বেদযজ্ঞ সম্মেলনঃ—১৪/ ০৫/ ২০১৭ স্থানঃ—পাটিয়া*ভুবনেশ্বর*
উড়িষ্যা*
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের ন্যায় বিশাল হৃদয় নিয়ে অজাতশত্রু
হয়ে যেখানে যে অবস্থায় থাকবে সেখানে সেই অবস্থাতেই বেদযজ্ঞ করে যাবে সবার মঙ্গলের
জন্য।]
পাণ্ডবগণ দ্বিতীয়বার যখন পাশাখেলায় পরাজিত
হয়ে বনগমন করেন, হস্তিনাপুরে সমস্ত প্রজা তখন দুঃখে অভিভূত হয়। সকলেই কৌরবদের দোষ
দিতে থাকে এবং নগরবাসী প্রজাগণ গৃহ-পরিবার ত্যাগ করে তাঁদের অনুসরণ করতে থাকে।
ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির তখনও কৌরবদের বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। তিনি প্রজাদের বুঝিয়ে
তাঁদের গৃহে ফেরত পাঠান, তাসত্ত্বেও অনেক ব্রাহ্মণ জোর করে তাঁদের সঙ্গী হন।
ধর্মরাজের তখন চিন্তা হতে থাকে যে ‘এত ব্রাহ্মণের আহারের ব্যবস্থা কী করে হবে?’
তাঁর নিজের কষ্টের কথা একটুও মনে আসেনি, কিন্তু অপরের দুঃখ তিনি সহ্য করতে পারতেন
না। শেষে ভগবান সূর্যের আরাধনা করে তিনি এমন এক পাত্র লাভ করেন, যাতে রন্ধন করা
সামান্য খাদ্যও অক্ষয় হয়ে যেত। তার সাহায্যেই তাঁরা বনে বাস করেও অতিথি
ব্রাহ্মণদের আহার করিয়ে তারপর নিজেরা আহার করতেন। বনবাসের কষ্ট সহ্য করলেও তাঁরা
যথোচিতভাবে আতিথ্য ধর্ম পালন করেন। মহারাজ যুধিষ্ঠিরের এই ধর্মপ্রেমে আকর্ষিত হয়ে বহু বড় বড় মহর্ষি তাঁদের বনবাসের সময় তাঁদের কাছে
এসে থাকতেন এবং বেদযজ্ঞ সহ যাগ- যজ্ঞের নানা অনুষ্ঠান করতেন।
মহারাজ যুধিষ্ঠির অজাতশত্রু নামে প্রসিদ্ধ
ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কারো কোনোপ্রকার শত্রুতা ছিল না, তাঁর হৃদয়ে শত্রুদের জন্যও
সদ্ভাব বিরাজ করত। শত্রুরাও তাঁর দৃষ্টিতে সেবা ও সহানুভূতির পাত্র ছিলেন।
অপকারকারীর উপকার করা সাধু- সন্তদের এই হল সব থেকে বড় লক্ষণ।‘ উমা সন্ত কৈ ইহই
বড়াঈ। মন্দ করত জো করই ভলাঈ’।। গোস্বামী তুলসীদাসের এই উক্তি
মহারাজ যুধিষ্ঠিরে পূর্ণভাবে চরিতার্থ হয়েছে। কোনো এক সময়ের কথা—পাণ্ডবেরা যখন দ্বৈত বনে ছিলেন,
ঘোষযাত্রার অছিলায় রাজা দুর্যোধন তাঁর ভাই মন্ত্রী, ভাই, রাজমহলের বহু নারী এবং
যথেষ্ট সৈন্য সামন্ত নিয়ে বনবাসী পাণ্ডবদের নিজের ঐশ্বর্য দেখাবার কু- উদ্দেশ্য
নিয়ে সেখানে এলেন। তাঁরা জলক্রীড়ার উদ্দেশ্যে মহারাজ যুধিষ্ঠিরের কুটিরের পার্শ্বস্থ
সরোবরে গেলেন। গন্ধর্বগণ আগে থেকেই সরোবরটিকে ঘিরে রেখেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে
দুর্যোধনের বাকবিতণ্ডা হয় এবং দুপক্ষে ভয়ানক যুদ্ধ বেধে যায়। গন্ধর্বগণই জয়লাভ
করেন, তাঁরা রানিসহ দুর্যোধনকে বন্দী করেন। যুধিষ্ঠির এই সংবাদ শুনে ভাইদের আদেশ
দিলেন রাজা দুর্যোধনকে রানিসহ মুক্ত করে আনার। যদিও দুর্যোধন তাঁদের শত্রু, কিন্তু
এখন বিপদে পড়েছেন এবং এই মুহূর্তে পূর্বের শত্রুতা ভুলে তাঁদের বিপদমুক্ত করাই হল
ধর্ম। শত্রুতা করলেও আসলে তো তাঁরা তাঁদের ভাই হন। তাঁরা থাকতে অন্য কেউ যদি
তাঁদের ভাইদের অপদস্থ করেন, তাঁরা তা কীভাবে সহ্য করবেন; অতএব যুধিষ্ঠিরের আদেশে
তখন অর্জুন বাণবর্ষণ করে গন্ধর্বদের পরাজিত করেন এবং রানিসহ দুর্যোধন ও তাঁর
ভ্রাতাদের গন্ধর্বদের হাত থেকে মুক্ত করেন। পূর্বেই দুর্যোধনের দূরভিসন্ধি বুঝতে
পেরে দেবরাজ ইন্দ্র গন্ধর্বদের পাঠিয়েছিলেন দুর্যোধনদের বেঁধে আনতে। মহারাজ
যুধিষ্ঠিরের বিশাল হৃদয়ের পরিচয় পেয়ে সললেই আশ্চর্য হয়ে গেলেন। ধন্য এই অজাতশত্রু
। জয় বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment