Tuesday, 21 November 2017

গীতা ক্ষেত্র- ক্ষেত্রজ্ঞযোগ ১থেকে ১২ শ্লোক

[ গীতার ত্রয়োদশ অধ্যায়ের নাম ক্ষেত্র- ক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগঃ। এই অধ্যায়ে প্রকৃতি- পুরুষ, ক্ষেত্র- ক্ষেত্রজ্ঞ জ্ঞান এবং জ্ঞেয় সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছ। অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকে অর্জ্জুন প্রশ্ন তুলে ধরেছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে ছয়টি বিষয়ে – প্রকৃতি, পুরুষ, ক্ষেত্র—ক্ষেত্রজ্ঞ, জ্ঞান ও জ্ঞেয় নিয়ে। সমগ্র অধ্যায় জুড়ে ৩৪টি শ্লোকের মাধ্যমে ভগবান তাঁর প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ – সরলভাবে দিয়েছেন সম্পূর্ণভাবে। দেহ আর দেহী ইহাদের অপর এক নাম ক্ষেত্র- ক্ষেত্রজ্ঞ। এই দেহী সকলের দেহে নিত্য অবধ্য। সকলের দেহেই দেহী আছেন। তিনি নিত্য এবং অবধ্য। দেহ অনিত্য ও বধ্য। জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়ের অববোধই জ্ঞান। এই জ্ঞানেরই নাম আত্মজ্ঞান, আত্মা- নাত্মবিবেক—প্রকৃতি- পুরুষ জ্ঞান, ক্ষেত্র- ক্ষেত্রজ্ঞজ্ঞান। এই জ্ঞান লাভ হলে তার আচরণ শুদ্ধ হয়। সেই সাথে যে ব্যক্তির এই জ্ঞানের উদয় হয় তার কতকগুলি অপূর্ব্ব গুণের উদয় হয়। আজকে ক্ষেত্র- ক্ষেত্রজ্ঞবিভাগ যোগের ১ থেকে ১২ শ্লোক আমরা পাঠ করে অন্তরকে নির্মল করবো।]
১) অর্জ্জুন বললেন—হে কেশব! প্রকৃতি পুরুষ, ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞ, জ্ঞান এবং জ্ঞেয়—এইগুলি আমি জানতে ইচ্ছা করি।
২) শ্রীভগবান বললেন—হে অর্জ্জুন! এই দেহকে ক্ষেত্র বলে। যিনি প্রকৃতপক্ষে এই তত্ত্ব জানেন, পণ্ডিতগণ তাঁকে ক্ষেত্রজ্ঞ বলেন।
৩) হে ভারত! সমুদয় ক্ষেত্রে আমাকেই ক্ষেত্রজ্ঞ বলে জানবে। ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞের যে জ্ঞান, তাই প্রকৃত জ্ঞান। ইহাই আমার অভিমত।
৪) সেই ক্ষেত্র কি, ইহার স্বরূপ কি, ইহার বিকার কিরূপ, যার মধ্য থেকে এর জন্ম হয়, তা সংক্ষেপে বলছি। সেই ক্ষেত্রজ্ঞ কি, তার শক্তিই বা কিরূপ, তাও সংক্ষিপ্তাকারে বলব—শুন।
৫) ঋষিগণ বিবিধ বেদবাক্য দ্বারা নানা ছন্দে পৃথক পৃথক ভাবে এই ক্ষেত্রক্ষত্রজ্ঞ তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। ব্রহ্ম- সূত্র অর্থাৎ উপনিষদের বাক্য সমূহেও পৃথক ভাবে এই জ্ঞান যুক্তিপূর্ণ বিচার-সহ নিশ্চিতরূপে নিরূপণ করা হয়েছে।
৬—৭) পঞ্চমহাভূত, অহংকার, বুদ্ধি, অব্যক্ত অর্থাৎ মূল প্রকৃতি, দশ ইন্দ্রিয়, মন এবং রূপরসাদি পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়ের বিষয় ( পঞ্চ তন্মাত্র) এবং ইচ্ছা, বিদ্বেষ, সুখ, দুঃখ, সংঘাত, চৈতন্য, ধৈর্য্য, এগুলি হল ক্ষেত্র ও তার বিকার। এসব তোমাকে সংক্ষেপে বললাম।
৮—১২) অভিমান-শূন্যতা, দম্ভহীনতা, অহিংসা, ক্ষমা ও সরলতা, গুরুসেবা, শৌচ, সৎকার্যে একনিষ্ঠতা, আত্মসংযম ইন্দ্রিয়সুখের বিষয়ে বৈরাগ্য, নিরহংকারিতা, জন্ম- মৃত্যু-জরা- ব্যাধি জনিত দুঃখরূপ দোষের পুনঃপুনঃ আলোচনা, বিষয়ে অনাসক্তি, স্ত্রী-পুত্র- গৃহাদি সুখে- দুঃখে উদাসীনতা, ইষ্ট বা অনিষ্ট লাভে মনের সমভাব, আমাতে অনন্য- চিত্তে ঐকান্তিক ভক্তি, পবিত্র নির্জ্জন স্থানে বাস, সাধারণ লোকের সাহচর্যে বিরক্তি, নিয়ত আত্মজ্ঞান- নিষ্ঠা, মোক্ষ বিষয়ে সর্ব্বদা আলোচনা করা—এই সমস্ত বিষয়কে জ্ঞান বলা হয়। এগুলির যা বিপরীত, তা অজ্ঞান।
[ জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়। জয় বেদমাতা, বিশ্বমাতা ও ভারতমাতার জয়। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীশ্রী পবিত্র গীতার জয়।]

No comments:

Post a Comment