বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো।[ সুরা-২
আল—বাকারা আয়াত ২৯ থেকে ৪০]
২৯) তিনি পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন, তারপর
তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেন এবং তা (আকাশকে) সপ্তাকাশে বিন্যস্ত করেন, তিনি
সকল বিষয়ে সবিশেষ জ্ঞাত। ৩০) আর (স্মরণ কর) যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদের বললেন,
আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি, তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি
করবেন যে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসাসহ মহিমা ও
পবিত্রতা ঘোষনা করি। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি যা জানি তোমরা তা জাননা। ৩১) এবং
তিনি আদমকে সমস্ত নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সেগুলো ফিরিশতাদের সামনে প্রকাশ করলেন
এবং বললেন, এগুলোর আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। ৩২) তারা বলল, আপনি
মহান, পবিত্র। আপনি আমাদের যা শিক্ষা দিয়েছেন তাছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞানই নেই।
নিশ্চয় আপনি জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।৩৩) তিনি বললেন, হে আদম! ওদেরকে (ফিরিশিতাদের)
এদের(এ সবের) নাম বলে দাও। যখন সে তাদেরকে সেগুলোর নাম বলে দিল (তখন) তিনি বললেন,
আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয় সম্বন্ধে আমি জ্ঞাত
এবং তোমরা যা ব্যক্ত কর বা গোপন রাখ নিশ্চিতভাবে আমি তা জানি? ৩৪) যখন ফিরিশতাদের
বললাম, আদমের প্রতি নত হও, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই নত হল; সে অমান্য করল ও অহংকার
করল। সুতরাং সে অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হল। ৩৫) এবং আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও
তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর এবং যেথা ইচ্ছা আহার কর, কিন্তু এই বৃক্ষের
নিকটবর্তী হয়ো না; হলে, তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ৩৬) কিন্তু শয়তান
সেখান সেখান থেকে তাদের পদখ্বলন ঘটাল এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদেরকে
বহিষ্কার করল। আমি বললাম, তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে নেমে যাও, পৃথিবীতে
কিছুকালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইলো। ৩৭) অতঃপর আদম তার প্রতিপালকের নিকট
হতে কিছু বাণী প্রাপ্ত হলো। আল্লাহ্ তার প্রতি ক্ষমাশীল হলেন। নিশ্চয় তিনি
অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ৩৮) আমি বললাম, তোমরা সকলেই এ স্থান হতে নেমে যাও।
পরে যখন আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসবে,তখন যারা আমার সৎ
পথের নির্দেশ অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। ৩৯) যারা
অবিশ্বাস করবে ও আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করবে তারাই জাহান্নামী, সেখানে তারা
চিরকাল থাকবে। ৪০) হে বণী ইস্রাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে তোমরা স্মরণ কর, যদ্দ্বারা
আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছি, এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর, আমিও
তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব; এবং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।
২৯ থেকে ৪০ নং আয়াত পাঠ করে জানা যায়, আল্লাহ্
মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি স্বরূপ সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর সব কিছু মানুষের জন্যে তিনি
সৃষ্টি করে পৃথিবীর সাথে সপ্তাকাশ বা সপ্তলোককে যুক্ত করে দিয়েছেন। এই মানুষের
জ্ঞান ফিরিশতাদের ঊর্ধ্বে। তাই তাঁদের জ্ঞানের সাথে মানুষের জ্ঞানের পরীক্ষা নিয়ে
তিনি মানুষকে মহান করে ফিরিশতা সহ আর সকলকে মানুষের প্রতি নত হতে বললেন, সকলেই নত
হলেন কিন্তু ইবলীস নত হলেন না, তিনি আল্লাহ্র প্রতিনিধি রূপে মানুষকে অমান্য
করলেন ও নিজের অহংকার প্রদর্শন করলেন। সেই থেকে ফিরিশতারা আল্লাহ্র দূত, মানুষ
আল্লাহ্র প্রতিনিধি ও ইবলিস বা শয়তান অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হল। এখানে স্পষ্ট
বার্তা আল্লাহ্র তরফ থেকে এই পৃথিবীর বুকে তিন শ্রেণির মানুষ বাস করবে, প্রথম
শ্রেণির মানুষ ফিরিশতারূপে আল্লাহ্র দূতের কাজ করবে, দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ
আল্লাহ্র প্রতিনিধিরূপে সৎপথের পথিক হয়ে থাকবে সকলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, ক্ষমাশীল
ও পরমদয়ালু হয়ে। তৃতীয় শ্রেণির মানুষ হবে অবিশ্বাসী- বিশ্বাসঘাতক। তারা মানুষকে
বিভ্রান্ত করবে, মানুষের কাছে নত হবে না, অহংকার করবে ও সত্যের পরিবর্তে সর্বক্ষেত্রে
মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করবে। যে মানুষকে আল্লাহ্র
প্রতিনিধি জেনে তার পায়ে ফিরিশতা বা দেবতারা নত হয়, আল্লাহ্র নির্দেশকে মান্যতা
দিয়ে, সেই মানুষকে খুন করে কারা রক্তপাত ঘটাচ্ছে, কেনো ঘটাচ্ছে তা চিন্তা করলেই
মানুষ সহজেই জানতে পারবে। এখানে পৃথিবী সহ সপ্তাকাশ জুড়ে আল্লাহ্র রাজত্ব, মানুষ
তাঁর রাজ্যের প্রতিনিধি মাত্র। তাহলে তাঁর প্রতিনিধি হয়ে কেউ কি তাঁর রাজত্বকে
নিজেদের জন্যে আলাদা করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করতে পারেন? যেদিন থেকে মানুষ তাঁর
প্রতিনিধি হয়ে নিজের কামনা- বাসনার জন্যে কাজ করতে শুরু করেছে সেদিন থেকেই তাদের
পতন শুরু হয়েছে। কুরআন হচ্ছে মানুষের ভুলে যাওয়া আলোর বর্তিকা। এখানে মানুষকে কেবল
বিভিন্নভাবে সৎ পথের নির্দেশ অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। মানুষের সাথে আল্লাহ্র
অঙ্গীকার ছিল, সে সৎ পথের অনুসারী হয়ে কেবল তাঁর প্রতিনিধিত্ব করবে পৃথিবী ও
সপ্তকাশে। মানুষ তার অঙ্গীকার পূর্ণ করলে তিনিও নিজের অঙ্গীকার পূর্ণ করবেন। সারা
পৃথিবী জুড়ে মানুষের জন্যে মাদ্রাসা, মসজিদ আরও কত প্রকারের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে
ও উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কি একজনও সৎকর্মশীল মানুষ তৈরী হয়ে নিজেকে আল্লাহ্র
প্রতিনিধি রূপে তুলে ধরতে পেরেছেন? কেনো বিশ্বব্যাপী আল্লাহ্র দল সন্ত্রাসবাদী,
মৌলবাদী দলে পরিণত হয়েছে এবং সবথেকে বড় অশান্তি সৃষ্টিকারী দল হয়ে উঠেছে? যারা
আল্লাহ্র নির্দেশে সৎ পথের অনুসারী, সত্যের পূজারী, ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু তারা
কীভাবে সংকীর্ণমনা হয়ে দেশদখলের পরিকল্পনায় প্রতিপদে পদে আল্লাহ্র প্রতিনিধিদের
খুন করতে দ্বিধা করে না? জয় বিশ্বমানব শিক্ষার জয়। জয় পবিত্র কুরআনের জ্যোতির জয়।
পবিত্র কুরআন মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁরা কেউ এই পবিত্র ধর্ম গ্রন্থের অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি করতে পারেন না। তাই তাঁরা কুরআন বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থেকে মানব সমাজে অবিশ্বাসী ও বিশ্বাসঘাতক হয়েই চলেছেন। সেই সাথে সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়ছেন। আমি কুরআনের প্রতিটি আয়াতের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করে সকলকে কুরআনের সত্যতা জানানোর চেষ্টা করছি। আপনারা উদার মন নিয়ে এই পোস্টগুলি পড়লে অবশ্যই সত্যকে জেনে জ্ঞানী হতে পারবেন এবং উদার হয়ে নিজ আত্মার আবদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারবেন। অভিনন্দন
ReplyDelete