বেদযজ্ঞ সম্মেলনঃ—২০/ ০৫/ ২০১৭
স্থানঃ-পাটিয়া* ভুবনেশ্বর* উড়িষ্যা*
আজকের আলোচ্য বিসয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করে বীরবর অর্জুনের ন্যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের
ভক্ত ও সখা হও।]
মানুষ বেদযজ্ঞ করতে করতেই নর থেকে নারায়ণ
হয়ে যান। অর্জুন ছিলেন বেদযজ্ঞের সেই বীর নর-নারায়ণ। আবার তিনিই ছিলেন সাক্ষাৎ নর-
ঋষির অবতার। তিনি ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্ত, সখা এবং প্রেমিক ও তাঁর হাতের
এক উত্তম যন্ত্রবিশেষ। তাঁকে নিমিত্ত করে ভগবান মহাভারতের যুদ্ধে বহু বড় বড়
যোদ্ধাদের সংহার করেন এবং এইভাবে তাঁর অবতারের এক প্রধান উদ্দেশ্য ভূ-ভার হরণ
সিদ্ধ করেছেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং একথা গীতায় বিশ্বরূপ দর্শন প্রসঙ্গে স্বীকার
করেছেন যে –‘ এই সব যোদ্ধারা আগেই আমার দ্বারা মৃত্যুপ্রাপ্ত হয়েছেন, হে
সব্যসাচীন; তুমি শুধু নিমিত্তমাত্র হও’। এঁর ভক্তি এবং মিত্রতার কথাও ভগবান গীতাতে
‘ ভক্তোহসি মে সখা চেতি’, “ইষ্টোহসি মে দৃঢ়মিতি” ইত্যাদি বাক্যে স্বীকার করেছেন।
ভগবান স্বয়ং যাকে নিজের ভক্ত ও প্রিয় বলে ঘোষণা করেছেন, তাঁর ভক্ত হওয়ার বিষয়ে
অন্য কোনো প্রমাণের কী প্রয়োজন? গীতার শেষে ‘ করিষ্যে বচনং তব’ বলে অর্জুন নিজে
ভগবানের হাতের যন্ত্ররূপে তাঁর আদেশ পালনের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন; মহাভারতের অনুশীলনে এই বক্তব্যের পর্যাপ্ত
প্রমাণও পাওয়া যায় যে, অর্জুন শেষপর্যন্ত
এই প্রতিজ্ঞা ভালোভাবেই পালন করেন এবং তাঁর সঙ্গে সমভাবের সম্পর্কও রাখতেন। অর্জুন
ও শ্রীকৃষ্ণ বহুবার বিভিন্ন উপলক্ষে নানা স্থানে –বহুদিন একত্রে থেকেছেন এবং সেই
পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া, কথাবার্তা, শয়ন- জাগরণ
আদি হত আর তাতে তাঁদের দুজনের মধ্যে কোনোপ্রকার সঙ্কোচ বা কুণ্ঠা ছিল না। তাঁদের
দুজনের মধ্যে অভিন্ন- হৃদয় সখ্যতা ছিল। দুজনেই দুজনের অন্তঃপুরে নিঃসঙ্কোচে আসা-
যাওয়া, খাওয়াদাওয়া করতেন। এঁদের দুজনের কীরূপ অন্তরঙ্গতা ছিল, সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রের
কাছে পাণ্ডবদের সন্দেশ –শোনাবার সময় সেকথা সবিস্তারে জানিয়েছিলেন। যুদ্ধের আগে
সঞ্জয় যখন কৌরবদের সংবাদ নিয়ে উপপ্লব্যনগরে পাণ্ডবদের কাছে গিয়েছিলেন, তখন তিনি
শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের মধ্যে যে অন্তরঙ্গ ভাব দেখেছিলেন তার বর্ণনা করে বলেন---“
মহারাজ; আপনার সংবাদ শোনাবার জন্য আমি অর্জুনের অন্তঃপুরে গিয়েছিলাম। সেইস্থানে
অভিমন্যু –বা নকুল- সহদেবেরও যাবার অনুমতি ছিল না। সেখানে গিয়ে আমি দেখলাম
শ্রীকৃষ্ণের দুটি চরণ অর্জুনের ক্রোড়ের ওপর রাখা এবং অর্জুনের পা দ্রৌপদী ও
সত্যভামার ক্রোড়ে রয়েছে”। শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের মধ্যে যেন কোনোও ভেদ নেই। ।। ১ম
পর্ব। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের জয়।।
No comments:
Post a Comment