বিশ্বমানব
শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [সুরা—২ আল- বাকারা ৯৪ থেকে ৯৮ আয়াত]
৯৪) বল,
যদি আল্লাহ্র নিকট পরকালের বাসস্থান, অন্য লোক ব্যতীত বিশেষভাবে শুধু তোমাদের
জন্যই হয়, তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি সত্যবাদী হও।
মর্মার্থঃ—এই
আয়াত নিয়ে আলোচনা করলেই জানা যায়, ঈশ্বরের দরবারে পরকালে যে বাসস্থান রয়েছে, তা
সকলের জন্যেই রয়েছে, এখানে কোন সম্প্রদায়ের জন্য তা সীমাবদ্ধ নয়। যারা সত্যবাদী
হবে তারা অবশ্যই এই দেহ বিনাশের কথা চিন্তা করে সত্যপথকেই ধারণ করে এগিয়ে যাবে।
কিন্তু এই পৃথিবীতে এসে কজন লোক নিজের মৃত্যু কামনা করে, এটাই জীবনের চরম সত্য বলে
মেনে নিয়ে সৎ- সত্য- সুন্দর ও জ্যোতির্ময়ের দিকে এগিয়ে যায়? ৯৫) কিন্তু তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য কখনও তা
(মৃত্যু) কামনা করবে না। এবং আল্লাহ্ সীমালংঘনকারীদের সম্বন্ধে জ্ঞাত।
মর্মার্থঃ—অন্যায়কারী
মানুষ নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হয়ে দেখা যায় নিজেকে বাঁচাবার জন্যে যতরকম
অন্যায় পথ আছে তার দিকে ধাবিত হয়। এই সব মানুষের অন্তরের কথা আল্লাহ্ ভালভাবেই
জানেন। এরাই হলো সীমালঙ্ঘনকারীর দল। এরা কিভাবে পরকাল বা পরজন্মে আল্লাহ্র কাছে
সুবিচার আশা করতে পারে? এদের জন্যই তো রয়েছে নরকের শাস্তি।
৯৬) তুমি নিশ্চয় তাদেরকে জীবনের প্রতি সমস্ত
মানুষ, এমনকি মুশরিকদের অপেক্ষা অধিকতর লোভী দেখতে পাবে। তারা প্রত্যেকে হাজার বছর
বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা করে, কিন্তু দীর্ঘায়ু তাদেরকে শাস্তি হতে দূরে রাখতে পারবে
না। তারা যা করে আল্লাহ্ তার সম্যক দ্রষ্টা।
মর্মার্থঃ—এই
পৃথিবী কারো চিরস্থায়ী বাসভূমি নয়। এটা কর্মভূমি ও জ্ঞানপীঠ। এই সত্য জানা সত্যেও
মানুষ সৎকাজ করে অন্তরে জ্ঞানের বাতি প্রজ্বলিত করার সাধনা করে না। এই বিশ্বের
অধিকাংশ নামী-জ্ঞানী মানুষেরাও মুশরিক বা অজ্ঞদের থেকেও বেশী আসক্ত হয়ে পড়ে এই
পার্থিব জগতের সম্পদের চাকচিক্যতার প্রতি। আল্লাহ্ এদের ব্যাপারে সম্যকভাবেই
জানেন ও তাদের কার্য্যকলাপ দেখেন। যে যত এই জগতের সম্পদের প্রতি আসক্ত হবে সে তত
বেশী এমনকি হাজার বছর বাঁচার আকাঙ্ক্ষা করবে। এসব লোক পরকাল- পরজন্ম বিশ্বাস করে
না, এরা সম্পূর্ণ ভোগে বিশ্বাসী। এই সব মানুষ কি নিজেকে শাস্তি থেকে মুক্ত রাখতে
পারবে?
৯৭) (হে নবী) বল, যে জিব্রাঈলের শত্রু হবে সে
জেনে রাখুক, সে (জিব্রাঈল) আল্লাহ্র নির্দেশে তোমার হৃদয়ে কুরআন পৌঁছে দেয়, যা
তার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের ( ধর্ম কিতাবের) সমর্থক এবং বিশ্বাসীদের জন্য যা পথ
প্রদর্শক ও শুভ সংবাদ।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্ বা ঈশ্বরের রাজত্বে ফিরিশতা
বা দেবতার শেষ নেই। মানুষের অন্তরের সাথে সেই সব ফিরিশতা বা দেবতা যোগসূত্র স্থাপন
করে রাখেন। জিব্রাঈল হলেন জ্ঞানের বাহক ফিরিশতা বা দেবতা। তিনিই মানুষের হৃদয়ে
জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেন। মানুষ যখন ধর্মীয় গ্রন্থগুলি পাঠ করে বা শুনে তখনি জ্ঞানের
দেবতা জেগে উঠেন হৃদয় মন্দিরে কুরআন বা আলো নিয়ে। তাই বিশ্বাসী মানুষের জন্য ধর্মীয় গ্রন্থগুলি পথ প্রদর্শক ও
শুভ সংবাদ দাতা রূপে কাজ করে।
৯৮) যারা আল্লাহ্র ফিরিশতাগণের (দূত),
রাসুলগণের (প্রেরিত পুরুষ), জিব্রাঈল ও মীকাঈলের শত্রু হবে তারা জেনে রাখুক,
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অবিশ্বাসীদের শত্রু।
মর্মার্থঃ—
এর আগেই বলা হয়েছে আল্লাহ্ বা ঈশ্বরের রাজত্বে ফিরিশতা বা দেবতার সংখ্যা অগণিত।
তেমনি রাসুলের সংখ্যারও শেষ নেই। জ্ঞানদাতা, বুদ্ধিদাতা, সম্পদদাতা, শক্তিদাতা,
জীবনদাতা প্রভৃতি ফিরিশতা কাজ করে চলেছেন এই পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্র নির্দেশ মান্য
করে। মানুষের মঙ্গলের জন্যে এঁরা সকলেই দৃশ্য ও অদৃশ্য রূপ ধারণ করে কাজ করে
চলেছেন। এঁদেরকে যারা অবিশ্বাস করবে এবং এঁদের শত্রুতা করবে তারা তো অবিশ্বাসীদের
দলভুক্ত হয়ে আল্লাহ্র ক্রোধে পড়ে শাস্তি ভোগ করবেই, এতে কোন ভুল নেই। জয়
বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment