বেদযজ্ঞ সম্মেলনঃ—২৬/ ০৭/ ২০১৭ স্থানঃ—ঘোড়শালা*
মুর্শিদাবাদ* পশ্চিমবঙ্গ*
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করে ঘরে ঘরে বেদের আলো জ্বালো এবং নিজের
সনাতন ঐতিহ্যকে সর্বত্র তুলে ধরো, বেদযজ্ঞ অভিযান করে।]
বেদযজ্ঞ আমরা সকলেই করে চলেছি কিন্তু আমাদের
ঐক্যতাকে কারা যেন নিজেদের স্বার্থে ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। আমরা ছেলেবেলায় যখন অংক
শিখতে আরম্ভ করি তখন থেকেই আমাদের বেদশিক্ষা শুরু হয়ে যায়। আমরা বলি এক-এ চন্দ্র,
দুই- এ পক্ষ, তিন-এ নেত্র, চার-এ বেদ। আকাশে চন্দ্র একটাই। পাখীর দুইটা পাখা বা
মাসের মধ্যে শুক্ল পক্ষ ও কৃষ্ণ পক্ষ দুইটা পক্ষ। আমাদের দুইটা চর্ম্ম চক্ষু।
দেবতাদের তিনটা চক্ষু। কপালের মধ্যে একটা চক্ষু—জ্ঞান চক্ষু। সেই চক্ষু আমাদেরও
আছে, এখনও ফোটে নি। তাঁকেই বেদযজ্ঞ করে ফুটিয়ে তুলতে হবে। তবেই চার- এ বেদ, এই
বেদের জগতে আমরা যেতে পারবো। এই বেদ মনুষ্যকৃত নহে। বেদের অপর নাম শ্রুতি। বেদ
শব্দের অর্থ জ্ঞান। এই জ্ঞানচক্ষুর উন্মোচন না হলে কেউ বেদের রাজত্বে প্রবেশ করার
অধিকার পায় না। বেদের তাই আর এক নাম দৈবীবাক। উহা দেবতাদের বা ঈশ্বরের বাক্য।
আমাদের বুদ্ধিশক্তির মূলে আর একটি শক্তি আছে, তার নাম বোধি। এই বোধিশক্তি যাঁদের
উত্তমরূপে ব্যক্ত হয়েছে তাঁদেরকে আমরা ঋষি বলি। দৈবীবাক ঋষিদের কর্ণে শ্রুত হয়।
ইহাই বেদ। ঋষিরা কখনও নিজেদের মন্ত্রকৃৎ বা মন্ত্রনির্মাতা বলেন নি। এই জন্য বেদ
কোন পুরুষকৃৎ নহে, উহা অপৌরুষেয়। হিন্দু ধর্ম ছাড়া অন্যান্য শ্রেষ্ঠ ধর্মেও বেদ
আছে, সেই সব বেদের নাম অন্য হলেও সেই সব গ্রন্থেও মানুষের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচনের
মন্ত্রই উচ্চারিত হয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিশ্বের অন্যান্য শ্রেষ্ঠ ধর্মের
প্রচারকগণ নিজেদের বেদকে নিজেদের সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য
যতরকম কৌশল আছে অবলম্বন করেন। কিন্তু সনাতন ধর্ম বা হিন্দু ধর্মের প্রচারকগণ সেই
সহযোগিতা রাজদরবার থেকে পান না। এমনকি বর্তমানে কুরআন-এর প্রচার করার জন্য “ইমাম”
ভাতা চালু থাকলেও হিন্দুধর্মের প্রচারক পুরোহিতদের জন্য কোন ভাতা সরকার থেকে চালু
নেই। আমাদের জাতীয় জীবনে অধঃপতনের ইহা একটি প্রধান কারণ। বেদযজ্ঞ অভিযানের মাধ্যমে
বেদশিক্ষা দেওয়া ভারত সরকারের দায়িত্ব, কারণ সত্যকে না জানলে সেই দেশের নাগরিক
সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারেন না। মানুষ সত্যকে জেনে নিজেদের পায়ে দাঁড়াবার শক্তি পাবে,
এই জন্যই শিক্ষাখাতে দেশের অর্থ ব্যয় করা হয়। আমাদের সনাতন ধর্মে বৈদিক সাহিত্য
বিশালত্ব নিয়ে বিরাজ করছে বিশ্বব্যাপী। আধুনিক বিজ্ঞানের কৃপায় বেদ, ব্রাহ্মণ,
আরণ্যক, উপনিষদ, বেদান্ত, গীতা, রামায়ণ, মহাভারত, চণ্ডী, ভাগবত, পুরাণ ইত্যাদি
গ্রন্থ বিশ্বের সব ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। অতএব সব ভাষাভাষীর মানুষ সনাতন ধর্মের
সত্যকে সহজেই জানতে সক্ষম হবেন, যদি আমরা অন্যান্য ধর্মের নেতাদের ন্যায় তা প্রচার
করতে শুরু করি, বেদযজ্ঞ অভিযানের মাধ্যমে। জয় বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment