Thursday, 30 November 2017

গীতা দৈবাসুরযোগ ১৩ থেকে ২৪ শ্লোক

[ গীতা সমস্ত শাস্ত্রের সার। গীতাকে আশ্রয় করে কর্ম্ম করলেই মানুষ পবিত্র হয়ে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে। তন্ত্রবিদ্যার বিশাল পরিধি এই গীতার মধ্যেই তন্ত্রসাধকরা পেয়ে থাকেন। তন্ত্রবিজ্ঞান ভারতের সাধকদের প্রচীন ঐতিহ্য। তন্ত্রবিজ্ঞান ১৬ ভাগে বিভক্ত, আর প্রত্যেক বিজ্ঞানে চারটি করে মোট ৬৪টি বিদ্যা আছে। গীতাকে আশ্রয় করে কর্ম্ম করলেই সাধক তন্ত্রবিজ্ঞানের ৬৪টি বিদ্যায় সিদ্ধিলাভ করে থাকেন বেদভগবানের কৃপায়। যারা দৈবীসম্পদের অধিকারী তাঁরা শ্রদ্ধা সহকারে শাস্ত্রীয় বিধান জেনে পবিত্র গীতাকে আশ্রয় কাম- ক্রোধ ও লোভের কখনো বশবর্তী হন না। নরকের দ্বারস্বরূপ এই তিনটি থেকে মুক্ত হয়ে সকলের কল্যাণ- সাধনপুর্ব্বক শাস্ত্রীয় বিধান মেনে তন্ত্রসাধনা ধীর গতিতে আত্মার উপর ভর করে, করে চলেন এবং সিদ্ধি ও অসিদ্ধির জন্যও চিন্তা করেন না। বিপরীত দিকে আসুরিক যোনি প্রাপ্ত ব্যক্তিরা শাস্ত্রীয় বিধিকে অবজ্ঞা করে কাম- ক্রোধ- লোভের বশবর্তী হয়ে তন্ত্রবিজ্ঞানের সুফল লাভ করতে গিয়ে নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনেন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে না পেয়ে অধোগতি লাভ করেন। আজকে ষোড়শ অধ্যায়ের দৈবাসুরসম্পদ- বিভাগযোগের ১২ থেকে ২৪ শ্লোক পাঠ করে আমরা সকলেই তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধিলাভ করার সাধনায় ব্রতী হবো মানব- কল্যাণের জন্য।] 
১৩—১৪) আজ আমার এই লাভ হল, পরে এই ঈপ্সিত বস্তু পাব; এই ধন আমার আছে, পরে ঐ ধনও আমার হবে; আমি এই শত্রুকে বিনষ্ট করেছি, অন্য শত্রুদিগকেও বিনাশ করব; আমিই সকলের প্রভু, আমিই সকল ভোগের অধিকারী; আমি সার্থককাম, শক্তিমান ও সুখী।
১৫-১৬) আমি ধনী ও কুলীন, আমার সমান আর কে আছে? আমি যজ্ঞ করব, আমোদ করব—এই প্রকার অজ্ঞানতায় আসুর প্রকৃতির লোকেরা মোহিত। তাদের চিত্ত নানাবিধ বিষয়চিন্তায় বিক্ষিপ্ত। তারা বিষয়ভোগে জড়িত হয় এবং তার ফলে ঘোর নরকে পতিত হয়।
১৭) এই সকল লোক নিজেকে পূজ্য বলে অভিমান করে। তাদের মধ্যে বিনয় নম্রতা নাই। তারা ধন ও মানের গর্ব্বে মত্ত। তারা শুধু নাম যশের জন্য অবিধিপূর্ব্বক যজ্ঞ করে থাকে।
১৮) সাধুগণের অসুয়াকারী এই সকল ব্যক্তি অহংকার, বল, দর্প, কাম ও ক্রোধের বশীভূত—অন্তর্য্যামিরূপে নিজ এবং পরদেহে অবস্থিত আমাকে দ্বেষ করে থাকে
১৯) এইরূপ দ্বেষপরায়ণ, নিষ্ঠুর, নরাধম, পাপাচারীদিগকে আমি সংসারে সর্পাদি আসুর যোনিতে পুনঃপুনঃ নিক্ষেপ করে থাকি।
২০) হে কৌন্তেয়, এই সকল মূঢ় ব্যক্তি জন্মে জন্মে আসুর যোনি প্রাপ্ত হয় এবং আমাকে না পেয়ে আরো অধোগতি পেয়ে থাকে।
২১) কাম, ক্রোধ ও লোভ—এই তিনটি নরকের দ্বার স্বরূপ। ইহারা আত্মার বিনাশের মূল। সুতরাং এই তিনটি ত্যাগ করবে।
২২) হে কৌন্তেয়, নরকের দ্বারস্বরূপ এই তিনটি থেকে মুক্ত হলে মানুষ আপনার কল্যাণ—সাধনপূর্ব্বক পরম গতি লাভ করে।
২৩) যে ব্যক্তি শাস্ত্রবিধি না মেনে স্বেচ্ছাচারী হয়ে কর্ম্মে প্রবৃত্ত হয়, সে সিদ্ধি লাভ করতে পারে না। তার সুখও হয় না এবং পরম গতি বা মোক্ষ লাভ হয় না।
২৪) অতএব কর্ত্তব্য- অকর্ত্তব্য নির্ধারণে তোমার শাস্ত্রই প্রমাণ। সুতরাং তুমি শাস্ত্রোক্ত বিধান জেনে স্বীয় অধিকার অনুসারে কর্ম্মে প্রবৃত্ত হও।
ইতি দৈবাসুরসম্পদ- বিভাগযোগ নামক ষোড়শ অধ্যায়। [ জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়—জয় গীতামাতার জয়।]

No comments:

Post a Comment