বিশ্বমানব
শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [সুরা-২ আল- বাকারা ৪১ থেকে ৫০ আয়াত]
৪১)
তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরূপে আমি যা অবতীর্ণ করেছি তা বিশ্বাস কর। আর
তোমরাই এর প্রথম অবিশ্বাসকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতের বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ
করো না। তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর। ৪২) তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না
এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। ৪৩) তোমরা যথাযথভাবে নামাজ আদায় কর ও যাকাত দাও
এবং যারা অবনত হয় তাদের সঙ্গে অবনত হও। ৪৪) ( কি আশ্চর্য!) তোমরা কি নিজেদের
বিস্মৃত হয়ে মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দাও, অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর! তবে কি
তোমরা বুঝনা? ৪৫) তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর এবং বিনীতগণ
ব্যতীত আর সকলের নিকট নিশ্চিতভাবে এটা কঠিন। ৪৬) (তারাই বিনীত) যারা বিশ্বাস করে
যে, তাদের প্রতিপালকের সাথে নিশ্চিতভাবে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে এবং তাঁরই দিকে তারা
ফিরে যাবে। ৪৭) হে বনী ইসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর যাদ্বারা আমি
তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছি এবং বিশ্বে সবার উপরে তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। ৪৮)
তোমরা সেই দিনকে ভয় কর যেদিন কেউ কারও কোন কাজে আসবে না এবং কারও সুপারিশ স্বীকৃত
হবে না এবং কারও নিকট হতে ক্ষতিপূরণ গৃহীত হবে না এবং তারা কোন প্রকার সাহায্যও
পাবে না। ৪৯) স্মরণ কর, যখন আমি ফির’আউনের সম্প্রদায় হতে তোমাদেরকে নিষ্কৃতি
দিয়েছিলাম, যারা তোমাদের পুত্রগণকে হত্যা করে ও তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রেখে
তোমাদেরকে মর্মান্তিক যন্ত্রণা দিত; এবং তাতে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক মহা
পরীক্ষা ছিল; ৫০) যখন তোমাদের জন্য সাগরকে দুভাগে বিভক্ত করেছিলাম এবং তোমাদের
উদ্ধার করেছিলাম ও ফির’আউনের সম্প্রদায়কে পানিতে ডুবিয়ে ছিলাম, আর তোমরা তা
প্রত্যক্ষ করেছিলে।
প্রত্যেক
মানুষের বড় সম্পদ নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি- বিবেক ও অহংকার, যা তাঁর প্রতিপালকের নিকট
থেকে লাভ করে থাকে, নিজ নিজ স্বভাব অনুসারে। প্রথমেই মানুষকে জানতে হবে, সে হচ্ছে
তাঁর প্রতিপালকের প্রতিনিধি এই পৃথিবীর বুকে। যা তার অন্তরে প্রতিপালকের সম্পদরূপে
আছে তার প্রতি সমর্থন বা আস্থা রেখেই আল্লাহ্র অবতীর্ণ বাণীকে বিশ্বাস করতে হবে
এবং নিজের জ্ঞান- বুদ্ধি- বিবেক ও অহংকারকে তা দ্বারা পবিত্র ও পরিমার্জিত করতে
হবে। এই পথে না গেলেই মানুষ প্রথম থেকেই অবিশ্বাসী হয়ে
পড়বে এবং তার প্রতিপালকের আয়াতের মূল্যবোধ অন্তরে আলোকিত হবে না। এই অবিশ্বাসী
লোকদের কাছে বিশ্বজগতের প্রতিপালক থেকে অবতীর্ণ উপদেশ মূল্যহীন রূপেই থেকে যাবে। অবিশ্বাসী মানুষের অন্তরে ভয়- ভক্তি- বিশ্বাস
কিছুই থাকে না তার প্রতিপালকের প্রতি। ভয় হচ্ছে চরিত্রের সংশোধন করার এক শক্তিশালী
মাধ্যম, অন্তরে ভয় না থাকলে কেউ জাগতিক বিধানকে মান্য করে নিজেকে সংশোধন করতে
সক্ষম হতো না। আগুনকে ভয় না করে কেউ যদি আগুনে ঝাঁপ দেয় তবে তো আগুন তাকে ক্ষমা
করবে না। ঈশ্বরের বিধান হচ্ছে সেই আগুনের ন্যায় জ্ঞান, যা দ্বারা জীবনকে পরিশুদ্ধ
করাও যায়, আবার শেষ করে দেওয়াও যায়।
সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করলে কেউ সত্যের স্বাদ পেতে
পারে না কিন্তু মানুষের স্বভাব নিজের অন্যায় কর্মকে ঢেকে রাখার জন্যে সত্যের সাথে
মিথ্যাকে মিশ্রিত করার অভ্যাস নিয়ে চলা ও জেনে শুনে সত্যকে গোপন করে রাখা। সত্যকে
গোপন করে রাখা মানুষের এক সংক্রামক ব্যাধি। এই ব্যাধি সারা বিশ্বের মানব সমাজে
ছড়িয়ে পড়েছে, নিজের ব্যক্তিগত, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক স্বার্থে সত্যকে গোপন
করে রাখা এখন এক সংক্রামক ব্যাধি সমাজের বুকে।
তোমরা যথাযথভাবে নামায আদায় কর, কার কাছ থেকে তোমরা
নামায আদায় করবে? এখানে নামায আদায় অর্থে সত্যজ্ঞান আদায় করা। এই সত্যজ্ঞান
প্রতিপালকের নিকট থেকে আদায় করে যাকাত দাও, এর অর্থ এখানে সেই সত্যজ্ঞান যাকাত দাও
বা দান কর, যা তুমি নামায আদায় করে পেয়েছো। আর যারা সত্যজ্ঞানদাতার চরণে
অবনত হয় তাদের সাথে তোমরাও অবনত হও। পার্থিব জগতের কোন সম্পদ তোমার নয়, তা যাকাত
হিসাবে দেওয়ারও কারো অধিকার নেই। এই সম্পদ যত তোমরা নিজের অধিকারে রাখবে ততই
তোমাদের অহংকার বাড়বে ও সত্যজ্ঞান থেকে দূরে সরে পড়বে। সেই জন্যেই ৪৪ নং আয়াত
অবতীর্ণ হয়েছে এবং বলা হয়েছে ( কি আশ্চর্য!) তোমরা কি নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে
সৎকাজের নির্দেশ দাও, অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর! তবে কি তোমরা বুঝনা?
সারা বিশ্বজুড়ে মুসলমানেরা ধর্মের নামে ও সৎকাজের নামে
কোটি কোটি ডলার খরচ করে থাকেন সবই হচ্ছে আল্লাহ্ বিরোধী ও পবিত্র কুরআন বিরোধী
কার্যকলাপ। এরা সত্যই কিতাবের প্রকৃত সত্য অর্থ বুঝে না। তাই না বুঝে কেবল অন্যায়
ও অসৎ কর্ম করে চলে ধর্মের নামে।
৪৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে—তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে
সাহায্য প্রার্থনা কর এবং বিনীতগণ ব্যতীত আর সকলের নিকট নিশ্চিতভাবে এটা কঠিন, ৪৬ নং
আয়াতে বলা হলো—(তারাই বিনীত) যারা বিশ্বাস করে যে, তাদের প্রতিপালকের সাথে
নিশ্চিতভাবে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে এবং তাঁরই দিকে তারা ফিরে যাবে। এই দুটি আয়াত
গবেষণা করলেই উপলব্ধি করা যায় ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্যের প্রার্থনার অর্থ,
ধৈর্য ধরে জ্ঞানের দ্বারা সত্যকে জানতে হবে, বিনীতগণ বা শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি ছাড়া
এই পথে কেউ সিদ্ধি লাভ করতে সক্ষম নয়। নামাজ আদায় করার অর্থ সত্যজ্ঞান আদায় করা
প্রতিপালকের নিকট থেকে। এই সত্য জেনে কয়জন মুসলমান নামায
আদায় করেন বা পড়েন, সেই সাথে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ এর আয়োজন করেন? বেশিরভাগ
মুসলমান তো জানেন যে তাঁদের প্রতিপালকের কোন মূর্তি নেই, তবে মূর্তিহীন
প্রতিপালকের সাথে তাদের সাক্ষাৎ কিভাবে ঘটতে পারে? তাই বিশ্বজগতের প্রতিপালকেরও যে
রূপ- গুণ সবকিছুই আছে এবং পরিশেষে তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে, তাই আগে থেকে যদি
তাঁর সাথে পরিচয় না হয় তবে কিভাবে তাঁকে চিনবে এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের বুকে? তাই
নিজেকে বিশাল রূপেই গড়ে তুলতে হয় তাঁর কৃপা লাভ করে তাঁর সমীপে থেকে। বিশ্বজগতের
প্রতিপালক তিনিই মানুষকে বিশ্বে সবার উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, তা তিনি বনী
ইসরাঈলকে অনুগৃহীত করেছিলেন সেই বার্তার মাধ্যমে এখানে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে
আরও জানিয়েছেন অত্যাচারী সম্প্রদায় ফির’আউনদের কথা। তারা পুরুষদের হত্যা করতো,
তাদের পুত্রদের হত্যা করতো নারীদেরকে জীবিত রেখে, নিজেদের সম্প্রদায়কে বৃদ্ধি করে
অপর সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্যে। এই বার্তার মধ্যে রয়েছে তোমাদের
বলতে মুসলমানদের জন্যে রয়েছে এক মহা পরীক্ষা। বর্তমানে মুসলমান সম্প্রদায়
ফির’আউনের সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছে। ফির’আউন সম্প্রদায়কে তাদের পাপের শাস্তি ভোগ
করতে হয়েছিল সমুদ্রের পানিতে ডুবে তাদের প্রতিপালকের বাণীকে উপেক্ষা করার জন্যে।
মুসলমান সম্প্রদায় কি সেই দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে না তাদের প্রতিপালকের বানীকে উপেক্ষা
করে? জয় বিশ্বমানব শিক্ষার জয়। জয় পবিত্র কুরআনের জ্ঞানের জয়।
পবিত্র কুরআন মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁরা কেউ এই পবিত্র ধর্ম গ্রন্থের অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি করতে পারেন না। তাই তাঁরা কুরআন বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থেকে মানব সমাজে অবিশ্বাসী ও বিশ্বাসঘাতক হয়েই চলেছেন। সেই সাথে সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়ছেন। আমি কুরআনের প্রতিটি আয়াতের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করে সকলকে কুরআনের সত্যতা জানানোর চেষ্টা করছি। আপনারা উদার মন নিয়ে এই পোস্টগুলি পড়লে অবশ্যই সত্যকে জেনে জ্ঞানী হতে পারবেন এবং উদার হয়ে নিজ আত্মার আবদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারবেন। অভিনন্দন
ReplyDeleteকুরআন হলো জ্ঞান সূর্যের আলো। এই আলোতে স্নান না করলে কেউ পবিত্র হতে পারবে না এবং এর রাজত্বে গিয়ে পূর্ণ বিশ্বাসী হয়ে এর অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি করে জীবনের সাথে সেই আলোকে যুক্ত করে কুরআনের আলোতে আলোকিত হতে সক্ষম হবে না। সকলকে জানাই অভিনন্দন।
ReplyDelete