বিশ্বমানব
শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা- ২ আল- বাকারা, ৬১ থেকে ৭১ আয়াত]
৬১) আর
তোমরা যখন বলেছিলে, হে মূসা! একই রকম খাদ্যে আমরা কখনো ধৈর্য ধারণ করব না, সুতরাং
তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর; তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য
শাক- সবজি, কাঁকড়, গম, মসূর ও পেঁয়াজ উৎপাদন করেন। মূসা বলল, তোমরা কি উৎকৃষ্টতর
বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সাথে বিনিময় করতে চাও? তবে কোন নগরে অবতরণ কর। তোমরা যা
চাও তা সেখানে আছে। এবং তারা লাঞ্ছ্বনা ও দারিদ্রগ্রস্থ হল এবং আল্লাহ্র ক্রোধের
পাত্র হল। এ জন্য তারা আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহকে অমান্য করত। এবং নবীদের( প্রেরিত
পুরুষদের) অন্যায়ভাবে হত্যা করত। অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘনের কারণেই তাদের এই পরিণতি
ঘটেছিল। ৬২) নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে, যারা ইহুদী এবং খ্রিষ্টান হয়েছে অথবা সাবেয়ী
হয়েছে, এদের যে কেউ আল্লাহ্ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য
তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরষ্কার আছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।
৬৩) (স্মরণ কর) যখন তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তোমাদের ঊর্ধ্বে তুর পর্বতকে
উত্তোলন করেছিলাম, (বলেছিলাম) আমি যা (গ্রন্থ) দিলাম (সেই কিতাবে যে নির্দেশ আছে)
দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ কর এবং তাতে যা আছে তা স্মরণ রাখ, যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে
পার। ৬৪) এর পরেও তোমরা মুখ ফিরালে, তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না
থাকলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে। ৬৫) তোমাদের মধ্যে যারা শনিবার ( বিশ্রাম দিবসে)
সীমালঙ্ঘন করেছিল তাদেরকে তোমরা নিশ্চিতভাবে জান। আমি তাদের বলেছিলাম, তোমরা ঘৃণিত
বানর হও। ৬৬) আমি এ ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য
দৃষ্টান্ত এবং সাবধানীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ করেছি। ৬৭) আর স্মরণ কর, যখন মূসা আপন
সম্প্রদায়কে বলেছিল, আল্লাহ্ তোমাদেরকে একটি গরু জবাই করার আদেশ দিয়েছেন, তারা
বলেছিল, তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছ? মূসা বলল, যাতে আমি অজ্ঞদের দলভুক্ত না
হই (তার জন্য) আল্লাহ্র শরণ নিচ্ছি। ৬৮) তারা বলল, আমাদের জন্য তোমার
প্রতিপালককে স্পষ্টরূপে জানিয়ে দিতে বল ঐ
গাভীটি কিরূপ? মূসা বলল, আল্লাহ্ বলছেন, তা এমন একটি গরু যা বৃদ্ধও নয়, অল্প
বয়স্কও নয়- মধ্য বয়সী। অতএব তোমরা যে আদেশ পেয়েছ তা পালন কর। ৬৯) তারা বলল, আমাদের
জন্য তোমার প্রতিপালককে সুস্পষ্টরূপে জানিয়ে দিতে বল তার ( গরুটি) রং কি? মূসা
বলল, আল্লাহ্ বলেছেন, তাহা হলুদ বর্ণের গরু, তার রঙ উজ্জ্বল গাঢ়, যা দর্শকদের
আনন্দ দেয়। ৭০) তারা বলল, আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে
বল, গরুটি কী ধরণের? আমাদের নিকট গরু তো একই রকম মনে হয় এবং আল্লাহ ইচ্ছা করলে
নিশ্চয় আমরা পথ পাব। ৭১) মূসা বলল, তিনি বলছেন তা এমন একটি গরু যা জমি চাষে এবং
ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি-সুস্থ নিখুঁত। তারা বলল, এখন তুমি সঠিক
বর্ণনা এনেছ। যদিও তারা জবাই করতে ইচ্ছুক ছিল না, তবুও তারা সেটা করল।
৬১ নং
আয়াত পাঠ করলেই জানা যায়, মানুষের আর্থিক উন্নতি হলেই মানুষ কাম-ক্রোধ-লোভ- মোহ-
অহংকার ও ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে পড়ে। তখন তাদের জীবন যাত্রা আর সহজ- সরল পথে চলে না,
কৃত্রিম সভ্যতা গড়ে তোলে এবং জীবনকে একটা খেল-তামাসার বস্তুতে পরিণত করে। পয়সা
দিলেই হাতের কাছে সুখ- ভোগের বিষয়বস্তু পেয়ে যায়। এই অবস্থায় মানুষ মন ও জ্ঞানের
দিক থেকে দুর্বল ও দরিদ্র হয়ে পড়ে, সেই সাথে লাঞ্ছ্বিত হয় সর্বক্ষেত্রে। এইসব
মানুষ তখন আর তারা সত্যজ্ঞানী মানুষকে(নবীকে) চিনতে পারে না ও ক্রোধ, লোভ- মোহের
বশবর্তী হয়ে, তাই তাঁদেরকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। বর্তমানে যেমন মুসলিমদের
এক শ্রেণির মানুষ এই হত্যালীলা করে চলেছে সারা বিশ্বজুড়ে। অথচ পরের আয়াতে কুরআনে
বিশ্বের সমস্ত সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দিয়ে বলা হয়েছে—নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে, যারা
ইহুদী এবং খ্রিষ্টান হয়েছে অথবা সাবেয়ী হয়েছে, এদের যে কেউ আল্লাহ্ এবং শেষ দিবসে
বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরষ্কার আছে। তাদের
কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। এই সত্য জানা সত্যেও তবে কেনো মুসলমানরা কেবল
নিজের ধর্মকে বিশ্বাস করে অন্য ধর্মের লোকের প্রতি অত্যাচার করে নিজেরাই অবিশ্বাসী
ও বিশ্বাসঘাতক হয়—কুরআনের তথা আল্লাহ্র নির্দেশকে উপেক্ষা করে? তূর পর্বতের ন্যায়
দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে নিজের সততায় অটল থেকে সৎ কর্মশীল হতে হবে মানুষকে, যেহেতু
প্রতিটি মানুষ আল্লাহ্র কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে আসে সৎ কর্ম করার জন্যে এই পৃথিবীর
বুকে। এই পৃথিবীর কর্ম শেষে হয় জীবের বিশ্রাম দিবস। যারা কর্মদিবসে সীমালঙ্ঘনকারী
তারা যে পরবর্তী জীবনে অভিশপ্ত ঘৃণিত বানর হবে তা এই আয়াতে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে। তাই মানুষ হয়ে মানুষের কাজ না করলে তার পরজন্মে মানুষ হয়ে জন্মাবার
সম্ভাবনা যে নেই তা এখানে পরিষ্কার। তাই সাবধানীরা কেবল পরের জীবনটাকে উন্নত করে
পাবার জন্যে অর্থাৎ পরকালের উন্নতির জন্যেই সৎ কর্ম করে জীবনের শেষ মুহূর্ত
পর্যন্ত।
৬৭ থেকে
৭১ পর্যন্ত আয়াত নাজিল হয় গরু জবাইকে কেন্দ্র করে। মূসা আপন সম্প্রদায়কে গরু জবাই
করার কথা বলেন, আল্লাহ্র নির্দেশে কিন্তু সেই সম্প্রদায়ে গরু জবাই করা হতো না।
তাই তারা মূসার কথা বিশ্বাস করতে পারল না। তাতে মূসা বললো আমি যাতে অজ্ঞদের
দলভুক্ত না হই। এমন গরু জবাই করতে হবে যা হলুদ বর্ণের, তার রঙ উজ্জ্বল গাঢ়, যা
দর্শকদের আনন্দ দেয়, যা চাষে, পানি সেচে ব্যবহৃত হয়নি- সুস্থ, নিখুঁত। এখানে
আল্লাহ্র বার্তা যা কিছু দুর্লভ ও আনন্দদায়ক তার মধ্যেই আমি বাস করি, এই সত্যকে
জেনে তা আমার নামেই উৎসর্গ করবে – কুরবান করবে- জবাই করবে। জবাই বলতে অজ্ঞরা বুঝে সেই প্রাণির নলী কেটে তাকে প্রাণহীন করে তোলা। জবাই এর আধ্যাত্মিক অর্থ সেই প্রাণী বা বস্তুর
প্রাণের সাথে নিজের প্রাণকে যুক্ত করে তাকে নিজাত্মার সাথে যুক্ত করে আত্মময় করে
তোলা। আত্মায় আত্মার বন্ধু এই সত্যজ্ঞান লাভ করার জন্যেই গরু জবাই করার এই আয়াত
নাজিল হয় জ্ঞানীদের জন্য। তাই যারা আল্লাহ্র নামে জীবকে জবাই করে তারা অজ্ঞদের
দলভুক্ত সম্প্রদায়—এখানে এটাই আলোকিত হয়েছে।তাছাড়া আরও জ্ঞানীরা জানেন, গরু নিরীহ
ও মুর্খ প্রাণী,তার জীবন পরের জন্যেই উৎসর্গ হয়, কিন্তু সে জানে না। এইরূপ
মুর্খতাকে জবাই করে অজ্ঞদের দলভুক্ত হয়ে না থাকার জন্যে এই আয়াত নাজিল হয়। যাদের
হাতে সত্য- প্রেম ও জ্ঞানের লাঠি রয়েছে তারাই কেবল এই আয়াতের অর্থ উপলব্ধি করতে
পারে। মূসার হাতে যে লাঠিটা ছিল তা সত্য- প্রেম- বিশ্বাস ও জ্ঞানের লাঠি, তা দিয়েই
তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের পরীক্ষা করতেন। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র
কুরআনের আলোর জয়।
পবিত্র কুরআনে গরুকে বিশেষ শ্রদ্ধার আসন দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে এর দেহের যেকোন অংশ মানুষের জন্যে মহা ঔষধ। মৃত ব্যক্তির দেহেও প্রাণ সঞ্চার করতে পারে এক শ্রেণির গরু। সেই গরুকে হত্যা করে মানুষের খাওয়া কি উচিত? তাহলে দেখা যাচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায় সত্যবিমুখ হয়ে সত্যকে বিকৃত করে কেবল নিজের বাহুবলের শক্তি দেখাবার কাজে লিপ্ত রয়েছেন। আমি পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আয়াতের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করে পোষ্ট করে চলেছি, সত্যকে জানার জন্যে। কেউ পড়ুক আর না পড়ুক সত্যকে জানতে হবে জানাতে হবে। মনে রাখবেন পবিত্র কুরআন যদি ঈশ্বর প্রেরিত বাণী হয় তবে তা হবে তাঁর সকল সৃষ্টির জন্যে মঙ্গলময় বাণী। সকলকে জানাই অভিনন্দন
ReplyDelete