[গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—দেহধারী জীব আমরা সকলেই। এখানে দেহধারী
বলতে বুঝতে হবে দেহেতে আত্মবুদ্ধি সম্পন্ন। অধিকাংশ মানবই দেহেতে আত্মবুদ্ধি
সম্পন্ন। সুতরাং অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই অব্যক্তোপসনা ক্লেশকর। ভক্তিপথে
ব্যক্তোপসনা সহজ সুখকর। জ্ঞানী –সন্তান জগতের সবার মঙ্গলের জন্য বাইরে কাজে চলে
গিয়েছে—সে সর্ব্বভুতহিতে রত। ভক্ত- সন্তান আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। অর্জ্জুন, তুমি
ভক্ত হও, আমাতেই মন স্থাপন কর। আমাতেই বুদ্ধি নিবিষ্ট কর। ইহকালে সর্ব্বদা আমাতে
মন রাখলে, এর পরেও পরকালে আমাতেই স্থিত হবে। ঈশ্বরের প্রিয় সকলেই, কারণ সকলেই তাঁর আশ্রয়ে
রয়েছেন। তবে তাঁর অতি প্রিয় কারা তা তিনি শ্রীগীতার ভক্তিযোগঃ অধ্যায়ের ১১ থেকে ২০
শ্লোকে নিজ মুখেই অর্জুনকে বলেছেন। আজকে ভক্তি সহকারে আমরা সেই মন্ত্র উচ্চারিত
করবো।]
১১) ইহাও যদি না পার, তাহলে সমস্ত কর্ম্ম আমাতে অর্পণরূপ যে যোগ, তা আশ্রয়
কর এবং সংযততাত্মা হয়ে সকল কর্ম্মের ফল ত্যাগ কর।
১২) অভ্যাস যোগের চেয়ে জ্ঞান বড়, জ্ঞানের চেয়ে ধ্যান বড়, ধ্যানের চেয়ে
কর্ম্মফল- ত্যাগ বড়। সকল প্রকার কর্ম্মফল ত্যাগ করতে পারলেই পরম শান্তি পাওয়া যায়।
১৩-১৪) কারো প্রতি যার বিদ্বেষ নেই, যিনি
সকলের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ও দয়াশীল, যিনি সকলকে সমদৃষ্টিতে দেখেন, যিনি
অহংকারবর্জিত, সুখে দুঃখে সমভাবাপন্ন ও সদা সন্তুষ্ট, যিনি সমাহিতচিত্ত,
সংযতস্বভাব ও আমাতে একান্ত ভাবে বিশ্বাসপরায়ণ, যার মন ও বুদ্ধি আমাতে অর্পিত এই
শ্রেণির ভক্তই আমার প্রিয়।
১৫) যার কাছ থেকে কোন লোক কষ্টদায়ক ব্যবহার
পান না এবং অন্যের ব্যবহারে যিনি কোন প্রকার উদ্বেগ বোধ করেন না, যিনি আনন্দ,
ক্রোধ, ভয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত, তিনি আমার প্রিয়।
১৬) যার কোন বিষয়ে স্পৃহা নাই, বাইরে যিনি
সর্বদা পবিত্র, কর্তব্যকর্মে যার আলস্য নাই, যিনি পক্ষপাতশূন্য, কোন কিছুই যাকে
মনঃকষ্ট দিতে পারে না এবং ফল কামনা করে যিনি কোন কর্ম আরম্ভ করেন না, এই ভক্তই
আমার প্রিয়।
১৭) অভীষ্ট বস্তু লাভে যিনি আনন্দে অধীর হন
না, যিনি অবাঞ্ছিত লাভে বিরক্ত হন না, যিনি কখনও শোক করেন না, কিছুতেই যার
আকাঙ্ক্ষা নাই, কর্মের ভালমন্দ সব ফলই যিনি ত্যাগ করেছেন, সেই ভক্তই আমার প্রিয়।
১৮—১৯) যিনি শত্রু –মিত্রে, মান- অপমানে,
শীত- উষ্ণতায়, সুখ- দুঃখে সমত্ব বুদ্ধি- সম্পন্ন, যার কিছুতেই আসক্তি নাই, যার
নিন্দা ও প্রশংসায় একই অবস্থা, যিনি স্বল্পভাষী, যা কিছু পান তাতেই যিনি সন্তুষ্ট
থাকেন, গৃহাদিতে যার মমত্ববোধ নাই, যিনি স্থিরচিত্ত ও ভক্তিমান, সেই ভক্তই আমার
অতীব প্রিয়।
২০) আমার যে অমৃততুল্য ধর্মের কথা বললাম, তা
যিনি পালন করেন, আমাতে যার শ্রদ্ধা আছে, যিনি একমাত্র আমাকেই পরমাশ্রয় বলে
জেনেছেন, সেই ভক্তই আমার প্রিয়। [ ইতি ভক্তিযোগ নামক দ্বাদশ অধ্যায়।] জয় বেদভগবান
শ্রীকৃষ্ণের জয়। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment