বেদযজ্ঞ সম্মেলনঃ—১৩/ ০৬/ ২০১৭ স্থানঃ—পাটিয়া*
ভুবনেশ্বর* উড়িষ্যা*
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করেই মানুষকে দৈবী সম্পদ লাভ করতে হয়, এই
সম্পদ লাভ করার লক্ষ্যেই মানব সমাজের শিক্ষা- দীক্ষার ব্যবস্থা হলেই মানব- সমাজ
সুখ –শান্তিময় হতে পারে।]
দৈব ও আসুর দুই প্রকারের জীব জগতে আছে, এই
কথা আমরা গীতা ও বিষ্ণুপুরাণে পাই। এই দুই প্রকার জীব হলো প্রথমটি মহাত্মা আর
দ্বিতীয়টি মূঢ়াত্মা। যারা দৈবীপ্রকৃতিপ্রাপ্ত, সত্ত্বগুণান্বিত, তাঁরা মহাত্মা—“মহাত্মনস্তু
মাং পার্থ দৈবীং প্রকৃতিমাশ্রিতাঃ” ৯/৩/। আর যারা রাক্ষসী ও আসুরী প্রকৃতিপ্রাপ্ত,
রজস্তমোগুণান্বিত, তাঁরা মূঢ়াত্মা। স্থিতপ্রজ্ঞ, ভক্ত, জ্ঞানী, গুণাতীত ও দৈবী
সম্পদশালী—এই পাঁচ পরিচয়ে একই বিশিষ্ট প্রকার চরিত্রবান ব্যক্তিদের বলা হয়েছে দৈব
প্রকৃতির জীব। ভক্তিমান পুরুষই দৈবী সম্পদের অধিকারী। দৈবী সম্পদ আহরণ করতে পারলেই
ভক্তিধনে ধনী হওয়া যায়। যাতে মানুষ দৈবী সম্পদ লাভ করতে পারে—এই লক্ষ্যেই সমাজের
শিক্ষা- দীক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, এই ব্যবস্থা করতে পারলেই মানব সমাজ
শান্তিময় হতে পারে। প্রত্যেক পিতামাতার উচিত দৈব সম্পদ লাভের জন্য সচেষ্ট হওয়া,
যাতে তাঁদের গৃহে দৈবীগুণান্বিত সন্তান আসে। অনেকের মুখে শুনতে পাওয়া যায় আল্লা বা
ভগবান আমাদের এতগুলো ছেলে-মেয়ে দিয়েছেন। কত অজ্ঞতাময় কথা। বীজবপনের পূর্ব হতেই ক্ষেত্র তৈরী প্রয়োজন--- সেরূপ পিতামাতা হবার অনেক
পূর্ব হতেই সুসন্তান লাভের জন্য প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। এরই শাস্ত্রীয় নাম পিতৃঋণ।
যে আধ্যাত্মিক ভাবধারা, যে ঋষির ঐতিহ্য আপনারা লাভ করেছেন পিতা- পিতামহের নিকট হতে
আপনাদের সন্তানধারায় তাকে প্রবাহিত করিয়ে দেওয়া আপনাদের জীবনের এক শ্রেষ্ঠ
কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন না করলে পিতৃঋণ, ঋষিঋণ, দেবঋণ শোধ হল না। ঋণ শোধ না করার
মতো পাপ দ্বিতীয় নেই—এ একপ্রকার হীনতা চৌর্য্য। চুরি করলে যেমন শাস্তি ভোগ করতে
হয়, তেমনি দৈবীসন্তানের পিতা মাতা না হলেও শাস্তি ভোগ করতে হয়। এই সন্তানেরাই
সংসারে সমাজে দুঃখ এনে আপনাদের জীবন বেদনাময় করে তুলবে, সেই সাথে দেশকে ও সমাজকে
অগ্নিগর্ভ করে তুলবে। জয় বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment