[ গীতায় বেদভগবান
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—“ আমি বীজপ্রদ পিতা, আর আমার গর্ভাধান- স্থান প্রকৃতি”। জড়
গর্ভাধান হয় জড় ইন্দ্রিয়ের মিলনে। চিন্ময় পুরুষের গর্ভাধান দৃষ্টিপাতে, ঈক্ষণে ও
সংকল্পে। পিতৃমাতৃমিলনজাত সন্তান—সমস্ত ভুতগণ। জীব পিতার কাছে পেয়েছে অণুচৈতন্য,
মাতার কাছে পেয়েছ ত্রিগুণ—সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ। জীব ঈশ্বরের সন্তান হয়ে ঈশ্বর-
তুল্যতা লাভ করে, কিন্তু ঈশ্বর হয়ে যায় না। গুণে, ভাবে, কর্ম্মে, ধর্ম্মে তাঁর মতো
হয়ে গিয়েও পৃথকত্ব থাকে। এর অর্থ এই যে, সাধনার চরমে উঠে জীব ও ঈশ্বরের ধর্ম্ম এক
হয়ে যায়, কিন্তু ধর্ম্মী পৃথকই থাকে। শিবত্ব ধর্ম্ম আর শিব ধর্ম্মী। জীবের জীবত্ব
ঘুচে শিবত্ব হয়, কিন্তু সে শিব হয়ে যায় না। অতএব মানব যোনীতে জন্মলাভ করে নিজেকে
ঈশ্বররূপে ঘোষণা করা অহংকার ছাড়া কিছু নয়। আজকে ১৪শ অধ্যায়ের গুণত্রয়বিভাগযোগঃ
থেকে আমরা ১ থেকে ১১ মন্ত্র উচ্চারিত করে পবিত্র সত্তায় পরিণত হবো ও বেদভগবান
শ্রীকৃষ্ণের কৃপাধন্য হবো।]
১) শ্রীভগবান
বললেন, আমি পুনরায় জ্ঞানসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান বলছি। ইহা জেনে মুনিগণ সকলে
দেহবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে পরম সিদ্ধি লাভ করেছেন।
২) এই জ্ঞান আশ্রয় করে যারা আমার সাধর্ম্ম্য লাভ করেন তাঁরা সৃষ্টিকালেও
জন্মগ্রহণ করেন না, প্রলয়কালেও কোন দুঃখ পান না।
৩) হে ভারত, প্রকৃতি আমার গর্ভাধানের স্থান, তাহাতেই আমি সৃষ্টির বীজ
নিক্ষেপ করি। এই গর্ভাধান থেকেই সর্ব্বভূতের উৎপত্তি হয়।
৪) হে কৌন্তেয়, বিভিন্ন যোনিতে যে সকল প্রাণী জন্মলাভ করে, প্রকৃতি তাদের
মাতা এবং আমি গর্ভ- উৎপাদনকারী পিতা।
৫) হে মহাবাহু, সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ—প্রকৃতিজাত এই তিনটি গুণ। এই গুণত্রয়
দেহমধ্যে আত্মাকে বন্ধন করে রাখে।
৬) হে নিষ্পাপ অর্জ্জুন, এইগুলির মধ্যে সত্ত্বগুণ নির্ম্মল। এই জন্য ইহা
অমলিন স্বভাব ও সকলের প্রকাশক। ইহা সুখ ও জ্ঞানের সঙ্গ দ্বারা আত্মাকে আবদ্ধ করে।
৭) হে অর্জ্জুন, রজোগুণকে আসক্তিময় জেনো। ইহা থেকে কামনা জন্মে, ইহা
মানুষকে কর্ম্মবন্ধনে আবদ্ধ করে।
৮) হে অর্জ্জুন, তমোগুণ অজ্ঞানতা থেকে জন্মে। ইহা সর্ব্ব জীবের মনে
বিভ্রান্তি জন্মায় এবং প্রমাদ, নিদ্রা ও আলস্য দ্বারা জীবকে আবদ্ধ করে রাখে।
৯) হে ভারত, সত্ত্বগুণ সুখে এবং রজোগুণ কর্ম্মে জীবকে আসক্ত করে। কিন্তু
তমোগুণ মানুষের জ্ঞানকে ঢেকে কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ়তা রূপ প্রমাদের সৃষ্টি করে।
১০) হে ভারত, সত্ত্বগুণ, রজো ও তমোগুণকে অভিভূত করে প্রবল হয়। আবার কখনো
রজোগুণ সত্ত্ব ও তমোগুণকে অভিভূত করে প্রবল হয়, আবার কখনো বা তমোগুণ সত্ত্ব ও
রজোগুণকে অভিভূত করে প্রবল হয়।
১১) যখনই এই দেহে সমস্ত ইন্দ্রিয়দ্বারে নির্ম্মল জ্ঞানের প্রকাশ ঘটে তখনই
সত্ত্বগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে জানবে। [ জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।]
No comments:
Post a Comment