বেদযজ্ঞ সম্মেলনঃ—১০/ ০৫/ ২০১৭ স্থানঃ—পাটিয়া*
ভুবনেশ্বর* উড়িষ্যা*
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করে পিতামহ ভীষ্মের ন্যায় শৌর্য, সহিষ্ণুতা
এবং সাহস নিয়ে জীবন পথে এগিয়ে যাবে।]
ক্ষত্রিয়ধর্ম পালন এবং বীরত্বের প্রতীপ
ছিলেন পিতামহ ভীষ্ম। যুদ্ধে মর্মাহত হয়ে ভীষ্ম যখন ধরাশায়ী হলেন, তখন তাঁর প্রতিটি
অঙ্গ বাণবিদ্ধ হয়েছিল, সেই বাণের ওপরে তিনি শায়িত ছিলেন, মাটি তাঁর দেহস্পর্শ
করেনি। সূর্য সেইসময় দক্ষিণায়নে ছিল। দেহত্যাগের জন্য দক্ষিণায়ন উপযুক্ত সময় না হওয়ায় ভীষ্ম অয়ন—পরিবর্তনের সময়
পর্যন্ত সেই শরশয্যায় শায়িত থাকলেন ; পিতার বরে তিনি ইচ্ছামৃত্যু বর লাভ করেছিলেন।
ভীষ্মের পতন হওয়াতে সেই দিনের যুদ্ধ বন্ধ হয়। কৌরব ও পাণ্ডব বীরেরা তাঁর চারপাশে
দাঁড়িয়ে যান। ভীষ্মের সমস্ত দেহ বাণে জর্জরিত ছিল, শুধু মাথাতে কোনো বাণ ছিল না,
তাই তাঁর মাথাটি ঝুলে ছিল। ভীষ্ম তাই মাথা রাখার জন্য একটু সাহায্য চাইলেন। লোকে
নানা সুন্দর বালিশ নিয়ে এলো, কিন্তু ভীষ্মের সেসব মনোমতো হল না। তিনি অর্জুনকে
বললেন—‘ পুত্র; তুমি ক্ষত্রিয় ধর্ম জান, অতএব আমার সেইমতো একটি উপাধানের ব্যবস্থা
করো’। অর্জুন সেই বীর শিরোমণির অভিপ্রায় বুঝে গেলেন। বীরের সংকেত বীরই বুঝতে
পারেন। তিনি বাণের দ্বারা ভীষ্মের মাথা উঁচু করে দিলেন। বাণগুলি এভাবে মাটিতে
প্রোথিত হয়েছিল যাতে তাদের উপরিভাগে ভীষ্মের মাথা আরামদায়কভাবে স্থিত হয়ে গেল।
দুর্যোধন বাণ বার করতে কুশল বৈদ্যকে নিয়ে এলেন ভীষ্মের চিকিৎসার জন্য, ভীষ্ম
সম্মানপূর্বক তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন। গৌরবময় বীরগতি লাভ করে তিনি চিকিৎসার সাহায্য
নেওয়াকে অসম্মানজনক বলে মনে করলেন। সকলে তাঁর অসাধারণ শৌর্য, সহিষ্ণুতা এবং সাহস
দেখে আশ্চর্যাম্বিত হলেন। সেই সময়ও তিনি যুদ্ধ যাতে বন্ধ হয় এবং উভয় পক্ষে শান্তি
স্থাপন হয়, সেইজন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি তাতে সফল হননি। দৈবের বিধান
কে আর অন্যথা করতে পারে?
বাণের অসহ্য আঘাতে
ভীষ্মের গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল, তাঁর সমস্ত দেহ জ্বালা করছিল। তিনি পান করার জন্য জল
চাইলেন। লোকে তাঁর জন্য সুন্দর জলপাত্রে শীতল, সুগন্ধ জল নিয়ে এল, ভীষ্ম তা পান না
করে ফিরিয়ে দিলেন। তিনি বললেন—‘ পূর্বের এই সব পার্থিব ভোগ আমি আর ভোগ করতে পারি
না; কারণ আমি এখন শরশয্যায় শায়িত’। তারপর তিনি অর্জুনকে ডেকে বললেন—‘পুত্র; তুমি
আমাকে বিধিসম্মতভাবে জলপান করাতে পার’। অর্জুন ‘যথা আজ্ঞা’ বলে তাঁর তুণীর থেকে
একটি বাণ বার করে সেটি পর্যন্যাস্ত্রে সংযোজন করে ভীষ্মের পার্শ্বস্থ মাটিতে আঘাত
করলেন। তখন সকলের সামনে মাটির ভেতর থেকে এক দিব্য জলধারা উত্থিত হয়ে ঠিক ভীষ্মের
মুখে গিয়ে পড়তে থাকলো। অমৃতের মতো জল পান করে ভীষ্ম তৃপ্ত হলেন এবং অর্জুনের
কর্মের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। ভীষ্ম তখন থেকেই অন্ন- জল পরিত্যাগ করলেন এবং যতদিন
জীবিত ছিলেন শরশয্যায় অসহ্য বেদনার সঙ্গে ক্ষুধার জ্বালাও সহ্য করেছিলেন। ভীষ্ম
এইভাবে তাঁর বীরত্বের সঙ্গে ধৈর্য এবং সহ্যশক্তিরও পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। চতুর্থ
পর্ব । জয় বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment