[ গীতাকে আশ্রয়
করেই মানুষকে নর থেকে নারায়ণ হয়ে নারায়ণকে জানতে হয়। নারায়ণকে জানার জন্য গীতা ১)
ধ্যানযোগের কথা ২) সাংখ্য (জ্ঞান)যোগের কথা ৩) কর্ম্মযোগের কথা এবং ৪) উপাসনার কথা
বলেছেন। সকল কর্ম্মই প্রকৃতি করে। জীব অকর্ত্তা। এই জ্ঞান যার মধ্যে জাগ্রত হয়েছে,
তিনিই তত্ত্বজ্ঞ, তত্ত্বদ্রষ্টা। ঈশ্বর তত্ত্বজ্ঞের মুখেই ঈশ্বরের কথা শুনতে হয়।
জগতে বহুত্ব আছে নানাত্ব আছে ইহাই বিশ্বের বৈচিত্র্য। অজ্ঞজন বহুকে বহু বলেই জানে
ও দেখে। তিনিই প্রকৃত তত্ত্ববেত্তা, যিনি এই বহুত্বের মধ্যে একত্ব দেখেন, যিনি এই
ভূতসঙ্ঘের পৃথক পৃথক ভাব সব একস্থ দেখেন, এক ঈশ্বর বস্তুতেই বিরাজিত দেখেন, তিনি
তত্ত্বজ্ঞ পুরুষ। এই পরম অনুভবের ভূমিই সর্ব্বোচ্চ ভূমি, যে ভূমিতে বহুত্বের দর্শন
হয় একত্বের বিস্তাররূপে। এই ভূমিতে সকলকেই পৌঁছাতে হবে। এটাই গীতার মূল কথা। যিনি
পৌঁছেছেন তিনি অন্যকেও পথের নির্দ্দেশ দিতে পারেন। আজকে গীতার ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগের
২৫ থেকে ৩৫ মন্ত্র উচ্চারণ করবো বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সাথে নিয়ে।]
২৫) কেহ কেহ
ধ্যানযোগে এই দেহেই আত্মাকে দর্শন করেন, কেহ বা জ্ঞানযোগের সাহায্যে এবং কেহ বা
নিষ্কাম কর্ম্মযোগের দ্বারা তাঁকে দর্শন করেন।
২৬) কারো কারো
এইরূপ জ্ঞান না থাকায় অন্যের কাছে শুনে উপাসনা করেন। শ্রদ্ধাপূর্ব্বক আত্মবিষয়ক
উপদেশ শ্রবণ করে যারা উপাসনা করেন, তাঁরাও মৃত্যুকে অতিক্রম করেন।
২৭) হে ভারতকুলশ্রেষ্ঠ, জগতে স্থাবর বা জঙ্গম যা কিছু পদার্থ জন্মে, তা
সমস্তই ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞের সংযোগের ফলে হয়ে থাকে জানবে।
২৮) যিনি বুঝেন, আত্মা সর্ব্বভূতে সমভাবে অবস্থিত এবং সমস্ত বিনষ্ট হলেও
তিনি বিনষ্ট হন না, তিনিই সেই পরম আত্মাকে দর্শন করেন। তিনিই প্রকৃত দ্রষ্টা।
২৯) যিনি সর্ব্বভূতে সমান ভাবে অবস্থিত ঈশ্বরকে সম্যক দর্শন করেন, তিনি
আত্মা দ্বারা বিনষ্ট করেন না। এই জন্য তিনি পরমা গতি লাভ করেন।
৩০) প্রকৃতিই সর্ব্বভাবে সকল কর্ম্ম করেন এবং আত্মা অকর্ত্তা, ইহা যিনি
বুঝেন, তিনি যথার্থদর্শী।
৩১) পৃথক পৃথক ভূতগণকে যিনি আত্মাতে একত্র অবস্থিত দেখেন এবং ভূতগণ যে আবার
এই আত্মা হইতেই পৃথক পৃথক ভাবে বিস্তার লাভ করে, ইহা যিনি বুঝেন তিনিই ব্রহ্ম-ভাব
লাভ করেন।
৩২) হে কৌন্তেয়, পরমাত্মা অনাদি, নির্গুণ ও অবিকারী। এই জন্য দেহে থেকেও
তিনি কিছু করেন না এবং কর্ম্মফলে লিপ্ত হন না।
৩৩) আকাশ যেমন সকল বস্তুতে ব্যাপ্ত থেকেও সুক্ষ্মতাবশতঃ কিছুতে লিপ্ত হন
না, সেইরূপ আত্মা সর্ব্বদেহে অবস্থিত থাকলেও দৈহিক দোষ-গুণে লিপ্ত হন না।
৩৪) হে ভারত, যেমন একমাত্র সূর্য্য এই সমস্ত জগৎকে প্রকাশ করে, সেইরূপ
ক্ষেত্রজ্ঞ আত্মা এক হয়েও সমস্ত দেহ- ক্ষেত্রকে প্রকাশিত করেন।
৩৫) এই ভাবে জ্ঞানচক্ষুর সাহায্যে যারা ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞের পার্থক্য
বুঝেন এবং ভূত- প্রকৃতি ও তা থেকে মোক্ষলাভের উপায় জানতে পারেন, তাঁরা পরমপদ
প্রাপ্ত হন। ইতি ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগ নাম ত্রয়োদশোহধ্যায়ঃ।
[ জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের গীতার জয়। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়।]
No comments:
Post a Comment