Thursday, 14 June 2018

কুরআন আল- ফাতিহা ১ থেকে ৭ আয়াত

বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। (সুরা ফা- তিহ্বাহ—আয়াত ১থেকে৭)
১। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য। ২। যিনি পরম করুণাময়, পরম দয়ালু। ৩। (যিনি) কর্মফল দিবসের মালিক,৪। আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। ৫। আমাদের সরল সঠিক (সত্য) পথে চালিত করুন, ৬। তাঁদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ দান করেছেন, ৭। যারা আপনার ক্রোধে পড়েনি এবং বিপথে যায়নি।( হে মালিক! আমাদের এ প্রার্থনা গ্রহণ করুন!)।
পবিত্র কুরআনের শুরু উপরের সাতটি  পবিত্র সংকল্প স্বরূপ আয়াত বা বাক্য দিয়ে।  এই সাতটি আয়াত-ই হচ্ছে জীবনের মন্ত্র তার স্রষ্টাকে জানার জন্যে ও তাঁর আশ্রয় লাভ করে ধন্য হবার জন্যে। আল্লাহ শব্দটির বাংলা অর্থ—আল+ ইলাহ মানে পবিত্র সত্তা। পবিত্র সত্তা বলতে পরমপিতা, পরমেশ্বর, পরমাত্মা, ঈশ্বর,গড ইত্যাদি পরম গুণের নামকে বুঝায়, এই পবিত্র গুণের নাম ভাষা-স্থান- কাল- পাত্র- পরিবেশ অনুযায়ী বিভিন্ন নাম পেতে পারে। যিনি বিশ্বজগতের সবার প্রতিপালক তিনি যে বিভিন্নজনের কাছে বিভিন্ন নামে পূজিত হবেন বা প্রশংসা পাবেন, এই সত্যকে প্রত্যেক বুদ্ধিমান মানুষ স্বীকার করেনযিনি পরম করুণাময় ও পরমদয়ালু। তিনি কখনো কারো প্রতি নিষ্ঠুর হতে পারেন না। কিন্তু মুসলিম সমাজে করুণা –দয়া ইত্যাদি গুণকে পরিহার করে বেশী করে নিষ্ঠুরতা ও সন্ত্রাসকে স্থান দেওয়া হয়ে থাকে। বড় বড় শিক্ষিত মানুষ নিজের দলভারী করার জন্যে ও নিজের নাম- যশ প্রতিষ্ঠার জন্যে সারা বিশ্বজুড়ে এই কাজে লিপ্ত। তাহলে কি এরা পবিত্র কুরআনের বাণীকে অবজ্ঞা করেন? যিনি কর্মফল দিবসের মালিক তাঁকে অবজ্ঞা করে কিভাবে এঁরা মানুষকে খুন করতে পারেন বা শাস্তি দিতে পারেন নিজের হাতে ক্ষমতা নিয়ে? যারা নিজেদেরকে সহজ- সরল – সত্য পথে চালিত করার জন্যে দিনমানে কতবার আজান দেন, নামাজ পড়েন, তাঁদেরকে তো দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীত পথে চলতে। তাঁরা নিজেদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছেন না, কর্মফল দিবসের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেও পারছেন না, আল্লাহকে অবজ্ঞা করে নিজেদের হাতেই বিচার ক্ষমতা নিয়ে নিচ্ছেন এবং বিশ্বের বুকে এক অত্যাচারী ও সন্ত্রাসবাদী সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েই চলেছেন। তাঁদের কার্য্যকলাপ দেখে মনে হতেই পারে আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতিপালক নন তাঁদের কাছে। আজকে সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশে আল্লাহ্‌র নাম করে যত রকম খুন- খারাপি- ধর্ষণ ও অমানবিক অন্যায় অত্যাচার হচ্ছে এর ফলে কি তাঁরা আল্লাহ্‌র ক্রোধে পড়ে বিপথে যাচ্ছেন না? আল্লাহ্‌র নাম করে যে অত্যাচারী ও সন্ত্রাসবাদী সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়ে, এর প্রতিবাদ কেনো ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত মানুষরা করছেন না? উলটে দেখা যাচ্ছে এই সম্প্রদায়ের মানুষরা তাঁদেরকেই নিরবে বিভিন্নভাবে সমর্থন করে চলেছেন এবং আল্লাহ্‌ বিরোধী কার্য্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়ছেন। এবার আপনারই বলুন কিভাবে আল্লাহ্‌ আপনাদের প্রার্থনা গ্রহণ করবেন? অন্যায়কারী ও অন্যায়কারীর সমর্থক দুজনই পথভ্রষ্ট, আল্লাহ্‌র বিচার সভায় শাস্তিরযোগ্য এবং তাঁরা সকলেই আল্লাহ্‌র ক্রোধে পড়ে বিপথে চালিত হচ্ছেন, এতে কোন ভুল নেই। পরিশেষে বলি পবিত্র কুরআনের এই সাতটি আয়াত কোন মানুষ নিজের জীবনে আচরণ করলে, তিনি কোনদিন নিষ্ঠুর হয়ে একটা পিঁপড়েও বধ করতে পারবেন না, তার কারণ সকলেই তো এক  বিশ্বজগতের প্রতিপালকের আশ্রয়ে থাকেন, তাই সকলেই তাঁর আত্মীয় এই বোধ জন্মাবেই,  তাঁর কাছে  তখন সকলেই সমান হয়ে দেখা দিবে, সৃষ্টির সকলেই তো তাঁর আশ্রয়ে রয়েছেন, এটাও তিনি জ্ঞানচক্ষুতে দেখতে পাবেন। আর যারা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের আশ্রয়ে থেকে কর্ম করেন তাঁরা সকলেই বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী, তাঁরা কেউ কোন সংকীর্ণ সম্প্রদায় – দল- মত- ধর্মের আশ্রয়ে থাকতে পারেন না। জয় বিশ্বমানব শিক্ষার জয়। জয় পবিত্র কুরআনের জ্যোতিঃর জয়।  

No comments:

Post a Comment