচ্ছন্নে যাবে। আমি বর্ণসংকরাদি সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারণ হব এবং সকল ব্যক্তি আমার দোষে বিনষ্ট হবে।
২৫) হে অর্জ্জুন, অজ্ঞান ব্যক্তিগণ যেভাবে কর্ম্মে আসক্ত থেকে কর্ম্ম করে, জ্ঞানী ব্যক্তিগণ কর্ম্মে আসক্ত না হয়ে লোকশিক্ষার জন্য সেই ভাবেই কর্ম্ম করে থাকেন।
২৬) জ্ঞানীরা কর্ম্মে আসক্ত অজ্ঞানদিগের বুদ্ধিভেদ জন্মাবেন না। আপনারা যোগযুক্ত হয়ে সকল কর্ম্ম অনুষ্ঠান করে তাদিগকে কর্ম্মে নিযুক্ত রাখবেন।
২৭) প্রকৃতির গুণসমূহ দ্বারা সর্ব্বতোভাবে কর্ম্মসকল সম্পন্ন হয়। কিন্তু অহংকারবশে বিমূঢ় ব্যক্তি মনে করে, ‘ আমিই কর্ত্তা’।
২৮) হে মহাবীর, সত্ত্ব- রজঃ- তমঃ প্রভৃতি গুণ এবং মন, বুদ্ধি এবং ইন্দ্রিয়ের পৃথক কর্ম্ম বিভাগের তত্ত্ব প্রকৃতপক্ষে যিনি জানেন, তিনি জানেন যে, গুণ সকল গুণাশ্রয়েই থাকে। এইজন্য তিনি ‘ আমি করি’ বলে মনে করেন না।
২৯) প্রকৃতির গুণ দ্বারা সম্মোহিত ব্যক্তিগণ গুণ ও কর্ম্মে আসক্ত হয়। সেই সকল অল্পবুদ্ধি মন্দমতিদিগকে জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ কর্ম্ম থেকে বিচলিত করবেন না।
৩০) অতএব প্রকৃত বিবেকবুদ্ধি সহকারে সমস্ত কর্ম্ম আমাতে অর্পণ করে কামনাশূন্য ও মমত্বশূন্য হয়ে শোকত্যাগ পূর্ব্বক যুদ্ধ কর।
[ যোগ- যুদ্ধ- যজ্ঞের মধ্যে জ্ঞানীরা কোন তফাৎ দেখতে পান না। কেবল আরাধনা বা অগ্নিতে ঘৃতাহুতি করায় যজ্ঞ নহে। জীবনের যাবৎ ব্যাপারই যজ্ঞ, যদি তা ঈশ্বরার্থে করা হয়। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরো ব্যাপক অর্থে যজ্ঞকে কর্ম্মভূমিতে নিয়ে এসেছেন। কেবল ঈশ্বর- প্রীতির জন্য নয়, মানব কল্যাণে, মানবের প্রীতির জন্য, লোক- সংগ্রহার্থে অর্থাৎ লোকশিক্ষার জন্য, ঈশ্বরের সৃষ্ট জীবের কল্যাণার্থে কৃত সকল কর্ম্মই হচ্ছে যজ্ঞ। কেবল তাই নয়, নিজেকে ভুলে যে কর্ম্ম তা সবই হচ্ছে যজ্ঞ। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীশ্রীগীতার জয়। ]

No comments:

Post a Comment