বেদযজ্ঞ সম্মেলনঃ—১৭/ ০৫/ ২০১৭ স্থানঃ-
পাটিয়া* ভুবনেশ্বর* উড়িষ্যা*
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করবে সহজ- সরল অন্তঃকরণে এবং যুধিষ্ঠিরের
ন্যায় মহান হয়ে শত্রুর প্রতিও সদায় সদ্ব্যবহার করবে।]
যুধিষ্ঠিরের জীবনটায় ছিল যজ্ঞময় এবং
অন্তঃকরণ ছিল শিশুর ন্যায় সহজ- সরল ভক্তি- বিশ্বাসে পরিপূর্ণ। শুধু তাই নয়, যুদ্ধ
শেষ হওয়ার পর যুধিষ্ঠিরের রাজ্যাভিষেকের পরে ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী যখন পাণ্ডবগণের
সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন, সেই সময় তাঁরা দুজনে এত সুখ- আরাম পান, যা তাঁরা তাঁদের
সন্তানের কাছেও পাননি। রাজ্যের সমস্ত কাজকর্ম যুধিষ্ঠির তাঁদের জিজ্ঞাসা করে করতেন। রাজকার্য
ছাড়াও তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের সেবাও করতেন। যুধিষ্ঠির, মাতা কুন্তী, রানি
দ্রৌপদীসহ পরিবারের সকলেই সর্বদা তাঁদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করতেন যাতে তাঁদের
পুত্রশোক কষ্ট না দেয়। শেষে যখন ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী বিদূরের উপদেশে বাণপ্রস্থে
যাবার সিন্ধান্ত গ্রহণ করেন, যুধিষ্ঠির অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে তাঁদের সঙ্গে যেতে
প্রস্তুত হন। ব্যাসদেব বহু কষ্টে তাঁকে বোঝান, তখন যুধিষ্ঠির তাঁদের যেতে দিতে
সম্মত হন। কুন্তীদেবী তাঁদের সঙ্গে বনগমন করেন এবং মৃত্যুপর্যন্ত তাঁদের সেবায়
ব্যাপৃত থেকে একই সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেন। বনে যাত্রার আগে ধৃতরাষ্ট্র তাঁর মৃত
পুত্রদের শেষবার শ্রাদ্ধ করতে চাইলেন এবং তাঁদের কল্যাণের জন্য ব্রাহ্মণদের দান
দিতে ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন। যুধিষ্ঠির একথা জানতে পেরে বললেন ‘ অর্জুন –সহ আমার প্রাণ
পর্যন্ত সর্বস্ব আপনাকে অর্পণ করছি’। এবং ধৃতরাষ্ট্রের ইচ্ছার অধিক তিনি ব্যয় করার ব্যবস্থা
করেছিলেন। ধৃতরাষ্ট্র তখন সমস্ত বিধি নিয়ম অনুসারে তাঁর পুত্রদের ও কুটুম্বদের
শ্রাদ্ধ করে ব্রাহ্মণদের প্রাণভরে দান করেন। মহারাজ যুধিষ্ঠির ধৃতরাষ্ট্রের
ইচ্ছানুসারে ধন ও রত্নের নদী বইয়ে দেন। ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী বনের উদ্দ্যেশ্যে
রওনা হলে যুধিষ্ঠির তাঁর পরিবারসহ বহু দূর পর্যন্ত পদব্রজে তাঁদের অনুসরণ করেন। যে
ধৃতরাষ্ট্রের জন্য পাণ্ডবদের ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, যার জন্য তাঁরা
তাঁদের পৈতৃক- অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, যার জন্য বহুবার বনবাসের কষ্ট সহ্য
করতে হয়েছিল, যার উপস্থিতিতে তাঁর পুত্ররা পূর্ণ সভায় দ্রৌপদীকে অসম্মান করেছিলেন,
যিনি তাঁদের পাঁচটি মাত্র গ্রাম না দিয়ে ভিখারী করে দিয়েছিলেন, যার জন্য এই ভীষণ
নর- সংহার হয়ে পৃথিবীর ক্ষত্রিয় বংশ ধ্বংস হয়—সেই ধৃতরাষ্ট্রের প্রতি এই অচল
শ্রদ্ধা রাখা এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে সুখে রাখার চেষ্টা করা যুধিষ্ঠিরের মতো মহান
পুরুষের পক্ষেই সম্ভব। শত্রুর প্রতি এমন সদব্যবহার জগতের ইতিহাসে খুব কমই দেখা
যায়। ।। ৬ ষ্ঠ পর্ব ।। জয় বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment