বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [সুরা—২
আল-বাকারা, ৭২ থেকে ৮২ আয়াত]
৭২) (স্মরণ কর) যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা
করেছিলে এবং একে অন্যের উপর দোষারোপ করছিলে, অথচ তোমরা যা গোপন করছিলে আল্লাহ তা
প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। ৭৩) অতঃপর আমি বললাম, এটির (গরুটির) কোন অংশ দ্বারা ওকে(
মৃত ব্যক্তিকে) আঘাত কর। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং যাতে তোমরা ভেবে দেখ
সেজন্য তাঁর নিদর্শন তোমাদেরকে দেখিয়ে থাকেন। ৭৪) এরপরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে
গেল, তা পাষাণ কিংবা তার চেয়েও কঠিনতর, এমন কিছু পাথর আছে যা থেকে নদীনালা
প্রবাহিত হয় এবং কিছু পাথর এরূপ আছে যা বিদীর্ণ হওয়ার পর তা থেকে পানি নির্গত হয়,
আবার কিছু পাথর এমন, যা আল্লাহ্র ভয়ে ধসে পড়ে। বস্তুত তোমরা যা কর তা আল্লাহর
অজানা নয়। ৭৫) ( হে অবিশ্বাসীগণ) তোমরা
কি এখনও আশা কর যে, তারা তোমাদেরকে বিশ্বাস করবে? যখন তাদের একদল আল্লাহর বাণী
শ্রবণ করত এবং বুঝবার পরও জেনেশুনে তা বিকৃত করত। ৭৬) আর তারা যখন বিশ্বাসীদের
সংস্পর্শে আসে তখন বলে, আমরা বিশ্বাস করেছি, আবার যখন তারা নিভৃতে (নিজ দলীয়) একে
অন্যের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আল্লাহ তোমাদের কাছে যা ব্যক্ত করেছেন তোমরা কি তা
বিশ্বাসীদের বলে দাও? এর দ্বারা তারা (বিশ্বাসীগণ) তোমাদের প্রতিপালকের সামনে
তোমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ দাঁড় করাবে, তোমরা কি তা বুঝতে পার না? ৭৭) তারা কি জানে
না যে, তারা যা গোপন রাখে কিংবা প্রকাশ করে নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তা জানেন? ৭৮)
তাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে যাদের মিথ্যা আশা ছাড়া কিতাব (আসমানীগ্রন্থ)
সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নেই, তারা শুধু মনগড়া কথা বলে বেড়ায়। ৭৯) সুতরাং তাদের জন্য
দুর্ভোগ, যারা নিজ হাতে গ্রন্থ রচনা করে এবং অল্প মূল্য পাবার জন্য বলে, এটি
আল্লাহ্র নিকট হতে এসেছে। তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য তাদের শাস্তি এবং যা
তারা উপার্জন করেছে তার জন্যও তাদের শাস্তি (রয়েছে)। ৮০) আর তারা বলে, কয়েকটি দিন
ছাড়া (জাহান্নামের) আগুন কখনো আমাদের স্পর্শ করবে না। ( হে মুহাম্মাদ তুমি) বল,
তোমরা কি আল্লাহ্র নিকট থেকে কোন অঙ্গীকার নিয়েছ? অতএব আল্লাহ্ তাঁর অঙ্গীকার
কখনো ভঙ্গ করবেন না, অথবা তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কথা বলছ যা তোমরা জান না? ৮১)
হ্যাঁ, যারা পাপ কাজ করে এবং যাদের পাপরাশি তাদের পরিবেষ্টন করে নেয় তারাই
জাহান্নামী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। ৮২) পক্ষান্তরে যারা বিশ্বাস করে এবং সৎকাজ
করে তারাই জান্নাতের অধিকারী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।
মানুষ মানবিক চেতনাসম্পন্ন জীব, তাই সে জ্ঞানী।
জ্ঞানহারা হলেই মানুষ চেতনা হারিয়ে ফেলে, চেতনাবিহীন মানুষ মৃতবস্তুর ন্যায়।
মৃতবস্তু ও চেতনাবিহীন মানুষ দুই সমান। যারা বাঁচার জন্য একে
অপরের ঘাড়ে দোষ চাপায় মিথ্যার আশ্রয় নেই তারা জীবিত থেকেও মৃত আর চেতনাসম্পন্ন
জ্ঞানী ব্যক্তি দোষ করলেই অনুতপ্ত হয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে নেই। আল্লাহ এই
আয়াতের মাধ্যমে মানব জাতিকে মৃতদের মধ্যে থেকে চেতনাশক্তি নিয়ে জেগে উঠার বা বের
হয়ে আসার উপদেশ দিয়েছেন। সেই সাথে একটা উপকারী গরুর জীবন কিভাবে মৃতব্যক্তিকেও
চেতনাসম্পন্ন করে তুলতে সক্ষম, নিজের জীবনের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করে দিয়ে,
তা তুলে ধরেছেন, মানব জাতির শিক্ষার জন্য।
একটি গরু জীবিত থাকাকালীন যেভাবে নীরবে সকলের সেবা করে চলে একইভাবে মারা যাবার
পরেও দেহের প্রতিটি অঙ্গ জীবিত ব্যক্তিদের দান করে তার জীবন রক্ষার্থে সাহায্য
করে। মানুষ কি শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে পরার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করার শিক্ষা পায়নি?
আল্লাহ্ মানুষের হৃদয়
কোমল করে তৈরী করলেও তাদের হৃদয় পাষাণ থেকে পাষাণতর দেখে তিনি পর্বতের তিন শ্রেণির
পাষাণকে নিয়ে আয়াত নাজিল করেন। কত মানুষের হৃদয় পাষাণ হলে তারা গরুর মতো উপকারী
প্রাণি যার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে মানুষের চেতনা যুক্ত তাকে হত্যা করতে
পারে—এই জ্ঞান মানব জাতিকে তিনি দিয়েছেন। জেনেশুনেও অজ্ঞানী- অবিশ্বাসীদের দল যে
তাঁর বাণীকে মান্যতা দিবে না তাও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। কারণ যাদের শাস্ত্রজ্ঞান
নেই, তারা মনগড়া কথা বলে, সেটাকেই শাস্ত্রজ্ঞান বলে সমাজে চালায়।
আল্লাহ্ কখনো নিজের
অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না কিন্তু মানুষ নিজের অঙ্গীকারের কথা ভুলে গিয়ে কেবল পাপ কাজ
করেই চলে। কুরআন মানুষকে সেই পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে যান। যারা পাপ
কাজ করবে তারা জাহান্নামবাসী হয়ে চিরকাল সেখানেই থাকবে তেমনি যারা সৎকাজ করবে তারা
জান্নাতবাসী হয়ে চিরকাল সেখানেই বাস করবে, এই সত্যই কুরআনে বার বার আলোকিত হয়েছে।
পবিত্র কুরআনের জ্ঞান পেলে কোন মানুষ স্বজাতিকে অর্থাৎ মানুষকে খুন করতে পারে না,
গরু কেনো কোন জীবকেই সে হত্যা করতে পারে না, অসৎ পথ অবলম্বন করে জীবন-জীবিকার পথে
সে যেতে পারে না। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও
পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment