Sunday, 30 July 2017

গীতা সন্ন্যাসযোগঃ ১৩ থেকে ২১ শ্লোক

[ গীতার সন্ন্যাসযোগঃ এর ১৩ থেকে ২১ মন্ত্র জীবের স্বভাব প্রকরণের জন্য উচ্চারিত হয়েছে। গীতায় যত মত তত পথ দেখা গেলেও একটিই রাজপথের উল্লেখ করা হয়েছে। গীতায় বক্তার বক্তব্য এই যে, আপনি কর্ত্তৃত্বাভিমান ও ফলাকাঙ্ক্ষা শূন্য হন। ইহাই প্রশস্ত রাজপথ। এই পথে থেকে আপনি কর্ম্ম করার জন্য যে কোন ফুটপাথ বা সংকীর্ণ অলি-গলির পথ ঘেঁসে চলতে পারেন কিংবা নাও চলতে পারেন, সেটা আপনার স্বভাবের উপর নির্ভর করবে। তবে রাজপথকে লক্ষ্য করেই আপনাকে চলতে হবে, তবেই আপনি পথভ্রষ্ট হবেন না। তাই আপনি কোন ফুটপাথ বা সংকীর্ণ গলির পথ ঘেঁসে চলবেন তা নির্দ্ধারণ করবে আপনার স্বভাব। স্বভাব স্থির করবে আপনার বর্ণ ও আশ্রম। আপনি ব্রাহ্মণ- স্বভাব হলে বেদযজ্ঞ- তপস্যা করবেন রাজপথ ধরে। আপনি সন্ন্যাসী হলে অনিকেত হয়ে তপশ্চর্য্যা করবেন। আপনি গৃহাশ্রমী হলে অগ্নিহোত্র দশকর্ম্ম করবেন বিভিন্ন পথ ধরে, রাজপথকে লক্ষ্য করে। আপন আপন স্বভাব অনুরূপ কর্ম্মে নিযুক্ত থেকেই মানুষ সিদ্ধিলাভ করতে পারে—যদি সে নিরহংকার ও নিষ্কামতার রাজপথ পরিত্যাগ না করে। তাই ব্রাহ্মণ- সন্ন্যাসী- গৃহী সকলের উচিত নিজেকে বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মীরূপে প্রকাশ- বিকাশ করে নিরহংকার ও নিষ্কামতার রাজপথ ধরে সনাতন ধারার সাথে নিজেকে যুক্ত করে রাখা। আজকে সকলের কল্যাণের জন্য গীতার সন্ন্যাসযোগঃ এর ১৩ থেকে ২১ মন্ত্র প্রদত্ত হল।]
১৩) জিতেন্দ্রিয় পুরুষ মনে মনে সমস্ত কর্ম্ম ত্যাগ করে নবদ্বারযুক্ত দেহে সুখে বাস করেন। তিনি নিজে কিছু করেন না, অন্যকে দিয়েও করান না।
১৪) আত্মরূপ প্রভু লোকের কর্ত্তৃত্ব সৃষ্টি করেন না, কর্ম্মফলের সহিত তাঁর কোন সম্বন্ধ নাই। যে বস্তুর যেমন স্বভাব সেই অনুসারে কার্য হয়।
১৫) সর্ব্বব্যাপী পরমাত্মা কারো পাপ গ্রহণ করেন না, পুণ্যও গ্রহণ করেন না। অজ্ঞানতা দ্বারা জ্ঞান আবৃত থাকে বলেই প্রাণিগণ মোহগ্রস্ত হয়।
১৬) কিন্তু আত্মজ্ঞান দ্বারা যাঁদের অজ্ঞান নিবিষ্ট হয়েছে, তাঁদের ঐ জ্ঞান সূর্যের ন্যায় পরম তত্ত্বকে প্রকাশ করে।
১৭) যারা সেই পরমাত্মায় বুদ্ধি নিবিষ্ট করেছেন, তাতেই যাঁদের আত্মভাব, তাতেই যাঁদের নিষ্ঠা, তিনিই যাঁদের পরম গতি ও অনুরাগের বিষয়, তাঁদের আর পুনর্জন্ম হয় না। কারণ, আত্মজ্ঞানের দ্বারা তাঁদের সংসারমোহরূপ অজ্ঞান দূর হয়েছে।
১৮) ব্রহ্মবিৎ পণ্ডিতগণ বিদ্যাবিনয়যুক্ত ব্রাহ্মণে, চণ্ডালে,গো, হস্তী ও কুক্কুরে সমদর্শী।
১৯) যাঁদের মন সাম্যে অবস্থিত এই জীবনেই তাঁরা জনম- মরণরূপ সংসার অতিক্রম করেন। যেহেতু ব্রহ্ম ব্রাহ্মণ চণ্ডালাদিতে সর্ব্বত্র অভিন্ন এবং তাঁদের গুণদোষের অতীত, সেই জন্য সেই সমদর্শী পুরুষগণ ব্রহ্মেই অবস্থান করেন এবং দেহেন্দ্রিয়াদিতে অভিমানশূন্য বলে তাদিগকে দোষ স্পর্শ করে না।
২০) স্থিরবুদ্ধি, ব্রহ্মবিৎ, অসংমূঢ় ব্যক্তি ব্রহ্মে অবস্থান করে প্রিয় বস্তু পেয়েও হৃষ্ট হন না এবং অপ্রিয় বস্তু পেয়েও উদ্বিগ্ন হন না।
২১) বাহ্য বিষয়ের স্পর্শে যিনি অনাসক্তচিত্ত, তিনি আত্মাতে যে সুখ তা লাভ করেন এবং ব্রহ্মযোগযুক্ত হয়ে অক্ষয় সুখ উপভোগ করেন।
[ মানুষের মধ্যে ভাল- মন্দ উভয় গুণই বিরাজ করে। মানুষ নিজের জ্ঞান- বুদ্ধির দ্বারা নিজের স্বভাবের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। মানুষ নিজ গৃহের কর্মী হয়েও বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হতে সক্ষম জ্ঞানের জগতে গিয়ে। দারিদ্রতা মানুষের মনের, মন যদি দারিদ্রতা দ্বারা আবদ্ধ থাকে তবে সে জগতের সমস্ত সম্পদের মালিক হয়েও মনকে দমন করতে পারবে না, অপরকে বা নিজ আত্মাকে কিছুই দান করতে পারবে না, অপরকে বা নিজ আত্মাকে কিছু দিয়েও দয়া করতে পারবে না। অতএব সেই জীব দেবতা, মানুষ, অসুর যে পর্যায়ের হোক নিজের প্রতি বিশ্বাস তাঁর থাকবে না যে সে ব্রহ্মার মানস পুত্র হয়ে এই কর্ম্মভূমিতে এসেছে জ্ঞানলাভ করে মুক্ত হবার জন্যে। ।।  জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়। জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীশ্রীগীতার জয়।।

No comments:

Post a Comment