[ গীতা হচ্ছে সার্ব্বজনীন জীবনের সিদ্ধ মন্ত্র। তাই গীতার যে কোন মন্ত্র
মানুষ উচ্চারণ করার সাথে সাথে কর্ম্মে সিদ্ধিলাভ করেন। গীতার চতুর্থ অধ্যায়ে
কর্ম্মকে যজ্ঞময় করে তুলে ধরা হয়েছে। যাঁদের জীবন যজ্ঞময় তাঁরাই আত্মজ্ঞানী। ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং নিজেকে আত্মতৃপ্ত জ্ঞানী বলেছেন নিজের কর্ম্মকে যজ্ঞময়রূপে
স্বীকার করে। সেই সাথে জনকাদি ভারতের দেবর্ষি- রাজর্ষিদেরকেও আত্মতৃপ্ত জ্ঞানী বলে
স্বীকার করেছেন। তাঁদের কর্ম্ম, যজ্ঞে পরিণত হয়ে “ লোক- সংগ্রহ” অর্থাৎ লোকশিক্ষায়
এক বিশাল ও ব্যাপক সামাজিক রূপ গ্রহণ করে সনাতন ধর্মকে রক্ষা করে রেখেছে। যারা
লোক- সংগ্রহের বা লোকশিক্ষার কাজে লিপ্ত না থেকে “ লোক- সংঘট্ট” বৃদ্ধি করে
নিজেদের দলের সংখ্যা বৃদ্ধি করে, তাঁরা অজ্ঞানীদের দলভুক্ত, তাঁদের দ্বারা পরিবার-
সমাজ- রাষ্ট্র কারো মঙ্গলসাধন হতে পারে না। আজকে সকলের জন্য শ্রীগীতার তৃতীয়
অধ্যায়ের কর্মযোগের ১১ থেকে ২২ পর্যন্ত মন্ত্র তুলে ধরা হলো। এখানে কোন- দল- মত-
সম্প্রদায়ের মতো তুচ্ছ ও সংকীর্ণ বাক্য নেই, সকল মন্ত্রই উদার, সার্ব্বজনীন ও
সকলের জন্যই মঙ্গলময়। যারা পরিশুদ্ধ জীবন- যাপন করে নিজের ও রাষ্ট্রের সকলের মঙ্গল
চান, তাঁদের কাছে অনুরোধ, আপনারা গীতাকে জীবনের মন্ত্র করে নিয়ে সনাতন ধারার সাথে
যুক্ত হয়ে যান।
১১) স্বয়ং ব্রহ্মা যজ্ঞ সৃষ্টি করে বলেছেন--- এই যজ্ঞ দ্বারা তোমরা
দেবতাদিগকে সন্তুষ্ট কর এবং দেবগণও তোমাদের অভীষ্ট দান করুন। এই ভাবে একে অন্যের
সংবর্ধনা করলে উভয়ের মঙ্গল সাধিত হবে।
১২) যজ্ঞ তৃপ্ত হয়ে দেবগণ তোমাদের ইষ্ট ভোগ দেবেন। দেবপ্রদত্ত সেই ভোগ্য
বস্তু দেবতাদিগকে নিবেদন না করে যে ভোগ করে, সে তো চোর।
১৩) যজ্ঞাবশিষ্ট অন্নভোজনকারী সর্ব্ব পাপ হতে মুক্ত হয়ে থাকেন। কিন্তু যারা
শুধু নিজের জন্যে অন্ন পাক করে, তারা শুধু পাপই ভোজন করে।
১৪) অন্ন হতে জীব জন্মায়, বৃষ্টি হতে অন্ন জন্মায়, বৃষ্টি জন্মায় যজ্ঞ হতে
এবং কর্ম্ম হতে যজ্ঞের উৎপত্তি।
১৫) কর্ম্ম বেদ হতে জন্মায় এবং বেদ পরমেশ্বর হতে জন্মলাভ করে। অতএব
সর্ব্বব্যাপী পরমেশ্বর সর্ব্বদাই যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত আছেন।
১৬) হে পার্থ, যে লোক এ ভাবে প্রবর্তিত কর্ম্মচক্রের অনুসারে না চলে,
ইন্দ্রিয়বিলাসী, সে বৃথাই জীবন ধারণ করে।
১৭) কিন্তু যে লোক কেবল আত্মাতেই প্রীত থাকে, আত্মাতেই তৃপ্ত থাকে,
আত্মাতেই সন্তুষ্ট থাকে তার নিজের কোন কর্ত্তব্য থাকে না।
১৮) এই জগতে তার আর কোন কর্ম্মের প্রয়োজন নেই। কর্ম্ম না করলেও তার কোন পাপপুণ্য
নেই। নিজের প্রয়োজন মিটানোর জন্য সর্ব্বভূতের মধ্যে কারো আশ্রয় গ্রহণে তার কোন
আবশ্যকতা নেই।
১৯) অতএব তুমি আসক্তিশূন্য হয়ে সর্ব্বদা কর্ত্তব্য কর্ম্ম সম্পাদন কর।
কারণ, অনাসক্ত হয়ে কর্ম্মানুষ্ঠান করলে পুরুষ পরম পদ অর্থাৎ মোক্ষলাভ করেন।
২০) জনকাদি মহাত্মারা কর্ম্ম দ্বারাই সিদ্ধিলাভ করেছেন। লোকশিক্ষার দিকে
দৃষ্টি রেখেও তোমার কর্ম্ম করা উচিত।
২১) শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যা যা আচরণ করে থাকেন, অপর সাধারণেও তাই করে থাকে।
তিনি যা প্রামাণ্য বা করণীয় বলে স্থির করেন, সাধারণ লোকও তাই মেনে চলে।
২২) হে পার্থ, ত্রিলোক মধ্যে আমার করণীয় কিছুই নেই। অপ্রাপ্ত বা প্রাপ্তব্য
বলেও আমার কিছু নেই। তথাপি আমি সর্ব্বদা কর্ম্মানুষ্ঠানে ব্যাপৃত থাকি।
[ আমরা ১১ থেকে ২২ শ্লোক পাঠ করে জানতে পারলাম, আমরা যত সৎ কর্ম্মানুষ্ঠান
বা যজ্ঞ করতে থাকবো, ততই আমরা বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় হয়ে থাকবো। তাঁর
করুণালাভ না করে কেউ জীবন সার্থক করে তুলতে সক্ষম হন না। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের
শ্রীশ্রীগীতার জয়।
No comments:
Post a Comment