বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [
সুরা—২ আল- বাকারা ৯৯ থেকে ১০৩ আয়াত]
৯৯) এবং
আমরা তোমার প্রতি স্পষ্ট নিদর্শন অবতীর্ণ করেছি, বস্তুত অনাচারীগণ ব্যতীত আর কেউই
তা অমান্য করে না।
মর্মার্থঃ—এই
আয়াতে আল্লাহ্ আমি না বলে আমরা বলেছেন। তাই তিনি তাঁর বিশ্বরূপের স্বীকৃতি দিয়ে
বলেছেন, যে সত্য নিদর্শন অবতীর্ণ হয়, তা কেবল অনাচারীগণ ছাড়া কেউই অমান্য করে না।
যুগে যুগে এই অনাচারীগণ ছিল- আছে- থাকবে প্রকৃতির নিয়মে।
১০০) তবে কি যখনই তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে তখনই
তাদের কোন একদল সে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছ? বরং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।
মর্মার্থঃ—বিশ্বের প্রত্যেক জায়গায় কিছু সৎ ও
জ্ঞানী মানুষ থাকে। তারা মানুষকে সৎ ও কল্যাণের পথে আহ্বান করে সঙ্ঘবদ্ধ করার
সাধনা করে। কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ মানুষ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েও অসৎগামী হয়। অধিকাংশ
মানুষ আল্লাহ্র সৎ শক্তির উপর বিশ্বাস রাখতে পারে না, অজ্ঞতার কারণে।
১০১) যখন আল্লাহ্র নিকট থেকে কোন রাসূল আসে, যে
তাদের নিকট যা (আসমানী গ্রন্থ) আছে তার সমার্থক, তখন যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল,
তাদের একদল কিতাবটিকে পিছনের দিকে ফেলে দিল, (অমান্য করল) যেন তারা কিছুই জানে না।
মর্মার্থঃ—সত্যজ্ঞান বা আসমানী গ্রন্থ ছিল- আছে
ও থাকবে। মানুষ সত্যকে নিয়েই এই পৃথিবীর বুকে অবতীর্ণ হয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ
পরিবেশ ও পরিস্থিতির শিকার হয়ে সেই সত্য ভুলে যায়। যারা এই জগতের পরিবেশ ও
পরিস্থিতির শিকার হয় না তারাই মহান হয়ে দেখা দেয় মানুষের চোখে। আল্লাহ্ বা ঈশ্বর
প্রেরিত মানুষ সকলেই, এই সত্যকে জেনে যিনি সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার কাজে নিজেকে
নিয়োজিত করেন তিনিই রাসূল নামে পরিচিতি লাভ করেন। এই বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ সত্যকে
যা শাস্ত্রগ্রন্থ, ধর্মগ্রন্থ, আসমানীকিতাব নামে পরিচিত তাকে ত্যাগ করে দুর্বল
থেকে দুর্বলতম জীবনকেই বেছে নিয়ে অবিশ্বাসী, অজ্ঞ, পামর, পাষণ্ডের ন্যায় অসৎ
কর্মের দিকেই ছুটে যায় এবং বিশ্বে অশান্তির সৃষ্টি করে, অথচ তারা নিজেদের এই
কৃতকর্মের কিছুই জানে না সত্যজ্ঞান না থাকার কারণে।
১০২) এবং সুলায়মানের রাজত্বে শয়তানরা যা আবৃত্তি
করত তারা তা অনুসরণ করত। অথচ সুলায়মান সত্য প্রত্যাখ্যান করেননি বরং শয়তানরাই
অবিশ্বাস করেছিল। তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত এবং যা বাবেল শহরে হারুত ও মারুত
ফিরিশতাদ্বয়ের উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তারা
তার অনুসরণ করত। আমরা ( হারুত ও মারুত) পরীক্ষাস্বরূপ, সুতরাং তোমরা সত্য
প্রত্যাখ্যান করো না, এ কথা না বলে তারা ( হারুত ও মারুত) কাকেও শিক্ষা দিত না।
তবুও দুজন হতে তারা এমন বিষয় শিখত যা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ
আল্লাহ্র নির্দেশ ছাড়া তারা কারও কোন ক্ষতিসাধন করতে পারত না। তারা যা শিক্ষা করত
