Sunday, 19 November 2017

বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান ১১৩ তাং ১৯/ ১১/ ২০১৭

    
বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান(১১৩) তারিখঃ—১৯/ ১১/ ২০১৭
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ--[বেদ যজ্ঞ করে তোমাদের দেবতাদের যথাযোগ্য আসনে বসাও।]
 দেবতাদের আমরা আত্মীয় জানি। তাঁরাই বিভিন্নরূপ ধরে আমাদেরকে এই পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে চলেছেন। খাদ্যই হচ্ছে জীবের জীবন। ইহা ব্যতিরেকে কোন জীব প্রাণকে ধরে রাখতে পারে না। খাদ্যে যে গুণ বা শক্তি থাকে তারা শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সেই শক্তি গুণেই মানুষ দৃষ্টি শক্তি, শ্রবণ শক্তি, ঘ্রাণ শক্তি, বাক শক্তি ও অনুভব শক্তির সাথে সাথে কর্মক্ষমতা লাভ করে থাকে। খাদ্য ব্যতিরেকে এই শক্তিগুলির প্রকাশ-বিকাশ ঘটতে পারে না। আর এই পঞ্চশক্তি বলেই মানুষকে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। তাই সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান ধর্ম- কর্ম সংসার সবকিছু খাদ্যের উপরই নির্ভরশীল। এই জ্ঞান যাদের আছে তারা-ই পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী।
তাঁরা জানেন একটা মানুষকে অন্নের সংস্থান করে দিতে পারলে কোটি কোটি দেবতাকে অন্ন দেওয়া হয়। নিজের পেট ভরে গেলে যেমন জগতকে সুখী দেখা যায় – তেমনি অপরের পেটের কথা চিন্তা করে যিনি অপরকে খাদ্য দেন তাঁর মতো সুখী আর পৃথিবীতে দ্বিতীয় দেখা যায় না। আর যারা নিজের পেট ভরার পরেও ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে অন্ন না দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য তা সঞ্চয় করে রাখেন তাঁদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
যারা খাদ্য উৎপাদন করেন তাঁরা-ই এ পৃথিবীতে সুসভ্য মানব জাতিকে ধরে রেখেছে। তাঁরাই হচ্ছে মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান বিদ্যা-বুদ্ধি। তাঁদেরকে উপেক্ষা করে যারা তাঁদের উৎপাদিত অন্ন খেয়ে জীবন ধারণ করে আছে তারাই চোর। শাস্ত্রে বলে দেবতাদের উৎপাদিত ফল দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন না করে যিনি গ্রহণ করেন তিনি-ই চোর।
আজকের সভ্য সমাজে সবথেকে অবহেলিত চাষি ও চাষের সঙ্গে যুক্ত দিন মজুর। তাদের কাছে এখনও বিজ্ঞানের আলো পৌঁছায়নি। তাদের আক্ষরিক জ্ঞান পর্যন্ত হয়নি। তাদের ছেলে- মেয়ে একবেলা পেট ভরে খেতে পায়না। একটা পাউরুটি কুকুরের মতো কাড়াকাড়ি করে দশজনে ছিঁড়ে খায়—সে খবর সকলের জানা। পৃথিবীর মানুষের যারা দেবতা, তাদের স্ত্রীর ভাগ্যে বছরে একটা কাপড় জুটলে ব্লাউজ জুটে না। অধিকাংশ দিন তাদের অর্ধাহারে –অনাহারে কাটাতে হয়। অথচ তারাই পৃথিবীকে স্বর্গ রাজ্য করে রাখার জন্য দিন-রাত ভুতের মতো খেটে চলেছে। তারা দেব-দেবীর আসন অলংকৃত করেও, নিজের স্বরূপ আবৃত রেখে অহরহ মুখ বুজে পরিশ্রম করে চলেছে। তাদের যজ্ঞের ফলে মানব জাতির আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। যতই তারা ফুলে ফেঁপে উঠছে ততই দেবতাদের করুণ অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
কিন্তু এই দেবতাদের গুণ অশেষ। তারা এই করুণ অবস্থার মাঝেও কাউকে দোষ দেয় না। নির্ভীক চিত্তে পবিত্র মনে কাউকে হিংসা না করে নিজ কর্তব্য করে চলেছে। তাদের ধৈর্য শক্তি-ই তাদেরকে এনে দিয়েছে শান্তভাব, নম্রতা, লজ্জা, ক্ষমা প্রভৃতি গুণ। এই দেবতাদের অন্নে প্রতিপালিত হয়ে তাদেরকেই যারা অবহেলা করে অন্নের ভাগ দিতে চায় না – তারা কৃপা করে নিজের মুখোশটি একবার খুলে দেখুন তো – আপনি কে? জয় বেদযজ্ঞের জয়।

No comments:

Post a Comment