[ গীতা পাঠ করে মানুষ মহাত্মা হতে পারেন। এই পৃথিবীতে দুই প্রকার জীব বাস
করে—মহাত্মা আর মূঢ়াত্মা। যারা দৈবীপ্রকৃতিপ্রাপ্ত, সত্ত্বগুণান্বিত, তাঁরা
মহাত্মা। আর যারা রাক্ষসী ও আসুরী প্রকৃতিপ্রাপ্ত, তাঁরা মূঢ়াত্মা। মূঢ়াত্মাগণ
কখনো গীতার জীবন্ত বাণীকে আশ্রয় করেন না ও গীতা পাঠে অংশগ্রহণ করেন না।যার
অন্তঃকরণ সর্ব্বদা গীতায় অনুরক্ত থাকে, যিনি সাগ্নিক,জ্ঞাপক,ক্রিয়ান্বিত ও পণ্ডিত,
তিনিই দর্শনীয়, ধনবান যোগী ও জ্ঞানবান, তিনিই যাজ্ঞিক, যাজক ও সর্ব্ববেদার্থদর্শী।
যাতে মানুষ দৈবী সম্পদ লাভ করতে পারে—এই লক্ষ্যে বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানব সমাজের
শিক্ষা- দীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন পবিত্র গীতার মাধ্যমে। গীতার শিক্ষায় মানব সমাজকে
শান্তিময় সমাজ উপাহার দিতে সক্ষম, গীতার শিক্ষায় বিশ্বে শান্তি- সত্য- সাম্য-
ঐক্যের প্রতিষ্ঠা করে দিতে সক্ষম দৈবীসম্পদ দান করে। আজকে আমরা দৈবীসম্পদ লাভ করার
জন্য এবং আসুরিক সম্পদ পরিহার করার জন্য ষোড়শ অধ্যায়ের দৈবাসুরসম্পদ- বিভাগযোগের ১
থেকে ১২ শ্লোক শ্রদ্ধা- সহকারে পাঠ করবো এবং অবশ্যই নিজের মতামত ব্যক্ত করবো,
বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভ করার জন্য।]
১—৩) শ্রীভগবান
বললেন, হে অর্জুন, নির্ভীকতা, চিত্তশুদ্ধি, আত্মজ্ঞাননিষ্ঠা, কর্ম্মযোগে তৎপরতা,
দান, বহিরিন্দ্রিয়- সংযম, যজ্ঞ, শাস্ত্র- পাঠ, তপস্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্য,
অক্রোধ, ত্যাগ, শান্তি, পরনিন্দাবর্জন, জীবে- দয়া, লোভহীনতা, মৃদুতা, লজ্জা,
অচাঞ্চল্য, তেজস্বিতা, ক্ষমা, ধৈর্য্য, শুচিতা, অহিংসা, অহংকার- শূন্যতা—এই সকল
গুণ, সাত্ত্বিক সম্পদ লাভের জন্য জাত- ব্যক্তিদের হয়ে থাকে।
৪)হে পার্থ, তপ, অভিমান, ক্রোধ, নিষ্ঠুরতা এবং অজ্ঞানতা প্রভৃতি ভাব আসুরিক
সম্পদ অভিমুখে জাত ব্যক্তি প্রাপ্ত হয়।
৫) দৈবী সম্পদ মোক্ষলাভের হেতু আর আসুরিক সম্পদ সংসার বন্ধনের কারণ জানবে।
হে পাণ্ডব, তুমি শোক করো না কারণ, তুমি দৈবী সম্পদ আশ্রয় করে জন্মেছো।
৬) হে অর্জ্জুন, এই জীবলোকে দৈব ও আসুর নামে দুই প্রকার জীব সৃষ্ট হয়েছে।
দৈব সৃষ্টির কথা পূর্ব্বে বিস্তৃত ভাবে বলেছি। এখন আসুর সৃষ্টির কথা বলছি, শোন।
৭) যারা আসুর স্বভাবের তারা ধর্ম্ম আর অধর্ম্ম যে কি তা জানে না। তাদের
মধ্যে পবিত্রতা, সদাচার বা সত্য বলে কিছু থাকে না।
৮) এই আসুর প্রকৃতির লোকেরা বলে থাকে যে, এই জগতে সত্য বলে কোন পদার্থ নাই,
জগতে ধর্ম্মাধর্ম্মেরও কোন ব্যবস্থা নাই এবং ঈশ্বর বলে কোন বস্তু নাই—ইহা কেবল
স্ত্রী- পুরুষের কামসংসর্গ হতে জাত, ইহার অন্য কোন কারণ নাই। জগতের সকল পদার্থই
মানুষের কামনা বাসনা পূরণ করার জন্য, ইহাদের অন্য কোন উপযোগিতা নাই।
৯) এই প্রকার দৃষ্টিভঙ্গীকে আশ্রয় করে বিকৃত- মতি, অল্পবুদ্ধি ক্রূরকর্ম্মা
ব্যক্তিগণ শুধু জগতের বিনাশ সাধনের জন্যই জন্মগ্রহণ করে। তারা সকলের অহিতকারী।
১০) তাদের কামনা পূর্ণ হবার নয়। তারা দম্ভ অভিমান ও গর্ব্বে মত্ত। তারা
মোহের বশে মিথ্যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, অকার্য্য করতে থাকে এবং অশুচিব্রতপরায়ণ হয়ে
কর্ম্মে প্রবৃত্ত হয়।
১১—১২) মৃত্যুকাল পর্যন্ত অপরিমেয় বিষয়-চিন্তা আশ্রয় করে বিষয়ভোগনিরত এই
সকল ব্যক্তি নিশ্চিত ভাবেই মনে করে যে কামোপভোগই পরম পুরুষার্থ, ইহা ছাড়া জীবনের
অন্য কোন লক্ষ্য নাই। সুতরাং ইহারা শত শত আশারূপ রজ্জু দ্বারা বদ্ধ ও
কামক্রোধপরায়ণ হয়ে অসৎ পন্থা অবলম্বন পূর্ব্বক অর্থ সংগ্রহে সচেষ্ট হয়। [ জয়
বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়। জয় পবিত্র গীতামাতার জয়।]
No comments:
Post a Comment