Tuesday, 28 November 2017

গীতা পুরুষোত্তমযোগঃ ১১ থেকে ২০ শ্লোক

[ শ্রীগীতার শাসন নিজ সন্তানের মঙ্গলের জন্য মায়ের শাসন। সন্তানের কাছে গীতা মা বিশ্বকে মধুময়- আনন্দময় করে তুলে ধরে দেখাতে তৎপর। তিনি নিজ সন্তানদের উত্তমঃ পুরুষঃ পুরুষোত্তমের গুণে গুণান্বিত করে দেখতে চান, তাই তাঁর শাসন অতি উত্তম ও মধুর। সন্তানকে সুসন্তান না করতে পারলে পিতা- মাতার প্রেমের মন্দিরে সন্ধ্যা- প্রদীপ জ্বলে না। সেই মন্দির চিরকাল অন্ধকার হয়েই থেকে যায়—কোন ভক্ত সেই মন্দিরের দিকে চেয়েও দেখে না। গীতা মা সন্তানদের এই মূর্খতা দেখেই শাসন- তর্জন করেন এবং নিজ সন্তানকে যে প্রেমের মন্দির দিয়েছেন, সেই মন্দিরকে পুরুষোত্তমের সাথে যুক্ত করে দিতে চান। সন্তানের দেহ- মন্দির পবিত্র হয়ে উঠলেই সপ্ত- মন্দিরের দুয়ার খুলে যায়, তখন সপ্তর্ষি চলে আসেন সন্ধ্যা- প্রদীপ হাতে নিয়ে সেই মন্দিরে আরতি করতে। তাঁরাই এসে সপ্তলোকের রাজপথ আলোকিত করে তুলেন গীতামায়ের সন্তানদের সেই সপ্তলোক ভ্রমণ করার জন্য। পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মমতা সবার জন্যই বর্ষিত হচ্ছে। গীতামা আমাদের গর্ভধারণী মা হয়েই তাঁর কৃপার সন্তান করে, আমাদেরকে পুরুষোত্তমের গুণে গুণী করে তুলে তাঁর লীলা সাথী করে দিতে তৎপর। আজকে আমরা গীতার পঞ্চদশ অধ্যায়ে পুরুষোত্তমযোগের ১১ থেকে ২০ মন্ত্র উচ্চারণ করে গীতামায়ের আশীর্বাদ ধন্য সন্তান হয়ে উঠবো।]
১১) সাধনে যত্নশীল যোগীগণ আপনাতে অবস্থিত এই আত্মাকে দর্শন করে থাকেন, কিন্তু যারা অজিতেন্দ্রিয় ও অবিবেকী, তারা যত্ন করলেও ইহাকে দেখতে পান না।
১২) সূর্য্যের যে তেজ সমস্ত জগৎ উদ্ভাসিত করে এবং যে তেজ চন্দ্রে ও অগ্নিতে আছে, তা আমারই তেজ জানবে।
১৩) আমি নিজ শক্তির প্রভাবে পৃথিবীতে অধিষ্ঠান করে ভূতগণকে ধারণ করে আছি। আমিই অমৃতরসযুক্ত চন্দ্ররূপে ধান্য- যবাদি ওষধিগণকে পরিপুষ্ট করে থাকি।
১৪) আমি বৈশ্বানররূপে প্রাণিগণের দেহে অবস্থান করি এবং প্রাণ ও অপান বায়ুর সহিত মিলিত হয়ে চর্ব্ব্য চুষ্য লেহ্য পেয়—এই চার প্রকার খাদ্য পরিপাক করে থাকি।
১৫) আমি অন্তর্য্যামিরূপে সকল প্রাণীর হৃদয়ে অবস্থিত আছি। আমা হতেই সকল প্রাণীর স্মৃতি ও জ্ঞান উৎপন্ন হয়ে থাকে এবং আমা হতেই ইহাদের বিলোপ ঘটে। আমি বেদসমূহের একমাত্র জ্ঞাতব্য, আমিই আচার্য্যরূপে বেদার্থপ্রকাশক এবং বুদ্ধিরূপে বেদার্থের পরিজ্ঞাতা।
১৬) জগতে ক্ষর ও অক্ষর—এই দুই প্রকার পুরুষ আছে। তন্মধ্যে সর্ব্বভূত ক্ষর পুরুষ এবং কূটস্থ অর্থাৎ নির্ব্বিকার আত্মা অক্ষর পুরুষ বলে কথিত হন।
১৭) ক্ষর ও অক্ষর ভিন্ন এক উত্তম পুরুষ আছেন যিনি পরমাত্মা নামে অভিহিত। তিনি লোকত্রয়ে প্রবিষ্ট হয়ে সকলকে পালন করেন। তিনি অব্যয়, তিনি ঈশ্বর।
১৮) যেহেতু আমি ক্ষরের অতীত এবং অক্ষর হতেও উত্তম, সেইজন্য আমি এই বিশ্বলোকে ও বেদে পুরুষোত্তম বলে খ্যাত।
১৯) হে ভারত, যিনি মোহমুক্ত হয়ে এই ভাবে আমাকে পুরুষোত্তম বলে জানতে পারেন তিনিই প্রকৃতপক্ষে সর্ব্বজ্ঞ। তাই তিনি সর্ব্বতোভাবে আমাকে ভজনা করেন।
২০) হে নিষ্পাপ, আমি এই অতি গুহ্য বিদ্যা তোমাকে বললাম। হে ভারত, যিনি ইহা জানেন তিনি জ্ঞানী ও কৃতার্থ হন। ইতি পুরুষোত্তমযোগ নামক পঞ্চদশ অধ্যায়। [ জয় বেদ্ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গীতার জয়।]

No comments:

Post a Comment