Wednesday, 19 July 2017

গিতা তৃতীয় অধ্যায় কর্ম্মযোগ ১ থেকে ১০ মন্ত্র

[ গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের নাম “কর্ম্মযোগ”। এই অধ্যায়ে তেতাল্লিশটি মন্ত্র আছে। প্রথম দুটি মন্ত্রে অর্জ্জুনের প্রশ্ন। তিন থেকে আট পর্যন্ত মন্ত্র প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর। অর্জ্জুন ছিলেন জ্ঞানী পুরুষ, তিনি সংক্ষিপ্ত কথাতেই সবকিছু উপলব্ধি করার ক্ষমতা রাখতেন, তা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জানতেন। জ্ঞানীদের কাছে সংক্ষিপ্ত বার্তায় বিশাল আলোড়ন সৃষ্টি করে। নবম মন্ত্র থেকে একটি নূতন সূরে নূতন ভাবের অবতারনা। ভাবটির ভিত্তি যজ্ঞ- তত্ত্ব, সুরটির আবেদন বিশ্বজনীনসৃষ্টির মূলে যজ্ঞ, সৃষ্টি রক্ষায় যজ্ঞ, এইভাবে যজ্ঞের অপরিহার্য্যতা স্থাপন করে গীতার বক্তা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত কর্ম্মকে যজ্ঞের দিকে টেনে নিয়ে চলেছেন, বিশ্বের সকল সৃষ্টির মঙ্গলের জন্য। আজকে গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের কর্ম্মযোগঃ থেকে প্রথম দশটি মন্ত্র সকলের পাঠের জন্য প্রদত্ত হলো। আশা করি আপনারা চিন্তা করে নিজেদের সুমতামত প্রকাশ করবেন।]
১) অর্জ্জুন বললেন, হে জনার্দন, যদি কর্ম্মের চেয়ে জ্ঞানকে তোমার শ্রেয় মনে হয়, তবে হে কেশব, তুমি কেন আমাকে এই আত্মীয়- বধরূপ হিংসাত্মক কার্যে নিয়োগ করছো?
২) তুমি জ্ঞান- কর্ম্মের মিশ্রণজাত আপাত সন্দেহজনক বাক্য দ্বারা আমার বুদ্ধিকে যেন মোহগ্রস্থ করছো? কাজেই যাতে আমি শ্রেয়ঃ লাভ করতে পারি, এমন একটি পথের কথা নিশ্চিত করে বলো।
৩) শ্রীভগবান বললেন—হে নিষ্পাপ অর্জ্জুন, সাধনার জন্য এই জগতে দুই প্রকার মার্গ আছে, এই কথা আমি পুর্ব্বে বলেছি। জ্ঞানযোগ দ্বারা সাংখ্যগণের এবং কর্ম্মযোগ দ্বারা যোগীগণের শ্রেয়োলাভ হয়।
৪) কর্ম্মচেষ্টা না করলেই পুরুষের নৈষ্কর্ম্ম্য লাভ হয় না, আর শুধু কর্ম্মত্যগেই সিদ্ধিলাভ হতে পারে না।
৫) কর্ম্ম না করে কোন লোকই এক মুহুর্ত্ত থাকতে পারে না। কেননা প্রকৃতির গুণের দ্বারা বশীভূত হয়ে সকলেই কর্ম্ম করতে বাধ্য হয়।
৬) যে ব্যক্তি কর্ম্মেন্দ্রিয়গুলিকে বাইরে সংযত করে মনে মনে নানা ভোগ্য বস্তুর কথা ভাবতে থাকে, সে মিথ্যাচারী, ভণ্ড।
৭) হে অর্জ্জুন, যিনি মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গণকে সংযত করে অনাসক্ত হয়ে হস্তপদাদি কর্ম্মেন্দ্রিয় দ্বারা কর্ম্ম করে যান, তিনিই শ্রেষ্ঠ।
৮) তুমি সর্বদা কর্ম্ম করতে থাকো। কেননা, কর্ম্ম না করা অপেক্ষা কর্ম্ম করা ভাল। কর্ম্ম না করলে তোমার জীবন-যাত্রাও চলবে না।
৯) হে অর্জ্জুন, ঈশ্বরের প্রীতির জন্য অনুষ্ঠিত কর্ম্ম ছাড়া অন্য কর্ম্ম বন্ধনের কারণ হয়। তুমি আসক্তি ত্যাগ করে শুধু ঈশ্বর প্রীতির জন্য কর্ম্ম করে যাও।
১০) ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রথমেই মানুষ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে তাদের যজ্ঞ সৃষ্টি করে বলেন—এই যজ্ঞ করে দিন দিন তোমরা উন্নতি লাভ কর। ইহা তোমাদের অভীষ্ট প্রদান করুক।
[ গীতা হল বিশ্বমানবের গ্রন্থ। এই গ্রন্থে কোনরূপ পক্ষপাতমূলক দুষ্টতা পাওয়া যাবে না। কেবল মানবজাতির জন্য গীতা নয়—মানব জাতির সাথে ঈশ্বরের সকল সৃষ্টির মঙ্গলের জন্য এই গ্রন্থসংযত মানুষ কোন স্বার্থেই সৃষ্টির কারো অমঙ্গল করতে পারেন না। বেদযজ্ঞ করে মানব জাতির উন্নতি যুগ যুগ ধরে হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে কর্ম্ম বা যজ্ঞ করতেই হয়, সেই কর্ম্ম বা যজ্ঞ যখন কেবল ঈশ্বরের প্রীতির জন্য করা হয়, তখন সেই কর্ম্মে কোন দোষ থাকতে পারে না। ঈশ্বর সর্বভুতে বিরাজ করছেন, এই সত্য জেনে স্রষ্টার সৃষ্টির মঙ্গলের জন্য কর্ম্ম করাই হচ্ছে বেদে যজ্ঞ। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়। ]

No comments:

Post a Comment