বেদযজ্ঞ সম্মেলনঃ—০৮/ ০৬/ ২০১৭ স্থানঃ-
পাটিয়া* ভুবনেশ্বর* উড়িষ্যা*
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করে মহাত্মা বিদুরের ন্যায় নিজের বুদ্ধিমত্তা
ও নীতিপূর্ণ কার্যের উপর স্থির থাকবে, মানব জীবনে আত্মরক্ষার জন্য সৎ বুদ্ধি ও
নীতিবলের একান্ত প্রয়োজন।]
বেদ সর্বভূতের অন্তরেই রয়েছে, যজ্ঞ বা সৎ
কর্ম, সৎ চিন্তার দ্বারা তার উদয় হয়। আর একবার বেদসূর্যের উদয় হলে তা অস্তমিত হয়
না। মহাত্মা বিদুর ছিলেন এক জ্বলন্ত বেদসূর্য। দুর্যোধন যখন পাণ্ডবদের ওপর
অত্যাচার করতে থাকেন; তখন বিদুরের সহানুভূতি স্বাভাবিকভাবে পাণ্ডবদের প্রতি পড়ে, কারণ
একে তো পাণ্ডবেরা পিতৃহীন ছিলেন, উপরন্তু তাঁরা ধর্মাত্মা। তাই তিনি প্রত্যক্ষভাবে
এবং গুপ্তভাবেও তাঁদের সাহায্য করতেন। ধর্মাত্মাদের প্রতি ধর্মের সহানুভূতি হওয়ায়
উচিত এবং বিদুর ছিলেন সাক্ষাৎ ধর্মের অবতার এবং ন্যায় বিচারক। তিনি জানতেন যে
পাণ্ডবদের ওপর যত বিপদই আসুক, শেষে তাঁদেরই বিজয় হবে—‘ যতো ধর্মস্ততো জয়ঃ’। তিনি
এও জানতেন যে পাণ্ডবেরা সকলেই দীর্ঘায়ু, তাই এঁদের কেউ মারতে পারবে না। তাই
দুর্যোধন যখন খেলার ছলে ভীমসেনকে বিষ খাইয়ে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেন এবং তিনি গৃহে না
ফেরায় মাতা কুন্তীর মনে চিন্তার সঙ্গে দুর্যোধনের দিক থেকে অনিষ্টেরও আশঙ্কা জাগে,
তখন বিদুর গিয়ে তাঁকে বোঝান যে, ‘ এখন চুপ করে থাকাই মঙ্গল, দুর্যোধনের ওপর সন্দেহ
করলে বিপদ বাড়বে, তাতে তোমার অন্য পুত্রদের বিপদ হতে পারে। ভীমসেনের মৃত্যু হবে
না, সে শীঘ্রই ফিরে আসবে’। বিদুরের এই নীতিপূর্ণ পরামর্শ কুন্তী মেনে নেন। বিদুরের
কথাই ঠিক প্রমাণিত হয়। ভীমসেন কয়েকদিন পরেই সশরীরে আরও শক্তিধর হয়ে প্রত্যাবর্তন
করেন।
লাক্ষাগৃহ থেকে অক্ষত অবস্থায় পালিয়ে যাবার যুক্তি পাণ্ডবদের বিদুরই
দিয়েছিলেন। তিনি নীতিজ্ঞ হওয়ার সঙ্গে বহু ভাষাবিদও ছিলেন। যখন পাণ্ডবগণ বারণাবতে
যাচ্ছিলেন, তখনই তিনি ম্লেচ্ছ ভাষায় যুধিষ্ঠিরকে তাঁদের আগামী বিপদের খবর
দিয়েছিলেন এবং বাঁচার উপায়ও জানিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি এক সুড়ঙ্গ খননকারীকেও
পাঠিয়েছিলেন সুড়ঙ্গ খননের জন্য যাতে সেখান দিয়ে পালানো যায়। সে গুপ্তভাবে মাটির
তলা দিয়ে জঙ্গলে যাবার রাস্তা তৈরি করেছিল। লাক্ষাগৃহে আগুন লাগিয়ে পাণ্ডবেরা মাতা
কুন্তীকে নিয়ে সেই পথেই নিরাপদে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। গঙ্গাপার হওয়ার জন্য আগে থেকেই
বিদুর মাঝিসমেত একটি নৌকা প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। তাঁরা সেই নৌকাতেই নদী পার হন।
বিদুরের এইরূপ বুদ্ধিমত্তা ও নীতিপূর্ণ কার্যের ফলে পাণ্ডবদের প্রাণ রক্ষা পায় অথচ
দুর্যোধনের কাছে তা অজ্ঞাত থাকে। দুর্যোধনেরা মনে করেছিলেন পাণ্ডবগণ মাতা কুন্তীসহ
লাক্ষাগৃহে পুড়ে মারা গেছেন। শুধু শারীরিক বল বা অস্ত্রবল সর্বত্র কাজ করে না।
আত্মরক্ষার জন্য বুদ্ধি ও নীতিবলেরও প্রয়োজন হয়। মহাত্মা বিদুর ধর্ম এবং শাস্ত্রজ্ঞানের
সঙ্গে নীতিজ্ঞানেরও ভাণ্ডার ছিলেন। তাঁর জীবনটাই ছিল বেদযযজ্ঞময়। জয় বেদযজ্ঞ ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের জয়।
No comments:
Post a Comment