বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো।[ সুরা—আল-বাকারা
২১ থেকে ২৮ আয়াত।]
২১) হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের
ইবাদত কর যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা
আত্মরক্ষা করতে পার। ২২) যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন
এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তদ্দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল- মূল উৎপাদন করেন।
সুতরাং জেনে শুনে কাউকে আল্লাহ্র সমকক্ষ দাঁড় করোও না। ২৩) আমি আমার বান্দার
প্রতি( মোহাম্মদের প্রতি) যা অবতীর্ণ করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা
তার অনুরূপ কোন সুরা আনয়ন কর এবং তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে আল্লাহ্ ব্যতীত
তোমাদের সকল সাক্ষীকে আহ্বান কর। ২৪) যদি তোমরা (আনয়ন) না কর, এবং কখনই করতে পারবে
না, তবে সেই আগুনকে ভয় কর, মানুষ এবং পাথর হবে যার ইন্ধন, অবিশ্বাসীদের জন্য যা
প্রস্তুত হয়েছে। ২৫) যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তাদেরকে শুভ সংবাদ দাও যে,
তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, যখনই তাদেরকে ফল মূল খেতে
দেয়া হবে, তখনই তারা বলবে, আমাদেরকে পূর্বে জীবিকা রূপে যা দেয়া হত এ তো তাই,
তাদেরকে ইচ্ছানুরূপ ফলই দেয়া হবে এবং সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী থাকবে,
অধিকন্তু তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। ২৬) আল্লাহ মশা কিংবা তাঁর চেয়ে ক্ষুদ্রতর
কোন বস্তুর উদারণ দিতে সংকোচ বোধ করেন না, সুতরাং যারা বিশ্বাসী তারা জানে যে, এ
সত্য উদাহরণ তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে এসেছে; কিন্তু যারা অবিশ্বাস করে তারা
বলে যে, আল্লাহ্ কী অভিপ্রায়ে এমন একটি উদাহরণ দিয়েছেন? এতদ্বারা তিনি অনেককেই
বিভ্রান্ত করেন, আবার বহু জনকে সৎপথে পরিচালিত করেন। বস্তুত তিনি সৎপথ
পরিত্যাগকারীদের ছাড়া আর কাকেও বিভ্রান্ত করেন না। যারা আল্লাহ্র সাথে দৃঢ়
অঙ্গীকারে আবদ্ধ হবার পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ আদেশ
করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তারাই ক্ষতিগ্রস্থ।
২৮) তোমারা কি করে আল্লাহ্কে অস্বীকার কর? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি
তোমাদেরকে প্রাণ দিয়েছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং পুনরায় জীবন্ত করবেন,
পরিণামে তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরতে হবে।
এখানে মানব জাতিকে আল্লাহ্ আত্মরক্ষার জন্যে
সত্যের পূজা করার কথা বলেছেন। যিনি পৃথিবীকে জীবের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ
করেছেন, সেই সত্য ও পবিত্র সত্তাকে জেনে তাঁর পূজা করতে হবে, তিনিই আকাশ থেকে
বারিবর্ষণ করেন ও জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেন। এখানে মানব জাতিকে মনে রাখতে
হবে আল্লাহ্ বারিবর্ষণ করছেন আকাশ থেকে জীবকুলের খাদ্যের ব্যবস্থা করার জন্যে ও
তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে। আল্লাহ্র রাজত্বে এই বিশাল কর্মযজ্ঞে সূর্য-চন্দ্র-
আকাশ- বাতাস- সাগর থেকে শুরু করে মানবজাতির জ্ঞান- বুদ্ধি শক্তি যুক্ত। মানবজাতি
এই জ্ঞান- বুদ্ধি- শক্তি কোথা থেকে পাচ্ছেন, তাঁকে খোঁজ করে কেবল সেই শক্তির পূজা
করার কথায় এখানে বলা হয়েছে। এই শক্তি বা আল্লাহ্র সমকক্ষ কেউ হতে পারে না, এই
কথাও মানবজাতিকে জানানো হয়েছে। এই সত্যকে অস্বীকার করার কারো ক্ষমতা নেই। যারা এই
সত্যকে জেনেও মিথ্যার আশ্রয় নেই, তাদের ভয় সেই আগুনকে, মানুষ এবং পাথর হবে যার
ইন্ধন, অবিশ্বাসীদের জন্য যা প্রস্তুত রয়েছে। এখানে যারা মানুষকে অবিশ্বাস করবে
তাদেরকেই অবিশ্বাসী বলা হয়েছে এবং এদের জন্যেই তৈরী হবে আগ্নেয়াস্ত্র, মানুষ পাথর
দিয়ে তা তৈরি করবে মানুষকেই মারার জন্যে। যে দৃশ্য সকল মানুষ দেখছে বিশ্বজুড়ে।
এখানে ২৫ নং আয়াতে আল্লাহ্ স্পষ্ট করে বলেছেন—যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে
তাদেরকে শুভ সংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত,
যখনই তাদেরকে ফল মূল খেতে দেয়া হবে, তখনই তারা বলবে, আমাদেরকে পূর্বে জীবিকা রূপে
যা দেয়া হত এ তো তাই, তাদেরকে ইচ্ছানুরূপ ফলই দেয়া হবে এবং সেখানে তাদের জন্য
পবিত্র সঙ্গিনী থাকবে, অধিকন্তু তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এই আয়াত অনুসারে
সৎকর্মশীল মানুষ ছাড়া কেউ মুসলমান হতেই পারে না। আরও এখানে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে
মানবাত্মা ছিল- আছে ও থাকবে, তার ইচ্ছানুরূপ কর্মফলকে নিয়ে, স্বর্গে, মর্ত্যে
কিংবা পাতালে। আল্লাহ্র যেমন পবিত্র ও সৎ সঙ্গের অভাব নেই, তেমনি সৎ ও পবিত্র
আত্মার সৎ ও পবিত্র সঙ্গের অভাব হয় না ত্রিলোকের সে যেখানেই থাক। জান্নাত আকাশ,
পাতাল তলদেশে প্রবাহিত নদী ও মর্ত্য অমৃতময় খাদ্য যোগানের পবিত্র স্থান আত্মার
জন্যে। অবিশ্বাসী, মিথ্যাবাদী, অজ্ঞানী, কদাচারী ও অহংকারী মানুষ মশার ন্যায় কেবল
সংক্রামক রোগ ছড়ায় কিন্তু তারা তা জানতে পারে না, যেমন মশা তার নিজের কর্মের কথা
না জেনে আনন্দে গান করতে করতে জীবের রক্ত চুষে খায় ও রোগ ছড়ায়। তেমনি অধিকাংশ
মানুষ নিজের ধর্মের কথা না জেনে মশা- মাছির ধর্ম পালন করে জীবিকা অর্জনের জন্যে।
মানুষ যদি নিজের ধর্ম সত্যকে ও সৎ পথকে ত্যাগ করে তখনি সে নিজের ধর্ম নিয়ে
বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। আল্লাহ্ এইভাবেই বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেন আবার অনেক
সহজ- সরল সঠিক পথে চালিত করেন। যারা এই পৃথিবীতে অশান্তির রোগ ছড়ায় তারা যে
ক্ষতিকারক জীব তা এখানে স্পষ্ট। আল্লাহ্ তিনিই এখানে জীবের পুনর্জন্মের কথা
বলেছেন। এখানে সবায় ছিল প্রাণহীন বস্তু বা পদার্থ। তিনিই নিজের প্রাণ থেকে সবায়কে
প্রাণ দান করে জীবন্ত করেন আবার মৃত্যু ঘটান, আবার পুনর্জন্ম দেন, এইভাবে জন্মের
পর জন্ম দিয়ে তাকে অবশেষে নিজের কাছে ফিরিয়ে নেন। যদি তিনি এই সুযোগ না দিতেন তবে
কেউ নিজেকে সংশোধন করে সৎ পথের অনুসারী হয়ে তাঁর কাছে ফিরে যেতে পারতেন না।
জান্নাত হচ্ছে আলোময় জগৎ আর নরক হচ্ছে অন্ধকারময় জগৎ। জন্মান্তরবাদ যদি তাঁর
রাজত্বে না থাকতো তবে অধিকাংশ জীবকেই চিরকাল অন্ধকারময় জগতেই পড়ে থাকতে হতো। জয়
বিশ্বমানব শিক্ষার জয়। জয় পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
কুরআন হলো জ্ঞান সূর্যের আলো। এই আলোতে স্নান না করলে কেউ পবিত্র হতে পারবে না এবং এর রাজত্বে গিয়ে পূর্ণ বিশ্বাসী হয়ে এর অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি করে জীবনের সাথে সেই আলোকে যুক্ত করে কুরআনের আলোতে আলোকিত হতে সক্ষম হবে না। সকলকে জানাই অভিনন্দন।
ReplyDelete