[ পবিত্র গীতার অষ্টম অধ্যায় অক্ষরব্রহ্মযোগঃ
অর্জ্জুনের ব্রহ্ম সম্পর্কে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে। যিনি ব্রহ্মের অধিকারী
তিনি চলে যান সোজা সরলরেখায় অসীমে অনন্তে অনন্তানন্তময়ে। আর তিনি ফিরবেন না। আর
যিনি বৃত্তাকারে পথ চলা শুরু করেছেন, তিনি ঘুরতে ঘুরতে আবার সংসারে ফিরে আসবেন। এই
বৃত্তটি প্রকাণ্ড – ভূঃ ভুবঃ স্বঃ মহঃ জনঃ তপঃ সত্যলোক বা ব্রহ্মলোক পর্যন্ত এর
বিস্তার। ব্রহ্মলোক পর্যন্ত গিয়েও আবার ফিরে আসতে হয়। একমাত্র সরলরেখা ধরে যে চলে
যায় পুরুষোত্তমের অনন্ত লীলালোকে, সে আর ফিরে না। ফিরতে বাধ্যও হয় না। স্বেচ্ছায়
কখনও বা আসে জগতে, জগজ্জীবের কল্যাণেচ্ছায়। আজকে গীতার অষ্টম অধ্যায়ের ১ থেকে ১০
শ্লোক সকলের মনোযোগ সহকারে পাঠের জন্য প্রদত্ত হলো।]
১) হে
পুরুষোত্তম, সেই ব্রহ্ম কি? অধ্যাত্ম কি? কর্ম্ম কি? অধিভূতই বা কাকে বলে আর
অধিদৈবই বা কি?
২) হে মধুসূদন এই
দেহে অধিযজ্ঞ কে? এতে তিনি কিভাবে অবস্থান করেন? সংযতচিত্ত ব্যক্তিগণ মরণকালে কি
উপায়ে তোমাকে জানতে পারেন?
৩) শ্রীভগবান
বললেন--- যার বিনাশ নাই, সেই অক্ষর বস্তু পরম ব্রহ্ম। স্বভাবকে অধ্যাত্ম বলে। যা
থেকে প্রাণিগণের উৎপত্তি হয়, দেবতার উদ্দ্যেশে সেই দ্রব্য- অর্পণ –রূপ যজ্ঞকে
কর্ম্ম বলে।
৪) হে নরশ্রেষ্ঠ,
উৎপন্ন সকল প্রাণির নশ্বর ভাবের নাম অধিভূত, এই পদার্থে যিনি বিশ্বরূপ বিরাট পুরুষ
তিনি অধিদৈব। এই দেহে অধিযজ্ঞ আমিই।
৫) মরণকালে যিনি
আমাকে স্মরণ করতে করতে দেহত্যাগ করেন তিনি আমারই ভাব প্রাপ্ত হন। ইহাতে কোন সন্দেহ
নাই।
৬) মৃত্যুকালে যে
যে ভাববিশেষকে স্মরণ করতে করতে জীব দেহত্যাগ করে, হে কুন্তীনন্দন, সর্ব্বদা সেই
ভাববিশেষের ভাবনার ফলে পরলোকে সে সেই সেই ভাব প্রাপ্ত হয়।
৭) অতএব সকল সময়ে
আমাকে স্মরণ করতে থাক এবং যুদ্ধও কর। আমাতে মন ও বুদ্ধি সমর্পণ করলে তোমার সকল
সন্দেহ দূর হবে এবং তুমি আমাকে পাবে।
৮) হে পার্থ,
অনন্যচিত্তে বার বার অভ্যাস দ্বারা একাগ্রতা সহকারে যিনি সেই জ্যোতির্ম্ময় পরম
পুরুষকে ধ্যান করতে থাকেন তিনি তাঁকে প্রাপ্ত হন।
৯) অন্ধকারের
বহির্ভূত, আদিত্যবর্ণ, সকল জগতের শাসিতা সেই পুরাণ কবি পুরুষকে
যে ব্যক্তি সর্ব্বদা স্মরণ করে থাকেন---
১০) মরণকালে নিশ্চল হৃদয় সেই ব্যক্তি ভ্রদ্বয়ের মধ্যে প্রাণকে সম্যক আবিষ্ট
করে, ভক্তি এবং যোগবলে সেই আদিত্য- মণ্ডল মধ্যবর্ত্তী দিব্য পরম- পুরুষকে প্রাপ্ত
হন। [ যে একবার বিষাক্ত সাপের ছোবল খায়, তার আর সেই দেহ নিজের থাকে না, সেই দেহ
সাপের হয়ে যায়। তেমনি যে একবার পরমাত্মার ছোবল খায় তার দেহ- মন- প্রাণ –আত্মা সবই
পরমাত্মার হয়ে যায়। তখন সেই জীব পরমাত্মাকে ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে পায় না।
সর্বভূতে ঈশ্বর দর্শন তাদেরই হয় যারা কৃপা বশতঃ ঈশ্বরের বা পরমাত্মার ছোবল খাবার
সৌভাগ্য লাভ করে। জয় শ্রীভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীশ্রীগীতার জয়।]
No comments:
Post a Comment