Thursday, 16 November 2017

গীতা একাদশ অধ্যায় ৩১ থেকে ৪০ শ্লোক

[ গীতা মায়ের স্বরূপে অষ্টাদশটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা অষ্টাদশখানি সিঁড়ি। নিম্নের সিঁড়িতে ‘বিষাদ’ আর সর্ব্বোচ্চ সিঁড়িতে ‘মোক্ষ’। আমরা এখন বিশ্বরূপদর্শনযোগঃ নামক সিঁড়িতে অবস্থান করছি। যিনি আমাদের সকলের অন্তর্যামী তিনিই আজ তাঁর বিশ্বরূপ অর্জ্জুনকে দেখাচ্ছেন গীতামাতার একাদশ সিঁড়িতে চাপিয়ে নিয়ে। এই বিশ্বরূপ দর্শন কেবল অর্জ্জুনের জন্য নয়। কারণ তিনি কেবল অর্জ্জুনের জীবন- রথের সারথি নহেন, আমাদের সকলের জীবন রথের সারথি নারায়ন। অর্জ্জুন শুধু একটি ব্যক্তি নহেন। তিনি আমাদের সকলের প্রতীক ব্যক্তি। আমরা সকলে যেন তাঁকে ভোট দিয়ে পাঠিয়েছি, আমাদের সকলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ভগবানের দরবারে ধর্ম্মক্ষেত্রে- কুরুক্ষেত্রে। অর্জ্জুন আমাদের সকলের পথিকৃৎ। আমাদিগকেও ঐ পথে চলতে হবে দেশ- রাষ্ট্র –পরিবার- সমাজকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। ঘরে ঘরে গীতামায়ের বাণী পৌঁছে দিতে হবে আমাদেরকে অর্জ্জুনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে। আজকে আমরা অর্জ্জুনের ন্যায় বেদভগবানের বিশ্বরূপ দর্শন করবো ৩১ থেকে ৪০ মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে]
৩১) হে উগ্ররূপধারী, আপনি কে বলুন? আপনি কি কার্য্যে প্রবৃত্ত হয়েছেন? হে দেববর, আপনাকে প্রণাম করি, আপনি প্রসন্ন হউন। হে আদিপুরুষ, আমি আপনাকে জানতে ইচ্ছা করি, কিন্তু আপনাকে বুঝতে পারছি না।
৩২) শ্রীকৃষ্ণ বললেন—আমি ভয়ঙ্কর কাল। আমি সকলকেই সংহার করি। বর্ত্তমানে আমি এই জগতের লোক সংহারে প্রবৃত্ত। তুমি যুদ্ধ না করলেও বিপক্ষ দলে যে সমস্ত বীর আছেন, তারা কেউ জীবিত থাকবে না।
৩৩) অতএব তুমি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও, যশ লাভ কর এবং শত্রুদের পরাজিত করে নিষ্কণ্টক রাজ্য ভোগ কর। আমি পুর্ব্বেই এদেরকে বধ করে রেখেছি। হে সব্যসাচী, তুমি কেবল নিমিত্ত হও।
৩৪) দ্রোণ, ভীষ্ম, জয়দ্রথ কর্ণ প্রভৃতি বীর যোদ্ধাদের আমি পূর্ব্বেই হত্যা করে রেখেছি। তুমি এই নিহতদের বধ কর, ভীত হয়ো না। তুমি যুদ্ধে শত্রুদের নিশ্চয়ই জয় করবে। অতএব যুদ্ধ কর।
৩৫) সঞ্জয় বললেন—শ্রীকৃষ্ণের এই বাক্য শ্রবণ করে অর্জ্জুন কম্পিত কলেবরে কৃতাঞ্জলিপুটে তাঁকে নমস্কার করলেন। তিনি অত্যন্ত ভীত হয়ে আবার তাঁকে প্রণাম করে গদগদ স্বরে বলতে লাগলেন।
৩৬) অর্জ্জুন বললেন--- হে হৃষীকেশ, তোমার মাহাত্ম কীর্ত্তনে সমস্ত জগৎ যে আনন্দিত হয় এবং তোমার প্রতি অনুরক্ত হয় ইহা যুক্তিযুক্ত। রাক্ষসেরা যে তোমার ভয়ে ভীত হয়ে চতুর্দিকে পলায়ন করে এবং সিদ্ধগণ যে তোমাকে প্রণাম করেন, এতে আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই।
৩৭) হে মহাত্মন, তুমি ব্রহ্মারও গুরু এবং অনাদির আদি কর্ত্তা। অতএব সমস্ত জগৎ তোমাকে কেন নমস্কার করবে না? হে অনন্ত, হে দেবেশ, হে জগন্নিবাস, যা ব্যক্ত এবং যা অব্যক্ত তাই তুমি। এই উভয়ের অতীত যে অক্ষর ব্রহ্ম তাও তুমি। তুমি ভিন্ন ত্রিভুবনে অন্য কিছুই নাই।
৩৮) হে অনন্তরূপ, তুমি আদিদেব, অনাদি পুরুষ। তুমি নিখিল বিশ্বের চরম লয় স্থান। তুমি জ্ঞাতা, তুমি জ্ঞেয়, তুমি পরম ধাম এবং বিশ্বব্যাপী ভূমা।
৩৯) তুমিই বায়ু, তুমিই যম, তুমিই অগ্নি, বরুণ ও চন্দ্র। পিতামহ ব্রহ্মাও তুমি, ব্রহ্মার জনকও তুমি। তোমাকে সহস্রবার নমস্কার, আবার নমস্কার, পুনঃপুনঃ নমস্কার।
৪০) তোমাকে সম্মুখে নমস্কার, পশ্চাতে নমস্কার, সর্ব্বদিকেই নমস্কার। হে সর্ব্বস্বরূপ, সর্ব্বত্রই তুমি বিরাজমান। তোমার অনন্ত বীর্য্য, অমিত বিক্রম, অসীম প্রভাব। তুমি সমস্ত জগৎ জুড়ে আছ। সুতরাং তুমিই সমস্ত কিছু।
[ জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বিশ্বরূপের জয়।]

No comments:

Post a Comment