তা তাদের ক্ষতিসাধন করত এবং কোন উপকারে আসত না। আর তারা নিশ্চিতভাবে জানত যে, যে
কেউ তা (যাদু বিদ্যা) ক্রয় করে পরকালে তার কোন ঠাই নেই। আর তারা যার পরিবর্তে
আত্মবিক্রয় করেছে তা নিতান্তই জঘন্য, যদি তারা জানত।
মর্মার্থঃ---
সত্যজ্ঞানী সুলায়মানের রাজত্বেও দুই শ্রেণির মানুষ ছিল। প্রথম শ্রেণির মানুষ
সত্যজ্ঞানী হয়ে সৎ ও কল্যাণের পথে মানুষকে সঙ্ঘবদ্ধ করার কাজে লিপ্ত থাকতেন।
দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ ছিল শয়তানী বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। যারা যাদু দেখিয়ে অর্থাৎ ভাওতাবাজীর খেলা
দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতো এবং মানুষের কাছ থেকে ছলে- বলে –কৌশলে ধন সম্পদ
লুটে নিতো। এই রূপ চরিত্রের শয়তানী বুদ্ধিসম্পন্ন নেতা যুগে যুগে ছিল- আছে ও
থাকবে। বাবেল শহরে অর্থাৎ এই বিশ্বে দুজন ফিরিশতা ( হারুত ও মারুত) বা দেবতার উপর এই যাদুবিদ্যা বা ভাঁওতাবাজি
বিদ্যার উপর নজরদারি রাখার দায়িত্ব ছিল। তাঁরা এই বিদ্যার সব তত্ত্ব জানতেন, তার
কারণ নিজে না জানলে অপরকে ধরা যায় না এবং তার সম্পর্কে সত্য তথ্যও আল্লাহ্র
দরবারে পেশ করা সম্ভব হয় না। তারা তাই কতিপয় মানুষকে এই শিক্ষা দিয়ে মানুষের এই
কীর্তিকলাপ দেখার শক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদেরকে এই বিদ্যা প্রয়োগ করে তাদের মতো
হতে দেন নি। অসৎ পথে শয়তানী বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে মানুষকে ঠকিয়ে ধন- সম্পদের মালিক
হলে সেই পরিবারে স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্কে বিচ্ছেদ হবে প্রকৃতির নিয়মে। এখানে
হারুত ও মারুত দুই ফিরিশতা ইচ্ছা করলে নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করে
শয়তানীবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষগুলির ক্ষতি করতে পারতেন কিন্তু আল্লাহ্র নির্দেশ
ব্যতিরেকে ফিরিশতারা কোন কাজ করার শক্তি পান না। বর্তমানে এই পৃথিবীর বুকে ৮৫০
কোটি মানুষের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ যাদুবিদ্যার অধীনে থেকেই জীবন যাপন করছে।
যাদুবিদ্যা বা শয়তানী বুদ্ধি ক্রয় যে যত করতে পারবে এই জগতে সে তত বিত্তমান-
বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান বলে বিবেচিত এবং তার সাথেই
লোকবল বেশী। এরা কি জঘন্য! আত্মবিক্রয় করে যাদুবিদ্যা বা শয়তানীবিদ্যা ক্রয়
করে কেবল নিজের আত্মাকে কলুষিত করে না, বিশ্বকে অগ্নিগর্ভ করে রাখে ও মানুষকে
সত্যমুখী হয়ে চলতে বাধা দেয়।
১০৩) আর
যদি তারা বিশ্বাস করত এবং সদাচারী হত, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ্র কাছে উত্তম পুরষ্কার
পেত, যদি তারা জানত।
মর্মার্থঃ—অধিকাংশ মানুষ নিজের জীবনের সত্যকে
জানার চেষ্টা করে না। যদি মানুষ নিজেকে
মিথ্যার কাছে বিক্রয় না করে তবেই সে সত্যে স্থির থাকতে পারবে। সদাচারী হয়ে জীবন সত্যকে
বিশ্বাস করলেই মানুষের অন্তরের আবদ্ধ দুয়ারগুলি খুলে যায় স্বাভাবিক নিয়মে। তখনি
মানুষের জীবনে নেমে আসে আল্লাহ্ বা ঈশ্বরের করুণা ধারা। এই উত্তম পুরষ্কার যেন
প্রচণ্ড তাপদাহের ভূমিতে বারিবর্ষণ। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের
জ্যোতিঃর জয়।
No comments:
Post a Comment