বিশ্বমানব
শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান(১৮৪) তারিখঃ—২৯/ ০১/ ২০১৮
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞের মাধ্যমে
মানব জীবনকে সর্বদা কর্তব্য কর্মে মুখর করে রাখবে, কিন্তু শত কর্ম ব্যস্ততার মধ্যে
থেকেও নিজেকে সর্ব কর্ম থেকে মুক্ত রাখবে।]
পৃথিবীর
বুকে মানুষ মায়া বশে কর্ম করতে গিয়ে কর্মে আবদ্ধ হয়ে মোহ অন্ধকারে ডুবে যায়। এই
অবস্থায় তার সমস্ত কর্ম অজ্ঞান দ্বারা আচ্ছন্ন থাকে। ফলে সর্বদা অহংকারে মত্ত হয়ে
ভাবে ‘ আমিই এই কর্মের কর্তা’। এই কর্ম তার জীবনকে বিষময় করে তোলে। নিজের পাপে
নিজে জড়িত হয়ে কর্মফলের আশা করতে গিয়ে নিরাশায় শেষে ভুগতে হয়। এই রূপ লোকের দ্বারা
নিজের বা অন্যের কোন উপকার আশা করা যায় না। আবদ্ধ অবস্থায় কর্ম করার মধ্যে
ক্লান্তি আসে, অলসতা, ভয়, লজ্জা প্রভৃতি এসে কর্মের আসল উদ্দেশ্যকে নষ্ট করে দেয়
কিন্তু মুক্ত অবস্থায় কর্ম সব কিছুর উর্ধ্বে থেকে সব কর্মের মধ্যেই সফলতার আনন্দ
এনে দেয়।
বর্তমান
কালে কোটির মধ্যে গুটি ব্যতিরেকে সকলেই মোহ অন্ধকারে ডুবে কর্ম করে চলেছে। ফলে
তাদের সমস্ত কর্ম-ই ফল প্রসব করে এবং প্রতিনিয়ত তাদের আরও মোহ অন্ধকারে ডুবিয়ে
দিতে থাকে ও বিশ্বপরিবেশকে দুষিত করতে থাকে। তারা নিজেরাই বুঝতে পারে না—তারা কি
করছে ও কিভাবে বিশ্বপরিবেশকে নিজেদের কর্ম দ্বারা দুষিত করে তুলছে ও নিজের সাথে
সাথে অপরকেও সেই নরকের পথে নিয়ে যাবার জন্য সর্বদা টানাটানি করছে।
কর্ম
ছাড়া জীব এক মুহূর্ত বাঁচতে পারে না। অজ্ঞানীর কর্ম দ্বারা বিশ্বপরিবেশ দুষিত হয়
এবং আবর্জনায় বিশ্ব ছেয়ে যায়। জ্ঞানীর কর্মে বিশ্বপরিবেশ দূষণ মুক্ত হয় এবং জমে
থাকা সব আবর্জনা পরিষ্কার হয়ে যায়। জ্ঞানী সর্বদায় মুক্ত পুরুষ। তাকে কোন কর্মের
বন্ধন আবদ্ধ করতে পারে না, তাই তার কর্মের দ্বারা কোন প্রকার পরিবেশ দূষণের ভয়
থাকে না। কর্মকে কর্তব্য জেনে জ্ঞান দ্বারা তাকে পবিত্র করে জ্ঞানী কেবল নিত্য
কর্ম করে পরিবেশ ও পরিস্থিতির শিকার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য। ফলের আশা
জ্ঞানীকে আবদ্ধ করতে পারে না। কিন্তু কর্ম করলে ফল ফলবেই। তাই জ্ঞানী যে ফল লাভ
করে তা অমৃত ফল।
আজকালকার দিনে প্রত্যেক মানুষ কর্ম রহস্য না
জেনে ভিক্ষুকের মনোভাব নিয়ে কর্ম করে চলেছে। একে অপরের নিকট থেকে কিছু পাবার আশায়
কর্ম করার মধ্যে কোন সুখ বা আনন্দ আসতে পারে না। ভিক্ষুকের কোন সুখ ও আনন্দ আশা
করা যায় না। সে সর্বদায় দুঃখকে বহন করে নিয়ে চলে। তার ভিক্ষুকের দশা কেটে গেলেও
তার মন সেই দশাতেই আবদ্ধ থেকে কষ্ট পায়।
যিনি কর্ম রহস্য জ্ঞাত হয়েছেন, তিনি সর্ব কর্ম
কেবলমাত্র নিজ আত্মার সাথে পরমাত্মার যোগসূত্র দেখে সকলের মুক্তির জন্য কর্ম করেন।
যিনি সকলের মুক্তির জন্য কর্তব্য কর্মে বিভোর থাকেন তিনিই তো মুক্ত পুরুষ। জয়
বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment