Thursday, 21 June 2018

কুরআন সুরা--২ আল- বাকারা ৫১ থেকে ৬০ আয়াত

বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো।[ সুরা—২ আল- বাকারা ৫১ থেকে ৬০ আয়াত]
৫১) যখন মূসার জন্য চল্লিশ রাত্রি নির্ধারিত করেছিলাম তার প্রস্থানের পর তোমরা যখন বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিলে; এতে তোমরা ঘোর অনাচার করেছিলে। ৫২) এরপরও আমি তোমাদের ক্ষমা করেছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। ৫৩) যখন আমি মূসাকে কিতাব ও ফোরকান দান করেছিলাম যাতে তোমরা সৎপথে পরিচালিত হও। ৫৪) আর স্মরণ কর মূসা যখন আপন সম্প্রদায়ের লোককে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি ঘোর অনাচার করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের স্রষ্টার দিকে ফিরে যাও এবং তোমরা নিজেদের সংযত কর। তোমাদের স্রষ্টার নিকট এটাই শ্রেয়। তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু। ৫৫) আর তখন তোমরা বলেছিলে, হে মূসা আমরা আল্লাহ্‌কে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনো বিশ্বাস করব না। যখন তোমরা বজ্রাহত হয়েছিলে তখন তোমরা নিজেরাই দেখেছিলে। ৫৬) তোমাদের মৃত্যুর পর আমি তোমাদেরকে পুনর্জীবিত করলাম যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। ৫৭) আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করলাম, তোমাদের নিকট মান্না ও সলওয়া প্রেরণ করলাম।( আর বলিলাম) যে সকল ভাল জিনিষ তোমাদের জন্য দিলাম তা থেকে আহার কর। তারা (নির্দেশ না মেনে) আমার প্রতি কোন অন্যায় করেনি, বরং তারা নিজেদেরই প্রতি অন্যায় করেছিল। ৫৮) (স্মরণ কর) আমি বললাম, এই জনপদে (শহরে) প্রবেশ কর এবং যা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, নত শিরে ( নগরের দ্বার দিয়ে) প্রবেশ কর এবং বল, ক্ষমা চাই, আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব এবং সৎকর্মপরায়ণদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করব। ৫৯) কিন্তু যারা অন্যায় করেছিল, তাদেরকে যা বলা হয়েছিল তারা তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল। সুতরাং অনাচারীদের প্রতি আমি আকাশ হতে শাস্তি প্রেরণ করলাম, কারণ তারা সত্য ত্যাগ করেছিল। ৬০) আর (স্মরণ কর) যখন মূসা তার সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করল, আমি বললাম, তোমার ‘আছা’ (লাঠি) দ্বারা পাথরে আঘাত কর। ফলে তা থেকে বারটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হল। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানশালা (ঘাট) চিনে নিল। (বললাম) আল্লাহ্‌র দেয়া জীবিকা হতে তোমরা পানাহার কর এবং দেশে অনর্থ (শান্তি ভঙ্গ) করে বেড়িও না।
মূসা হলেন জ্ঞানের প্রতীক আর বাছুর হলো অজ্ঞানের প্রতীক। বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করার অর্থ সত্যজ্ঞানকে অবহেলা করে পার্থিব জগতের চাকচিক্যতায় উন্মত্ত থেকে নিজের জ্ঞান- বুদ্ধি- বিবেককে হারিয়ে পশুত্ববুদ্ধির দাসত্ব করা। মানুষ যখন সত্যজ্ঞানকে হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে তখনি পুনঃ সত্যজ্ঞানের বার্তা নিয়ে মূসার আবির্ভাব ঘটে। এখানেও মূসার মাধ্যমে মানুষকে সৎপথে পরিচালিত হবার কথা বলা হয়েছে। মানুষ যখন নিজের জ্ঞান- বুদ্ধি- বিবেক হারিয়ে ফেলে পার্থিব জগতের সম্পদ দেখে, তখনি সমাজের বুকে অনাচার শুরু হয়। এই অনাচারকে রোধ করার জন্যই মূসার ন্যায় জ্ঞানের প্রতীক স্বরূপ ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে ও তিনিই মানুষকে পুনঃ সংযত করেন জ্ঞানের চাবুক দিয়ে। মূসার হাতে যে জ্ঞান- বিজ্ঞানের লাঠি থাকে তার শক্তি অপরিসীম। তিনি সেই লাঠি দিয়ে যেমন মানুষের অভাব- অভিযোগ দূর করতে সক্ষম হন তেমনি যারা দেশে শান্তি ভঙ্গকারী তাদেরকেও প্রতিহত করেন। আমরা ৫১ থেকে ৬০ আয়াত পাঠ করলেই উপলব্ধি করতে পারবো এ কোন গাল- গল্প নয়—এই আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয়েছে মানুষকে শান্তচিত্তে সত্যজ্ঞান লাভ করে শান্তির পরিমণ্ডলে বাস করার পরিবেশ- পরিস্থিতি তৈরি করে নেওয়ার জন্য। আল্লাহ বাসভূমি থেকে শুরু করে অমৃততুল্য সমস্ত প্রকার খাদ্যের আয়োজন করে রেখেছেন এই পৃথিবীতে মানুষের জন্যে—তাহলে মানুষ কেনো বেইমান হবে? এই বেইমানেরা আল্লাহ্‌র প্রতি কোন অন্যায় করতে পারে না, তারা নিজেদেরই প্রতি চিরকাল অন্যায় করে চলেছে। তাদেরকে মৃত্যুর পরেও তিনি পুনর্জীবন দান করে সৎকর্মশীল মানুষ হবার সুযোগ দেন কিন্তু তারা পূর্বজীবনকৃত অন্যায়ের কথা ভুলে গিয়ে পুনঃ অন্যায় কর্মেই লিপ্ত হয়ে পড়েন। মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করার অর্থ নবজন্ম দান করে পুনঃ সৎ কর্মের সুযোগ দেওয়া, এই সুযোগ একমাত্র আল্লাহ্‌ই দিতে সক্ষম। কিন্তু এই সত্যও অকৃতজ্ঞ- অজ্ঞানী- অবিশ্বাসীরা বিশ্বাস করবে না, কারণ তারা চিরকালই শান্তি ভঙ্গকারীদলভুক্ত হয়েই থাকবে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করেই চলবে নিজ স্বার্থের জন্যে বিভিন্ন পোশাক পড়ে। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।  

1 comment:

  1. পবিত্র কুরআন মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁরা কেউ এই পবিত্র ধর্ম গ্রন্থের অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি করতে পারেন না। তাই তাঁরা কুরআন বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থেকে মানব সমাজে অবিশ্বাসী ও বিশ্বাসঘাতক হয়েই চলেছেন। সেই সাথে সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়ছেন। আমি কুরআনের প্রতিটি আয়াতের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করে সকলকে কুরআনের সত্যতা জানানোর চেষ্টা করছি। আপনারা উদার মন নিয়ে এই পোস্টগুলি পড়লে অবশ্যই সত্যকে জেনে জ্ঞানী হতে পারবেন এবং উদার হয়ে নিজ আত্মার আবদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারবেন। কেউ ধর্মের গোঁড়ামি থেকে মুক্ত না হলে তার প্রতিপালকের কথা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না। আর দেখা যাচ্ছে সারা বিশ্বের মুসলমানেরা সেই গোঁড়ামিতেই আবদ্ধ হয়ে সত্যত্যাগী হয়ে অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন মানব সমাজে। তাঁরা সন্ত্রাসসৃষ্টিকারী দলে পরিণত হয়ে ইসলামকে বিশ্ব থেকে মুছে দেওয়ার কাজে তৎপর হয়ে উঠেছেন। অথচ মুখে প্রচার করছেন ইসলাম বিশ্বে শাস্তি স্থাপন করার জন্যেই সৃষ্টি। মুসলিম সমাজ পরিত্র কুরআনের সত্যতা না জানার জন্যেই তাদের এই অধঃপতন বিশ্বজুড়ে হয়েই চলেছে ধ্বংসকে ত্বরাম্বিত করার জন্যে। অভিনন্দন

    ReplyDelete